পাঁচ বছর আগের অবস্থায় পুঁজিবাজার

0

দেশের পুঁজিবাজার আবারও অস্তিত্বহীনতার সংকটে পড়েছে। অথচ জাতীয় অর্থনীতির উত্থানের মধ্যে পুঁজিবাজরেরও উত্থান ঘটার কথা, অর্থাৎ সূচকে-মূলধনে ঊর্ধ্বগতি দেখা দেওয়ার কথা। বাস্তবে ঘটেছে উল্টো, সূচক প্রায় পাঁচ বছর আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। এক বছরে বাজার মূলধন কমেছে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ১৩ হাজার ২৩৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা; গত ১৪ জানুয়ারি বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে পতনের বৃত্তেই ছিল পুঁজিবাজার; তার পরও গত সোম ও মঙ্গলবার সূচক এত নেমেছে যে বিনিয়োগকারীদের মনোবল একেবারে ভেঙে গেছে। প্রায় সব বিনিয়োগকারীই তিগ্রস্ত। ুদ্র বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের কেন্দ্র মতিঝিলে বিােভ করছেন। বিশ্লেষকরা এ পতনের জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্বের ব্যর্থতা, বাজারে আস্থাহীনতা, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করে চলে যাওয়া এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও করণীয় ঠিক করতে আগামী সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি বৈঠকে বসবে বলে জানা গেছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সপ্তাহের শেষ খবরাখবরে জানা যায়, দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক গত মঙ্গলবার ৮৭ পয়েন্ট কমেছে। এর আগের দিন সূচক কমেছিল ৮৮ পয়েন্ট। অর্থাৎ দুই দিনে সূচক মোট ১৭৫ পয়েন্ট কমেছে। এ বছরের ১০ কার্যদিবসের সাত দিনই সূচকে বড় পতন ঘটেছে। এ সময় ডিএসই সূচক কমেছে মোট ৪১৪ পয়েন্ট। পুঁজিবাজার বিষয়ক তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৩৯০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। প্রধান মূল্যসূচক ছিল চার হাজার ৯৫১ পয়েন্ট। বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ৩০ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। গত ১৪ জানুয়ারি ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৬২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। মূল্যসূচক ছিল চার হাজার ৩৬ পয়েন্ট। বাজার মূলধন কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ পুঁজিবাজার পাঁচ বছর আগে ফিরে গেছে।
২০১০ সালে বড় ধসের পর বিএসইসিতে সংস্কারের পদপে নেওয়া হয়েছিল। ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা পৃথক করতে ২০১৩ সালে ডি-মিউচুয়ালাইজেশন করা হয়। নতুন বিনিয়োগকারীও বাজারে এসেছে। আইন-কানুনেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আরো কিছু ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এ সংস্কারের কিছু ফল পাওয়া গেছে। গত পাঁচ বছরে বাজারে উন্নয়ন ল করা গেছে। কিন্তু গত বছর থেকে পতনের ধারায় রয়েছে পুঁজিবাজার। এ বছরও পতন অব্যাহত রয়েছে। শেষ পর্যন্ত অস্তিত্বহীনতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পুঁজিবাজার পরিস্থিতির সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, শুধু ঢাকা নয়, সব শেয়ার বাজারেই পতন ঘটেছে এবং তা পাঁচ বছর আগের অবস্থানে নিয়ে গেছে। বারবার পুঁজিবাজারের পতন এবং মূলধন হারিয়ে ব্যবসায়ীদের নিঃস্ব হবার পরিণতি সুখকর হবে না। আমরা আশা করবো, বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটার আগেই সরকার পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বাজার চাঙ্গা করবে।