চৌগাছার ভাস্কর বিশ্বজিৎ ৩৬ বছর ধরে তৈরি করছেন প্রতিমা

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ আর মাত্র ৯ দিন বাকি রয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার। আগমী ২৮ সেপ্টেম্বর দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী পালনের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসব। ইতোমধ্যে চৌগাছার ভাস্কর বিশ্বজিৎ কুমার বিশ্বাস নিখুঁতভাবে কাদামাটি দিয়ে তৈরি করে  চলেছেন নানা ধরনের প্রতিমা।

চৌগাছা পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের হালদাপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কুমার বিশ্বাস। বছরের বার মাসই কোনো না কোনো প্রতিমা তৈরি করেন বিশ্বজিৎ। এরপর রোদে শুকিয়ে রংতুলির আঁচড়ে সেটি ফুটিয়ে তোলেন। পরে বিক্রি করে যা  রোজগার হয় তাতেই চলে তার সংসার। তবে শারদীয় উৎসব এলে কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় ভাস্কর বিশ্বজিতের।

মাগুরার শালিখা উপজেলা থেকে প্রায় ৩৬ বছর আগে সপরিবারে চৌগাছায় চলে আসেন বিশ্বজিৎ। কপোতাক্ষ নদের পাড়ে হালদারপাড়ায় জমি কিনে বসত-বাড়ি তৈরি করে সেখানেই বসবাস শুরু করেন। বাড়ির সামনের অংশে একটুকরো খালি জায়গা বছরে ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে সেখানেই তৈরি করেছেন প্রতিমা গড়ার কারখানা। এই কারখানায় কোনো যন্ত্রপাতি বা আধুনিক কিছুই ব্যবহৃত হয় না।

বিশ্বজিত নিজের হাতে নিখুুঁত ভাবে কাঁদা মাটি দিয়ে বানিয়ে চলেছেন নানা ধরনের প্রতিমা। তার কর্মযজ্ঞ এতই নিখুঁত যে চৌগাছার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার হিন্দু ধর্মের মানুষ তার কাছে আসেন প্রতিমা কিনতে।

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, তার কারখানায় সারি সারি সাজানো আছে অসংখ্য প্রতিমা। শারদীয় উৎসবে এই সব প্রতিমা চৌগাছা ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলাতে চলে যাবে। বেশ আগে ভাগেই তিনি এই কর্মযজ্ঞ শুরু করেন ।এখন শেষ সময় তাই কিছুটা বেড়েছে ব্যস্ততা। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিমা চলে গেছে স্বস্ব মণ্ডপে। সব ঠিক থাকলে আগামী ২৮ তারিখ হতে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে শারদীয় দুর্গা পূজা।

কথা হয় ভাস্কর বিশ্বজিতের সাথে। তিনি বলেন, খুব ছোট বেলা থেকে তিনি বাবার সাথে নিজ এলাকার বিভিন্ন গ্রামে যেতেন প্রতিমা তৈরি করতে। বাবা তৈরি করতেন প্রতিমা আর তিনি তাকে সহযোগিতা করতেন। মূলত সেই থেকেই তার কাদামাটির সাথে চলা। এরপর চলে আসেন চৌগাছায়। এখানে আসার পর প্রতিমা তৈরির পেশাকে মূল পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

এবছর তিনি ১০টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। দুর্গা প্রতিমার পাশাপাশি তৈরি করেছেন লক্ষ্মী, স্বরসতী, কার্ত্তিক, গণেশ, সিংহ, ময়ুর হাঁস, পেঁচা, ইঁদুর, সাপসহ অনেক কিছুই। এখন আর সময় নেই বললেই চলে তাই কিছুটা ব্যস্ততা বেড়েছে। ইতোমধ্যে দুটি প্রতিমা নিয়ে গেছেন যারা অর্ডার করেছিলেন। বাকি আটটি প্রতিমা আজকালের মধ্যেই স্ব-স্ব মণ্ডপে চলে যাবে।

তিনি আরও বলেন,সব কিছুরই দাম বেড়েছে কিন্তু বাড়েনি প্রতিমার দাম। গত বছরে প্রতিমা যে দামে বিক্রি হয়েছে এ বছরও সেই একই (১৬/১৭ হাজার টাকা) দামে বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।