বেনাপোল বন্দরে অবৈধ পণ্য পাচারে সংগঠিত সিন্ডিকেট

0

বেনাপোল সংবাদদাতা ॥ দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল একটি সুসংগঠিত চোরাচালান চক্রের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, বন্দরে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে পণ্য পাচারে খোদ কাস্টমস, স্থলবন্দরের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের একটি অংশ সরাসরি জড়িত। তাদের এই যোগসাজশের কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

সম্প্রতি বেনাপোল স্থলবন্দরে অবৈধ পণ্য পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আনসার বাহিনীর দুইজন প্লাটুন কমান্ডারকে প্রত্যাহার ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে তদন্তে আরও ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। বন্দরের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা, যারা দীর্ঘদিন ধরে বন্দর এলাকায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।

গত ২২ সেপ্টেম্বর বেনাপোল পোর্ট থানার ভবেরবেড় বাইপাস সড়কের ট্রাক টার্মিনালের সামনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ঢাকা মেট্রো-ট ২২-৭৫৬৬ নম্বরের একটি ট্রাক আটক করে। যাতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার অবৈধ পণ্য ছিল। ঘটনার পরদিন ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আরো একটি অবৈধ চালানের ট্রাক আটক হয়। দুইদিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর গোয়ান্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে বেনাপোল কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনালে অবৈধ পণ্যসহ তিনটি ভারতীয় ট্রাক আটক করা হয়।

২২ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় পরদিন (২৩ সেপ্টেম্বর) বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে উঠে আসে, ওইদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালের বিভিন্ন গেটে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা পাচারে সরাসরি সহায়তা করেছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আনসার প্লাটুন কমান্ডার অসিত কুমার বিশ্বাস ও ইয়ামিন কবিরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাদের বায়োমেট্রিক হাজিরা স্থগিত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা আল আরাফাত সার্ভিসেস লিমিটেডের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আল আমিন সিকদারকে অনিয়মের প্রমাণ মিললে বরখাস্ত করা হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেনাপোল বন্দরের অবৈধ পণ্য পাচার সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বন্দরের ওয়ারহাউজ সুপারিনটেনডেন্ট আশিকুর রহমান রনি, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জাবেদি বিল্লাহও কাস্টমস হাউজ পিসি হেলালুজ্জামানসহ মোট ১২জন সদস্য। তাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বন্দরের একাংশে নিয়মিত অবৈধ পণ্যচালান পাচার হয়ে থাকে। সহযোগী হিসেবে আনসারের একাধিক সদস্যকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হলেন, অসিত কুমার বিশ্বাস, ইয়ামিন কবির, রাসেল শেখ, নাজমুল হক, কৃষ্ণ কুমার দাস, আনন্দ কুমার দাস, ইউনুস ও বাদশাহ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জাবেদি বিল্লাহ ও কাস্টমস হাউজ পিসি হেলালুজ্জামান বারবার অপরাধ করে প্রত্যাহার হওয়া সত্ত্বেও অদৃশ্য শক্তিবলে ফের স্বপদে ফিরে এসে অপরাধে জড়াচ্ছেন।

আমদানি- রফতানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল স্থলবন্দরের একটি চক্র মিথ্যে ঘোষণা ও নো এন্ট্রির পণ্য অভৈধভাবে আমদানি করে আসছে। আমরা চাই দ্রুত এ চক্রকে শনাক্ত করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।

বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক (উপসচিব) শামীম হোসেন রেজা বলেন, যাতে অভিযুক্ত কেউ আর বন্দরের ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কাস্টমস কমিশনার খালেদ মো. আবু হোসেনের সাথে বারংবার যোগযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।

ঘটনার পর বন্দরের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে যশোর জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম ১৬ অক্টোবর থেকে কার্যকরভাবে দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দিয়েছেন। তারা হলেন, শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)।