মাঠে গড়ালো ভোটের লড়াই

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ প্রতীক পেয়েই প্রার্থীরা নেমে পড়েছেন মাঠে। গতকাল প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হয়। এরপরই শুরু হয় আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। ১৯ দিন প্রচার শেষে ভোট ৩০শে জানুয়ারি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন পরিচালনা শাখা-২ যুগ্ম সচিব মো.ফরহাদ আহাম্মদ খান জানান, আচরণ বিধি অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার ৩২ ঘণ্টা পূর্বে প্রচার কাজ বন্ধ করতে হবে। ভোটগ্রহণ শুরু হবে ৩০শে জানুয়ারি সকাল ৮টায়। এক্ষেত্রে প্রচার বন্ধ করতে হবে ২৮শে জানুয়ারি রাত ১২টায়। প্রার্থীরা প্রচার কাজের জন্য ১৯ দিন সময় পাবেন। এবারের নির্বাচনে দুই সিটিতে চূড়ান্তভাবে মেয়র পদে ১৩ জন ও কাউন্সিলর পদে ৭৪৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
উত্তরায় আতিকের প্রচারণা: রাজধানীর উত্তরায় ৪ নম্বর সেক্টরের ৮ নম্বর রোডের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় শেষে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম। মুসল্লিদের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করে আতিকুল ইসলাম সবার দোয়া চান। আগামী ৩০শে জানুয়ারি নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে ঢাকাবাসীর সেবা করার সুযোগ চান তিনি। ভোটারদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মানবিক ঢাকা, সচল ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। সুযোগ পেলে ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে গড়ে তুলবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। মসজিদে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে নিজের নির্বাচনী লিফলেট বিতরণ করেন নৌকা প্রতীকের এই মেয়র প্রার্থী। উত্তরা থেকে তাবিথেরও প্রচারণা শুরু: বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালও প্রচারণা শুরু করছেন। গতকাল দুপুরে উত্তরা সাত নম্বর সেক্টরের ১নম্বর রোডে অবস্থিত মসজিদে মুসল্লিদের সঙ্গে জুম্মার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন তিনি। এ সময় তাবিথ আউয়াল সবার কাছে দোয়া চান। নামাজ শেষে সাত নম্বর সেক্টরে জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট ও দোয়া চান। ভোটারদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেন। সেখানে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত হলে আউয়াল তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা আশা করছি নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। জনগণ ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। তারা যেন তাদের ভোট দিতে পারেন।’ এসময় তিনি বলেন, ভোটাররা দুর্নীতি অপশাসন ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তারা এর জবাব চায়, বিচার চায়। সেই বিচার আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করবো। ভোটাররা ভোটের মাধ্যমে এর জবাব দেবেন।
ঢাকাকে বাঁচাতে আমাদের সকল পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলতে হবে। পরে বাংলাদেশ মেডিকেল, ১০নম্বর সেক্টর, ১১ ও ১৩নং সেক্টরের চৌরাস্তা হয়ে আশপাশের এলাকায় প্রচারণা চালান। নির্বাচনী প্রচারণা থেকে নেতা কর্মীরা ্তুধানের শীষের মার্কা খালেদা জিয়ার মার্কাসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এর আগে প্রচারণায় অংশ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন,‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে আমরা গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার অংশ হিসেবে নিয়েছি। এটি আন্দোলনের নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, দেশের মানুষ গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য ও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তাবিথ আউয়ালকে ভোট দিয়ে দেশ নেত্রীকে মুক্ত করবেন। তারা দেশের গণতন্ত্রকে মুক্ত করবেন ইনশাআল্লাহ।’এসময় তাবিথের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নাগরিক ঐক্যের আহ্‌বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ভাইস চেয়ারপারসন আবদুল আউয়াল মিন্টু, মোহাম্মদ শাহজাহান, উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারক, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক জিলানী মিলটন, যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী শরীফ উদ্দীন জুয়েল, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ডেমরা থেকে তাপসের প্রচারণা : প্রতীক পেয়েই নির্বাচনী প্রচারনণায় নেমেছেন দক্ষিন সিটি করপোরেশনের আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নুর তাপস। গতকাল তিনি রাজধানীর ডেমরা এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালান। সকাল ১১টায় ডেমরায় ৭০ ও ৬৯ নম্বর ওয়ার্ড আমুলিয়া এলাকা থেকে প্রচরাণা শুরু করেন। আমুলিয়া মডেল টাউন মীরেরবাগ এলাকা থেকে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণা শুরু করেন। এরপর তিনি ডেমরারা আশে পাশের এলাকায় প্রচারণা চালান।এইএলাকাটি নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে সিটি করপোরেশনের আওতায়। এলাকাটিতে এখনও পৌঁছায়নি আধুনিক সুযোগ সুবিধা। সড়ক, পরিবহন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নিরাপত্তাসহ নানা চাওয়া ছিলো মেয়র প্রার্থী তাপসের কাছে। এলাকার বাসিন্দা ইকবালুর রহমান বলেন, আমরা ঢাকার ভিতরে হলে কী হবে।
এই অল্প দুরত্বেই আমরা যেন যোজন যোজন দুরে। ঢাকায় কোন কাজে যেতে হলে পাওয়া যায় না কোন যানবাহন। এছাড়াও অল্প বৃষ্টিতেই জমে যায় পানি। আর সন্ত্রাসের সমস্যা রয়েছে। আর একটি বড় সমস্যা ধুলা।এলাকায় নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে অনেক স্থাপনা। অপরিকল্পিতভাবে এসব কাজ হওয়ায় ধুলার বালিতে ধুয়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়। আমরা এসব সমস্যার কথা জানিয়েছি। আশা করছি নতুন নির্বাচিত মেয়র এসব বিষয় মাথায় রাখবেন। আরেক বাসিন্দা মামুনুর রহমান বলেন, এই এলাকায় প্রধান সমস্যা মাদক। আর এই মাদকের কারণে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে। ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। এলাকায় সুযোগ সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দেন আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী। ডেমরায় সংক্ষিপ্ত পথসভায় তিনি বলেন, আজ?কে নৌকা প্রতীক নি?য়ে আপনার সামনে হাজির হয়েছি। আমরা সক?লে ঐক্যবদ্ধভা?বে উন্নত ঢাকা গড়তে চাই। আপনারা আমাকে নির্বাচিত করলে প্রথম ৯০ দিনের মধ্যেই উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করবো। এসময় তিনি এই এলাকার নানা সমস্যা সমাধানের কথা বলেন। তিনি বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ ঢাকাকে উন্নত ঢাকা হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা প্রত্যয়ী। কথা দিতে পারি নির্বাচিত হলে আপনাদের সেবক হয়ে পাশে থাকবো। নগর ভবনের দরজা শুধু এমপি কমিশনার নয়, নগর ভবনের দরজা ঢাকাবাসীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
বায়তুল মোকাররম থেকে ইশরাকের প্রচারণা: প্রচার প্রচরাণা শুরু করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনিত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জুম্মার নামাজ আদায় শেষে দুপুর ২ টার দিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট থেকে প্রচারণা শুরু করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাসসহ দলের সিনিয়র নেতারা। প্রচারণা শুরুর আগে মসজিদ গেটে দাঁড়িয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ও মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। এরপর তারা লিফলেট বিতরন করতে করতে পল্টন মোড়ে ঘুরে দৈনিক বাংলার দিকে যান।এসময় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন।এর আগে ইশরাক, জুরাইন কবরস্থানে অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র, তাঁর প্রয়াত পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা’র কবর জিয়ারত করেন। বিএনপির এই প্রার্থী বলেন ,আজকের দিন আমার জন্য অবশ্যই গর্বের। আমার জীবনের স্মরণীয় দিন। আজ আমার বাবা বেঁচে থাকলে অবশ্যই আমার জন্য গর্ববোধ করতেন। ইশরাক বলেন, আমার বাবা দীর্ঘ ৩৫ বছর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতি করেছেন এবং ১৯৯১ সালে প্রথমে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। সেই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মেয়র পদের মতন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচন করার জন্য দল আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। আমি আশা করছি আমার দলের যে প্রত্যাশা, সেটা অবশ্যই পালন করবো। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, এই নির্বাচন কমিশন একটি মেরুদন্ডহীন, দন্তহীন বাঘের ভুমিকায় রয়েছে। তিনদিন আগে তাদেরকে আমি একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমার যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী তার নামে বহু রঙিন পোস্টারে ঢাকার দক্ষিণে সয়লাব হয়ে গেছে। আমরা প্রমাণসহ একটি অভিযোগ দিয়েছিলাম। তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি। আমিও তাদের ( রিটার্নিক কর্মকর্তাদের) অবস্থা বুঝি, তাদের আসলে কিছু করার নেই। তাদের সেই ক্ষমতাটাও নেই, সাহস নেই। এ নিয়ে আমরা মোটেও বিচলিত না। আমরা পরোয়া করি না, আমরা তোয়াক্কা করি না।
প্রতীক বরাদ্দ: গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট (এনআইএলজি) ভবনে উত্তর সিটির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম।এতে নৌকার প্রতীক পেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। আতিকুলের পক্ষে তৌফিক সাইদুর রহমান ও তাবিথের পক্ষে জুলহাস উদ্দিন প্রতীক গ্রহণ করেন। অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ হাতপাখা, পিডিপির শাহীন খান (বাঘ), এনপিপির মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান (আম) ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির আহম্মেদ সাজ্জাদুল হক (কাস্তে) প্রতীক পেয়েছেন। এদিকে, একই দিনে রাজধানীর গোপীবাগে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের ডিএসসিস্থির রিটার্নিং অফিসের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে প্রতীক বরাদ্দ দেন ডিএসসিস্থির রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন। আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস পেয়েছেন নৌকা প্রতীক ও ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন বিএনপির মনোনিত প্রার্থী ইশরাক হোসেন। তাপসের পক্ষে প্রতীক নেন ব্যারিস্টার আলী আসিফ খান। বাকিরা নিজেরাই তাদের প্রতীক নিয়েছেন। অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের মো. আবদুর রহমান, ডাব প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা, আম প্রতীক নিয়ে এনপিপির বাহরানে সুলতান বাহার ও গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন মাছ প্রতীক নিয়ে ।