দু’চোখ উপড়ে নেওয়া সেই শাহজালাল কারামুক্ত

0

খুলনা প্রতিনিধি॥ ছিনতাইয়ের অভিযোগে দু’চোখ উপড়ে নেওয়া খুলনার সেই শাহজালাল হাওলাদার দু’মাস তিন দিন পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন তার বাবা মো. জাকির হোসেন ও মা রেনু বেগম। খুলনা মহানগর দায়রা জজ মো. শহীদুল ইসলাম সোমবার (৬ জানুয়ারি) শাহজালালের জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতে তার জামিন শুনানি করেন মানবাধিক সংগঠক ও আইনজীবী মো. মোমিনুল ইসলাম এবং ব্লাস্টের কো-অর্ডিনেটর আইনজীবী অশোক কুমার সাহা। আগামী ২২ এপ্রিল এ মামলার আপিল শুনানির দিন ধার্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম। কারামুক্তির পর শাহজালালের বাবা জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার অন্ধ ছেলের কাছে কারাগার আর মুক্ত আকাশ সবই সমান।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই রাতে খুলনা মহানগরীর গোয়ালখালী এলাকায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনার কথা বলে পুলিশ শাহজালালকে গ্রেফতার করে। ওই রাতেই চোখ উপড়ানো অবস্থায় শাহজালালকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একইসঙ্গে রাতে সোমা আক্তার নামে এক নারী বাদী হয়ে শাহজালালসহ দুই জনের নামে ছিনতাইয়ের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। গত ৪ নভেম্বর খুলনা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আমিরুল ইসলাম এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে শাহজালালকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা; অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সে সময় শাহজালাল দাবি করেন, দেড় লাখ টাকা না পেয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে খালিশপুর থানা পুলিশ তার দু’চোখ তুলে ফেলেছে। তবে পুলিশ দাবি করে, ছিনতাইকালে জনতার পিটুনিতে চোখ হারিয়েছেন শাহজালাল।
এ ঘটনায় একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলি আদালতে শাহজালালের মা রেনু বেগম বাদী হয়ে খালিশপুর থানার তৎকালীন ওসি নাসিম খান এবং ১১ পুলিশ সদস্যসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন—এএসআই রাসেল, এসআই তাপস কুমার পাল, এসআই মো. মোরসেলিম মোল্লা, এসআই মো. মিজানুর রহমান, কনস্টেবল আল মামুন, আনসার সিপাই মো. আফসার আলী, ল্যান্স নায়েক আবুল হাসেম, আনসার নায়েক রেজাউল হক, এসআই মো. নূর ইসলাম, এসআই সৈয়দ সাহেব আলী, সহযোগী সুমা আক্তার ও মো. রাসেল।
এজাহারে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই তার ছেলে শাহজালাল মহানগরীর নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনির শ্বশুরবাড়ি থেকে রাত ৮টায় শিশুর দুধ কেনার জন্য পাশের দোকানে যান। এ সময় খালিশপুর থানার তৎকালীন ওসি নাসিম খানের নির্দেশে তাকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা থানায় গেলে ওসি তাকে ছাড়ানোর জন্য দেড় লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তারা শাহজালালকে পুলিশের গাড়িতে করে বাইরে নিয়ে যায়। পরদিন ১৯ জুলাই খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তাকে দুটি চোখ উপড়ানো অবস্থায় দেখতে পান পরিবারের সদস্যরা। এ সময় শাহজালাল জানান, পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে গাড়িতে করে গোয়ালখালী হয়ে বিশ্ব রোডের (খুলনা বাইপাস সড়ক) নির্জন স্থানে নিয়ে যান। সেখানে তার হাত-পা চেপে ধরে এবং মুখের মধ্যে গামছা ঢুকিয়ে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে দু’চোখ উপড়ে ফেলেন। মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। শাহজালাল হাওলাদার একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের মো. জাকির হোসেন হাওলাদারের ছেলে। খুলনা মহানগরীর খালিশপুরের নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনিতে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করেন তিনি।