খালেদা জিয়া না বললে, বিএনপি সাজা স্থগিতের আবেদন করবে না

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের আবেদন করলে সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিএনপির নেতারা বলছেন, সরকার এর আগে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি আলোচনায় এনেছিল। কিন্তু, তিনি রাজি হননি। এখন সাজা স্থগিতের আবেদন করার বিষয়টি সম্পূর্ণ তার ওপর নির্ভর করছে। দলের পক্ষ থেকে এ নিয়ে তাকে কোনও প্রস্তাবও দেওয়া হবে না। তার পক্ষ থেকে আবেদনের জন্য বলা হলেই আইনজীবীরা উদ্যোগ নেবে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, সাজা স্থগিতের আবেদন নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির কোনও নেতা আলোচনা করবে না। কারণ, দলের কেউ আগ বাড়িয়ে আলোচনা করতে গেলেই তিনি ভাবতে পারেন যে তার যে দৃঢ়তা, আপসহীন মনোভাব তা ভেঙে দিচ্ছি। একমাত্র পরিবারের সদস্যরা এ বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। এরপর তার অনুমতি মিললেই দলের পক্ষ থেকে সরকাররের সঙ্গে আলোচনার শুরু করা যাবে। এরপর আবেদনের বিষয়টি আসবে। তবে, প্যারোলে মুক্তি বিপক্ষে খালেদা জিয়ার যে মনোবল ছিল, তাতে সাজা স্থগিতের আবেদনে তাকে রাজি করানো যাবে বলে মনে হয় না। অ্যাটর্নি জেনারেল বক্তব্যকে বিএনপি কিভাবে দেখছে এবং আবেদন করা হবে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ আমরা বিষয়টা দেখছি। এরপর আলোচনা করবো। তারপর দেখবো কী করা যায়।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার যোগ্য। সরকার চাইলে তাকে জামিন দিতে পারেন। এখন সাজা স্থগিতের আবেদনের তো ম্যাডামের বিষয়।’ খালেদা জিয়ার আইনজীবী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খোন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এখন দলের যারা নীতি নির্ধারক আছেন, তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ম্যাডাম নিজেও সিদ্ধান্ত নেবেন। আমার কথা হলো ম্যাডাম বেঁচে থাকলেই তো তার সব রাজনীতি। তিনি যতই আপোসহীন হোন না কেন, যদি ইনভ্যালিড হয়ে পড়েন তাহলে তাতে কোনও লাভ নেই। শেখ হাসিনার সঙ্গে অভিমান করে যদি তিনি মৃত্যুর মুখে চলে যান সেটা জাতির জন্য দুঃখজনক হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে রাজি করানো মুশকিল। তিনি রাজি হবেন বলে আমার মনে হয় না। ম্যাডাম অনুমতি দিলে আমরা এটা নিয়ে কথা বলবো। অন্যথায় বিষয় নিয়ে আমরাও ম্যাডামের সঙ্গে আলোচনা করবো না। আমরা আলোচনা করতে গেলেই তিনি ভাববেন তার যে দৃঢতা, তা ভেঙে দিচ্ছি। এখন একমাত্র পথ হচ্ছে পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে আলোচনা করে তাকে রাজি করানো।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির ওই সূত্র বলছেন, এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি এসেছিল। তখন দলের পক্ষ থেকে কৌশলী অবস্থান নিয়ে এ বিষয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। তিনি সরাসরি প্যারোলের বিষয়টি নিষেধ করে দিয়েছিল। এখন তার সাজা স্থগিতের আবেদন করলে সরকারের বিবেচনায় নেওয়া কথা বলছে। এই কথার অর্থ দাড়ায় আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি বা জামিনের কোনও সম্ভাবনা নেই। ফলে তাকে মুক্ত করার দুইটি পথ আছে আমাদের সামনে। প্রথমত: আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করে তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য করা। কিন্তু, গত দুই বছরে সেটা করতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে। আগামীতেও সফল হওয়ার কোনও সম্ভবনা নেই। অন্যটি হচ্ছে, সরকারের সমঝোতার মাধ্যমে তার মুক্তি নিশ্চিত করা।
খোন্দকার মাহবুব বলেন, আমরা যেটা বলার আমি বলেছি, এখন যারা নীতিনির্ধারক আছেন তাদের বিষয়। এর আগে যখন আমি প্যারোলে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বলেছি, সেটাও তার চিকিৎসার জন্য। তখনও সরকার বলেছিল, তারা প্যারোল চাইলে আমরা বিবেচনা করবো। এবারও অ্যাটর্নি জেনারেল অর্থাৎ সরকার বলে দিলো যদি আবেদন করে তারা বিবেচনায় নেবে। আমরা চাইছি তার সাজা স্থগিত করার জন্য। এতে আমাদের জামিনের আপিলও থাকবে, চিকিৎসার পরে আবার তার আপিল শুনানি হবে। এখানে তো আমার মনে হয়, রাজনৈতিকভাবে কোনও পরাজয় বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, ম্যাডামের চিকিৎসা হওয়া দরকার। পিজি হাসপাতাল (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে বলা হয়েছে তাকে আগাম চিকিৎসা দিতে। আগাম চিকিৎসার সাইড ইফেক্ট আছে। সেটা পিজি হাসপাতালে রিস্কি হবে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কথায়-কথায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও লন্ডনে যান। পিজি হাসপাতাল যদি এতই উন্নতমানের হয়, তাদের সরকারি এত পয়সা খরচ করে বিদেশে যাওয়ার কোনও কারণ থাকতে পারে না।’