মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

0

আজ ২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ৫০ বছর পূর্তি আজ। সরকার এবার দিবসটি সুবর্ণজয়ন্তী হিসেবে পালন করছে। সকল রাজনৈতিক দলও একইভাবে পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ১৯৭১ সালে বাঙালিদের নির্বাচিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালিদের শাসন প্রতিষ্ঠার তীব্র আন্দোলনে পর্যদস্ত হয়ে পাক হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বাঙালি হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। একই সময় তারা শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। এতে বাঙালি জাতি দিশাহারা হয়ে পড়ে। এ সময় তৎকালীন ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র দখল করে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং প্রথমে নিজ নামে ও পরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান জানান। এরই মধ্য দিয়ে বাঙালী সেনাবাহিনী, ইপিআর, পুলিশ, আনসার ও আন্দোলনকারী জনতা ঘোষিতভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সেই সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়েই আজ আমরা স্বাধীন দেশের গর্বিত নাগরিক। এই মহান দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর গোটা জাতি মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে জানা-অজানা শহীদ ও বিজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের সাফল্যের সেই মহিমা নিরন্তর জাতিকে জুগিয়ে যাচ্ছে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ানোর প্রেরণা। তবে, দুর্ভাগ্য এবার প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ছোবলের শিকার হয়েছে মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান। কোটি মানুষের প্রাণের প্রশ্নে সীমিত করা হয়েছে সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজন। স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারপরও মানুষ হৃদয়ে স্মরণ ও পালন করছে সবই। মুক্তিকামী মানুষ যে উদ্দেশ্য নিয়ে ৫০ বছর আগে জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতার স্বপ্ন রূপায়িত করেছিল, সেই উদ্দেশ্য আজ গৌণ মনে হচ্ছে। তবে, আমাদের প্রত্যাশা, মূল উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে আবারও সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে লিপ্ত হবে। আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি মহাসচিব পৃথক বিবৃতি দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
আমরা বিশ্বাস করি, ২৬ মার্চ আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন; এদিন অর্জিত স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার শপথ নিয়ে ফিবছর ক্রমাগত সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দিনও এটি। মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, মানবাধিকার ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে দেশ গঠন তথ্য মুক্তভাবে বাঁচার অধিকার অর্জন। কিন্তু স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব অর্জনে ৪৯ বছর পার হলেও এখনও পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কাক্সিত সাফল্য পায়নি। দারিদ্র্যবিমোচনসহ সাধারণ মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনধারা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি গত প্রায় ৫ দশকেও। স্বাধীনতার স্বাদ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার যে প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছিল একাত্তরে তা আজও রয়ে গেছে ঘোষণা। আর দাবির মাঝেই। নতুন করে গত প্রায় এক দশক মানুষ হারিয়েছে তার ‘ভোটাধিকার প্রয়োগের’ অধিকার। যা ছিল ’৭১ এ আন্দোলনের মূল কথা।
আমরা জানি, গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শর্ত বাকস্বাধীনতা, পরমত সহিষ্ণুতা মানবাধিকার ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা আজ অদৃশ্য প্রায়। স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধের মর্মবাণী স্মরণ করে এই অবস্থার অবসান এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন বিকল্প নেই। দেশ ও জাতির স্বার্থে এটা অত্যন্ত জরুরি। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান কেউই স্বাধীন দেশে এমন পরিবেশ কল্পনাও করেননি। শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধারাও ভোটাধিকার হরণ, অনৈক্য ও বাকস্বাধীনতার অভাবের কথা ভাবেননি। সে কারণে সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা চাই বঙ্গবন্ধু, ভাসানী, জিয়া ও শহীদদের স্বপ্নের দেশ হোক বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মুজিব শতবার্ষিকীতে সুবর্ণজয়ন্তীর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা সকল দল ও নেতাদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে এই অবস্থা পরিবর্তন করতে পারেন। আমরা তার সাফল্য কামনা করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। দেশ করোনামুক্ত ও স্বাধীনতা অমর হোক। সফল হোক সুবর্ণজয়ন্তীর সব আয়োজন।