৩ টাকা হাতে নেওয়া ভাড়ায় হাতবদল করে লাখ লাখ টাকায় পজিশন হস্তান্তর

ঝিকরগাছায় বিদ্যালয়ের কোটি টাকার জমি মার্কেট বেদখল

0

তরিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর)। ঝিকরগাছার শতাব্দীকালের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ গঙ্গানন্দপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাড়ে ৬ একর ১৯শতক জমির মধ্যে প্রায় ৪একর বেদখল রয়েছে। কোনো কতৃত্ব নেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এসব সম্পত্তির আনুমানিক বাজার মূল্য এক থেকে দেড় শ কোটি টাকা বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

মালিকানা হাতছাড়া হওয়ার মতো এমন ঘটনাটি চরম উদ্বেগের হলেও এ যেন দেখার যেন কেউ নেই। বিষয়টি যশোর জেলা প্রশাসকসহ শিক্ষা অধিদপ্তরের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় সচেচন এলাকাবাসী।

গত বৃহস্পতিবার দিনভর উপজেলার গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়নের ছুটিপুর বাজারে সরেজমিন জানা গেছে, গঙ্গানন্দপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব ৬ একর ১৯শতক জমির মধ্যে প্রায় ৪একর জমির ওপর ২১৪টি পাকা স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যেমে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মার্কেট, দোকান গড়ে তোলা হয়েছে। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিগত সরকারের আমলে জোরপূর্বক স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্থাপনার বেশিরভাগ কংক্রিটের গ্রেড বিম ব্যবহার ও দীর্ঘস্থায়ী টেকসই ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের নিজস্বস ম্পত্তিতে গার্মেন্ট, ফার্মেসি, বস্ত্রবিতান, হার্ডওয়ার, মুদি দোকান, হোটেল রেস্তোরা, রড সিমেন্ট প্রভৃতি দোকানপাট গড়ে উঠেছে। এমনকি স্কুল গেইটের সাথেই বিশালআকৃতির গোডাউনে চলছে ব্যবসা।

জানা গেছে, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে খালি জায়গা নাম সর্বস্বমূল্যে ঘরের লম্বা যতবেশিই হোক না কেন ৩টাকা হাত মেইন পজিশন হিসেবে ভাড়া নেওয়া হয়।

এরপর গড়ে তোলা হয় বাণিজ্যিক পাকা ভবন। মাত্র ৩টাকা একহাত মূল্যের ভাড়ার টাকাও অনাদায় খাকে বছরের পর বছর। বাজারমূল্যের তুলনায় কখনো ভাড়ার টাকা বাড়েনি একটি টাকাও। বলার সাহস নেই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের।

অভিযোগ রয়েছে, পানির দামে ভাড়া নেওয়া একসময়ের খালি জায়গা পাকা দোকানপাট গড়ে তুলে হাত বদলের মাধ্যমে ৩ লাখ, ৫লাখ থেকে ২০লাখ টাকা পর্যন্ত চড়াদামে বিক্রি, হস্তান্তর করা হয়েছে। জোটবদ্ধ এসব রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থাকা ব্যবসায়ী সুবিধাবাদীদের কাছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক প্রকার অসহায়-জিম্মি হয়ে রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে থাকা একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের অনেকেই নাকি সুবিধাভোগ করেছেন। জানতে চাওয়া হলেও চাপে পড়ার ভয়ে এসব দোকানি-ব্যবসায়ী সাংবাদিকদের কাছে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেউ কেউ জানিয়েছেন, অনেক আগে থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিটি দোকানের লম্বা যতই হোক না কেনো সামনের মুখ প্রতি হাত জায়গার মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় মাত্র ৩টাকা।

ধরা যাক, দৈর্ঘ্য ১০হাত, প্রস্থ ১০হাত। সেই দোকানি মাসে ভাড়ে দিচ্ছেন মাত্র ৩০টাকা। ক্ষেত্রফল ১শ হাত। মোট ২২৫ বর্গফুট। সেই হিসাবে প্রতিটি দোকানের মাসিক গড়ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়াই ৩শ থেকে ৪শ টাকা মাত্র।

সেই হিসাবে ২১৪টি ছোট বড় দোকান মিলিয়ে ঘর ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রতিমাসে ৭-৮ হাজার টাকা মাত্র। বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে তা কল্পনা করা যায় না।

প্রশ্ন স্থানীয় সচেতন মহলের। ঘর ভাড়ার টাকা আদায়ে ভাড়াটিয়ার প্রাপ্তি স্বীকারপত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সিল-স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নিজ নামীয় প্যাডসহ সিল-স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয় না এমন স্বীকারোক্তি দিয়ে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করেন, ঘরভাড়া আদায়ে প্রতিষ্ঠানের নামীয় প্যাড ছাপাতে দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, তিনি অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দোকান মালিকদের সাথে বসে ঘরভাড়া বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন। কিন্তু দোকান মালিকরা তার কথায় কর্ণপাত করেননি।

গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাজিদ বক্স বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থেকে এসব করেছে।

বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাজারদর অনুযায়ী একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।