ইলিশ কেনাবেচা বন্ধের আগে বাজারে ক্রেতার ভিড়

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ আগামী (৩ অক্টোবর) শুক্রবার রাত ১২ টা থেকে ইলিশ মাছ কেনাবেচা বন্ধ হচ্ছে। মা ইলিশের নির্বিঘ্নে ডিম ছাড়ার জন্য সরকার আগামী ২২ দিন ইলিশ ধরা ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ করেছে। এদিকে মৌসুম শেষ হতে চললেও ইলিশের সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি।

গত দুদিনে যশোরের বড় বাজার মাছবাজারে প্রতি কেজি ইলিশে আরও অন্তত ২০০ টাকা করে দাম বেড়েছে। তবে দাম আর কমবে না জেনে রসনা তৃপ্তি মেটাতে ক্রেতারা বেশি দামেই ইলিশ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন ইলিশ কেনাবেচা বন্ধের আগে আর দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে সব সমুন্দ্র বন্দরে ৩ নং স্থানীয় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জেলেরা সাগর থেকে উপকূলে নিরাপদ স্থানে ফিরে আসছেন।

আগামী ৩ অক্টোবর শুক্রবার রাত ১২ টা পর্যন্ত ইলিশ মাছ কেনাবেচা হবে। নদীর মিঠা পানিতে ডিম ছাড়া নির্বিঘ্ন করতে সরকার এ বছর ৪ অক্টোবর থেকে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশ কেনাবেচা, পরিবহন, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপণ জারি করেছে। সেই হিসেবে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ কেনাবেচা নিষিদ্ধ থাকবে।

তাছাড়া সুস্পষ্ট লঘুচাপের কারণে আবহাওয়া অধিদফতর বুধবার দেশের সব সমুদ্র বন্দরে ৩ নং স্থানীয় সতর্কতা জারি করে এক বুলেটিন প্রকাশ করেছে। এর ফলে জেলেরা সাগর থেকে নিরাপদ স্থানে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছেন।

এদিকে বুধবার যশোর শহরের বড় বাজার মাছবাজারে খুচরা বিক্রেতা এরশাদ আলী জানান, গত দু দিনে ইলিশের কেজিতে অন্তত ২০০ টাকা করে দাম বেড়েছে। তিনি এদিন এক কেজি ৬০০ গ্রাম ওজনের নদীর মিঠা পানির ইলিশের কেজি ৩৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

তিনি আরও জানান, এক কেজি ১০০/২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ২৬০০ টাকা, ৮০০/৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ২২০০ টাকা, ৪০০/৪৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১৪০০ টাকা ও ২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া সাগরের লোনা পানির ৪০০/৪৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১০০০ টাকা ও ২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৬০০/৭০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

যশোর বড় বাজার মাছবাজারের আড়তদার পিয়ার মুহাম্মদ জানান, যশোরে মাছের সরবরাহ খুব কম। নদী ও সাগরে জেলেদের জালে তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। ইলিশের মৌসুম শেষ হতে চললো। মা ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাত ১২ টা থেকে ইলিশ কেনাবেচা বন্ধ করেছে সরকার। অথচ মৌসুমে ইলিশের সহজ প্রাপ্যতা হলো না, দাম কমলো না। বরং গত দুদিনে আরও বেড়েছে। তিনি আশঙ্কা করছেন শুক্রবার ইলিশের দাম আরও বাড়তে পারে। তবে তিনি এও জানান, এমন পরিস্থিতিতেও বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে।

বুধবার বড় বাজার মাছবাজারে ইলিশ মাছ কিনতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মনিরুল ইসলাম। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ভরা মৌসুমে তিনি দাম কমার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্ত মৌসুম শেষ হতে চললেও সে আশা পূরণ না হওয়ায় এবং আগামী ২২ দিন কেনাবেচা বন্ধ থাকবে বিধায় বেশি দাম হলেও রসনা তৃপ্তির জন্য বাধ্য হয়ে ইলিশ কিনেছেন।

বুধবার কথা হয় বরগুনা জেলার পাথরঘাটার মৎস্য আড়তদার বাবুরাম কর্মকারের সাথে। তিনি জানান, নদী এবং সাগরে কোনো জায়গায় জেলেরা কাক্সিক্ষত ইলিশ পাচ্ছেন না। পাথরঘাটার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ আসছে খুবই সামান্য, দামও অনেক বেশি।

বরগুনা জেলা মৎস্য অফিসার মো. মহসিন বুধবার লোকসমাজকে জানান, নদীতে পলি পড়ে ইলিশের স্বাভাবিক চলাচলে ভাটা পড়েছে। এ কারণে জেলেরা কাঙ্খিত মাছ পাচ্ছেন না। তাছাড়া বৈরী আবহাওয়া ও লঘুচাপের কারণে আবহাওয়া অধিদফতর দেশের সব সমুদ্র বন্দরে ৩ নং স্থানীয় সতর্কবার্তা জারি করেছে। ফলে সাগর থেকে জেলেরা নিরাপদ স্থানে উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে। ফলে ইলিশের সংকট থেকে যাচ্ছে।