শীর্ষে বসেও সমস্যার অন্ত নেই বার্সেলোনার

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেছে স্প্যানিশ লা লিগার চলতি মৌসুমের প্রথম পর্ব। যেখানে অংশগ্রহণকারী ২০টি দল একে অপরের বিপক্ষে খেলে ফেলেছে একটি করে মোট ১৯টি ম্যাচ। দ্বিতীয় পর্বে খেলা হবে বাকি ১৯টি ম্যাচ। প্রথম পর্ব শেষে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে রয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বার্সেলোনা। ১২ জয়, ৪ ড্র ও ৩ পরাজয়ে ৪০ পয়েন্ট কাতালুনিয়ান ক্লাবটির। সমান ম্যাচে ১১ জয়, ৭ ড্র ও ১ পরাজয়ে ৪০ পয়েন্ট রয়েছে চির প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদেরও। কিন্তু গোলগড়ে পিছিয়ে রয়েছে তারা।
গোল ব্যবধানে চির প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে এগিয়ে থাকলেও, সার্বিক দিক বিবেচনা করলে খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই বার্সেলোনা। রিয়াল যেখানে হেরেছে মাত্র ১টি ম্যাচ, সেখানে এরই মধ্যে ৩ ম্যাচে পরাজয় মিলেছে আর্নেস্ত ভালভার্দের দলের। বাকি ১৯ ম্যাচেও ৩টি হেরে গেলে হয়তো শিরোপা ধরে রাখা হবে না তাদের। ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ডের অধীনে তার তৃতীয় বছরে লিগের প্রথম পর্ব শেষে শীর্ষেই ছিলো বার্সেলোনা। কিন্তু পরে আর জিততে পারেনি শিরোপা। একই অবস্থা এখন ভালভার্দের বার্সেলোনারও। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের গত মৌসুমে অ্যানফিল্ড দুঃস্বপ্নের পর কোনোকিছুই ইতিবাচকভাবে কাজ করছে না ভালভার্দের জন্য। এমন নয় যে ভালভার্দের আগে অন্য কোচরা বাজে ফলাফলের মুখোমুখি হননি। রাইকার্ডের চতুর্থ ও পঞ্চম, লুইস এনরিকের তৃতীয় এমনকি পেপ গার্দিওলার চতুর্থ বছরটাও ছিলো হতাশাজনক। কিন্তু এখন এমন সব সমস্যার মুখোমুখি বার্সেলোনা, যার সমাধানই নেই ভালভার্দের কাছে।
বার্সেলোনার প্রধান সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করলে দেখা যায়:
ভঙ্গুর রক্ষণভাগ : বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক মার্ক টের স্টেগান থাকার পরেও রক্ষণের দুশ্চিন্তা কমছে না বার্সেলোনার। প্রতি ম্যাচেই অতিমানবীয় পারফর্ম করেন স্টেগান। কিন্তু রক্ষণভাগের ভুলে এরই মধ্যে ১৯ ম্যাচে ২৩টি গোল হজম করতে হয়েছে। যা কি না ২০০৩-০৪ এর পর বার্সেলোনার সবচেয়ে বাজে রেকর্ড। এই ১৯ ম্যাচে রিয়াল মাত্র ১২টি গোল হজম করেছে। এমনকি সেভিয়া (১৮) ও গেতাফেও (২০) বার্সেলোনার চেয়ে কম গোল হজম করেছে।
ঘরের বাইরে যত সমস্যা : চলতি মৌসুমে লা লিগায় এখনও পর্যন্ত নিজেদের ঘরের বাইরে খেলতে গিয়ে সম্ভাব্য পয়েন্টের মাত্র অর্ধেক নিতে পেরেছে বার্সেলোনা। দ্বিতীয় পর্বে তাদের খেলতে হবে রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যু, অ্যাতলেটিকোর মাঠ মেস্তালা ও রিয়াল সোসিয়েদাদের মাঠ র‍্যামন সানচেজ পিজুয়ানে। সেসব ম্যাচে পূর্ণ পয়েন্ট নিয়ে আসা বেশ কঠিনই হবে বার্সেলোনার জন্য।
ঘুরে দাঁড়িয়েও পা হড়কানো : রক্ষণের ভুলে প্রথমে গোল খাওয়া, আক্রমণভাগের নৈপুণ্যে ম্যাচে ফেরা। আবার রক্ষণের ব্যর্থতায় পিছিয়ে পড়া- চলতি মৌসুমে বার্সেলোনার এটি নিয়মিত চিত্র। এরই মধ্যে অন্তত ৩টি ম্যাচে এমন করেছে ভালভার্দের শিষ্যরা। সবশেষ এসপানিওলের বিপক্ষে ২-২ গোলের ড্র হওয়া ম্যাচটি এর উজ্জ্বল উদাহরণ।
মাঝপথে পয়েন্টের হাহাকার : মৌসুমের মাঝপথে এসে মাত্র ৪০ পয়েন্ট নিতে পেরেছে বার্সেলোনা। যা কি না ২০০৭-০৮ এর পর বার্সেলোনার সবচেয়ে বাজে সংগ্রহ। সেবার শিরোপা জিতেছিলো রিয়াল মাদ্রিদ। এমনকি টাটা মার্টিনোও আসরের মাঝপথে ৪৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন।
মিডফিল্ডে নির্ভরতার অভাব : এখনও পর্যন্ত মাঝমাঠের সঠিক ফর্মুলা বা কম্বিনেশন ঠিক করতে পারেননি ভালভার্দে। অভিজ্ঞ তারকা সার্জিও বুসকেটস নিজের সেরা ফর্মে নেই। ইভান র‍্যাকিটিচ দলে জায়গা ফিরে পেয়েছেন, আর্থুর মেলোকে খেলানো হচ্ছে না নিয়মিত। চার্লস এলেনা মৌসুমের শুরুতে ভালো করলেও তাকে লোনে পাঠানো হয়েছে রিয়াল বেটিসে। আর্তুরো ভিদাল ধারাবাহিকভাবে ভালো খেললেও বেশিরভাগ সময়ই কাটাতে হচ্ছে বেঞ্চে।
এমএসজি নির্ভরতা : বিখ্যাত মেসি, সুয়ারেজ, নেইমার- এমএসএন ত্রয়ী ভাঙার পর চলতি মৌসুমে মেসি-সুয়ারেজের সঙ্গে গ্রিজম্যানকে জুড়ে দিয়ে এমএসজি ত্রয়ী পেয়েছে বার্সেলোনা। তারা ঘরের মাঠে উজ্জ্বল থাকলেও পারফর্ম করতে পারছে না প্রতিপক্ষের মাঠে। এখনও পর্যন্ত এমএসজি গোল করেছে মোট ৩১টি (মেসি ১৩, সুয়ারেজ ১১ ও গ্রিজম্যান ৭)। কিন্তু তারা গোল না পেলেই বারবার ধুঁকছে বার্সেলোনা।