অনুমোদনের অপেক্ষায় থমকে আছে মহাসড়ক উন্নয়ন,বাড়ছে জনদুর্ভোগ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর বেহাল দশা বর্তমানে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ ডেকে এনেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন এই সড়কগুলোর ওপর সাম্প্রতিক বর্ষণের ধাক্কা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলেও, মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন না আসায় কাজ শুরু করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট দফতর। ফলে থমকে আছে বহু প্রতীক্ষিত সংস্কার কার্যক্রম।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান অর্থনৈতিক পথ যশোর-খুলনা মহাসড়কটি বর্তমানে সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। গত ছয় বছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে যশোর শহরের চাঁচড়া থেকে অভয়নগরের রাজঘাট পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার অংশে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হলেও রাস্তার বর্তমান চিত্র একেবারেই ভিন্ন। রাস্তার বেহাল দশার কারণে এখন যাত্রীবাহী বাস চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বসুন্দিয়া থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কের অসংখ্য গর্ত ও কর্দমাক্ত পরিস্থিতি এই অংশটিকে যেন এক ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত করেছে। এতে শুধু যাত্রীরাই নয়, বিপর্যয়ে পড়েছে নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চলকেন্দ্রিক পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য। যানজটে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে পণ্যবাহী ট্রাক ও লরি।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, যশোর-খুলনা মহাসড়কের ২০ কিলোমিটার আরসিসি ঢালাইয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৫ কিমি কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং ২.৩ কিমি’তে কাজ চলছে। বাকি ৮ কিলোমিটার অংশের দরপত্র সম্পন্ন হলেও তা এখনও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

একইভাবে, যশোর শহরের পালবাড়ি থেকে মনিহার মোড় পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার সড়কের অবস্থাও বেশ নাজুক। টানা বৃষ্টিতে রাস্তার ভেতরে ও পাশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে যান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। এই সড়ক উন্নয়নের জন্য ২৫ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখনো কোনো অগ্রগতি নেই।

এছাড়া, যশোর-মাগুরা এবং যশোর-নড়াইল মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশেও দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাচ্ছেন এলাকাবাসী ও পরিবহন সংশিষ্টরা। এই সড়কগুলো দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে, যাদের অনেকের গন্তব্য দেশের বিভিন্ন বন্দর বা বাণিজ্যিক কেন্দ্র।

বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোর্তুজা হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সওজ বারবার কাজ করলেও রাস্তার টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে না। এখন অবস্থা এমন যে, যশোর-খুলনা মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল প্রায় বন্ধ। যাত্রীরা বাধ্য হয়ে বিকল্প হিসেবে চুকনগর আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করছে।’

সংগঠনের সভাপতি মামুনুর রশিদ বাচ্চু বলেন, ‘বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নওয়াপাড়ার পণ্য পরিবহনে কোনো বিকল্প পথ নেই। মহাসড়কের এমন করুণ দশায় যাত্রী ও চালক দু’পক্ষই বিপাকে পড়েছেন। ঘুরে যেতে হচ্ছে বিকল্প পথে, এতে সময় ও খরচ দুটোই বাড়ছে।’

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের যশোর জেলা সভাপতি মো. শাহাজালাল জানান, নওয়াপাড়া নৌবন্দর দিয়ে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ আমদানিকৃত সার খালাস হয়। অথচ মহাসড়কের এমন অবস্থার কারণে ভরা মৌসুমে সারের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

এ বিষয়ে সওজ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘যশোর-খুলনা মহাসড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পথের উন্নয়নে আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। কিছু প্রকল্পের মূল্যায়ন শেষে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে।’ তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যেই নাভারণ-সাতক্ষীরা সড়কের ১৬ কিলোমিটারের উন্নয়নকাজ চলছে।

সংশিষ্টরা মনে করছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত অনুমোদনের জট না খুলবে, ততক্ষণ এই অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম হুমকির মুখেই থাকবে।