কাজী ইনাম আহমেদকে যশোরের ক্রীড়াঙ্গনে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ভোট ডাকাতির সংসদ সদস্য(পলাতক) কাজী নাবিল আহমেদের ছোট ভাই এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক পরিচালক কাজী ইনাম আহমেদকে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য করায় নিন্দার ঝড় উঠেছে যশোরে।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার বর্তমান নির্বাহী কমিটি থেকে শুরু করে খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন। যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন। কেউ বিস্ফোরক মন্তব্যের পাশাপাশি কাজী ইনাম আহমেদকে অপসারণ না করা হলে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

এদিকে গতকাল সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী কমিটির জরুরি সভা থেকে কাজী ইনাম আহমেদকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুজন সরকার সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভা থেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এমন সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী হিসেবে উলে¬খ করা হয়।

বক্তারা বলেন, একজন ফ্যাসিস্টের ভাই যিনি নিজেও তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হিসেবে চিহ্নিত। তাকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মতো এক সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করা মানে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করার শামিল।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে। সভায় উপস্থিত জেলা ক্রীড়া সংস্থার সকল সদস্যরা কাজী ইনাম আহমেদকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া না হলে, তারা পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন।

এদিকে কাজী ইনাম আহমেদকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার সংবাদ প্রচারের পর সংগঠনের পূর্ব নির্ধারিত সভায় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য সচিব খালিদ জাহাঙ্গীর, সদস্য এ জেড এম সালেক, মাসুদ রানা বাবু, সামিউল আলম শিমুল, এস এম আব্দুল¬াহ আল মামুন, বুরহান উদ্দিন প্রমুখ।

এদিকে কাজী ইনাম আহমেদকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন, জেলা ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাহতাব নাসির পলাশ। তিনি বলেন, কাজী ইনাম ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলে যশোরের ক্রীড়াঙ্গনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। বিগত দিনের মতো আবার সেই অসৎ উদ্দেশ্য সফলের লক্ষ্যে তিনি একটি মহলকে জোগাড় করে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য হয়েছেন।

বিগত দিনে যখনই বিসিবির কাউন্সিলর নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে তখনই তাকে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। কার্যত তিনি যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রেখেছেন সেটি কারও চোখে পড়েনি।

সর্বক্ষেত্রে তার বড় ভাই বিনা ভোটের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন মানুষকে নাস্তানাবুদ করেছেন। খেলার মাঠ থেকে ক্রীড়া সংগঠকদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। যার ফলে বিভিন্ন খেলোয়াড় এবং সংগঠকরা মাঠ বিমুখ হয়ে পড়েছেন। যশোরের ক্রীড়াঙ্গনে তার পদচারণ কারও চোখে পড়েনি। তার অনুসারী দুর্নীতিবাজ ক্রীড়া সংগঠকদের ডাকে সাড়া দিয়ে যশোরে এসেছেন। তার একটি কাজই ছিল নিজ দল আওয়ামী লীগ বাদে অন্য রাজনৈতিক দলকে নিয়ে অশ¬ীল মন্তব্য এবং ক্রীড়া সংগঠকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা। একজন সাবেক ক্রিকেটার হিসেবে তার এমন কর্মকাণ্ড কখনোই মেনে নিতে পারিনি।

তিনি ক্রীড়াঙ্গনের স্থাপনা ভেঙে দিয়েছেন। তিনি ভাঙতে পারেন, গড়তে পারেন না। পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার জনসভাকে কেন্দ্র করে যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামের গ্যালারি ভেঙে দিয়েছেন। তাকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য করায় যশোর খেলোয়াড় এবং ক্রীড়া সংগঠকরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে তার অপসারণ দাবি করছি। অন্যথায় তীব্র আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে অপসারণ করতে বাধ্য হবো।

যশোর সোনালী অতীত ক্লাবের সভাপতি এ বি এম আখতারুজ্জামান কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি ফ্যাসিস্ট কাজী ইনাম আহমেদকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি থেকে বাদ দেওয়া না হয়, তাহলে আমরা ক্রীড়া সংগঠকরা সমগ্র যশোরবাসীকে নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেব। তারা দুই ভাই দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে ধ্বংস করেছে। তার ভাই ভোট ডাকাতির এম পি কাজী নাবিল আহমেদ ফুটবল এবং কাজী ইনাম আহমেদ ক্রিকেট ধ্বংস করেছে। এই ধ্বংসকারী আবারও ক্রীড়াঙ্গনে ফিরে আসুক একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শফিক উজ জামান বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যে অপরাজনীতির চর্চা ছিল, সেটি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সুপরিকল্পিতভাবে একটি মহলকে খুশি করতে অত্যন্ত একজন ফ্যাসিস্টকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একজনকে বাদ দিয়ে তার মতো ফ্যাসিস্টকে কমিটিতে এনে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ খুব অন্যায় করেছে।

একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে নয় যশোরবাসী হিসেবে আমি এমন সিদ্ধান্তকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। অবিলম্বে তাকে কমিটি থেকে বাদ দিয়ে প্রকৃত ক্রীড়া সংগঠককে ওই পদের অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।