আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত ৮০০, আহত অন্তত ২৮০০

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্পে প্রায় ৮০০ জন নিহত ও ২৮০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জীবিতদের খোঁজে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তল্লাশি চালানো হচ্ছে আর আহতদের হেলিকপ্টারে করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

রোববার মধ্যরাতে এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নানগারহার প্রদেশের রাজধানী ও আফগানিস্তানের পঞ্চম বৃহত্তম শহর জালালাবাদ থেকে ২৭ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে। এলাকাটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশের সীমান্ত সংলগ্ন।

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৬২২ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ১৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

রাজধানী কাবুলে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধারকারীরা নানগারহার ও প্রতিবেশী কুনারের প্রত্যন্ত ছোট ছোট গ্রামগুলোতে পৌঁছানোর জন্য সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন। ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হওয়া এ ভূমিকম্পে ওই অঞ্চলের মাটি ও পাথর দিয়ে তৈরি ঘরগুলো ধসে পড়েছে। এই অঞ্চলের এলাকাগুলোর বহু ভূমিকম্প ও বন্যার ইতিহাস আছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শারাফত জামান এক বিবৃতিতে আরও বেশি হতাহত হতে পারেন বলে সতর্ক করে বলেছেন, “মাত্র কয়েকটি ক্লিনিক থেকে পাওয়া তথ্যে ৪০০ জনেরও বেশি আহত ও বহু নিহতের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে।”

রয়টার্স টেলিভিশনের ছবিতে দেখা গেছে, হেলিকপ্টারে করে ক্ষতিগ্রস্তদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে আর স্থানীয় বাসিন্দারা আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিতে সেনা ও চিকিৎসা কর্মীদের সহায়তা করছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কুনার প্রদেশে তিনটি গ্রাম প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে আরও বহু গ্রামের উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কুনারের প্রাদেশিক তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রধান নাজিবুল্লাহ হানিফ জানিয়েছেন, প্রদেশটিতে অন্তত ২৫০ জনের মৃত্যু ও ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।

প্রাথমিক প্রতিবেদনগুলোর বরাতে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কুনারের এক গ্রামেই অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এই গ্রামের কয়েকশ আহতকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আহতদের নানগারহার ও কুনার প্রদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, “এ পর্যন্ত কোনো বিদেশি সরকার উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে সহযোগিতা দিতে যোগাযোগ করেনি।”

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, রোববার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে এ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮ কিলোমিটার গভীরে। ভূমিকম্পের পর অন্তত তিনটি আফটারশক অনুভূত হয়েছে, যার মাত্রা ছিল ৪.৫ থেকে ৫.২ এর মধ্যে।

ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে রাজধানী কাবুল এবং ৪০০ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদেও কয়েক সেকেন্ড ধরে কম্পন অনুভূত হয়।

বিবিসি লিখেছে, ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশগুলো দুর্গম ও পার্বত্য অঞ্চল হওয়ায় সেখানে যাতায়াত কঠিন। বেশিরভাগ ঘরবাড়ি ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নয়। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

পাকিস্তান সীমান্তবর্তী কুনার প্রদেশের নোরগাল জেলার মাজার উপত্যকার বেশিরভাগ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উপত্যকাটি পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত, সেখানে উদ্ধারকাজ চালানোও অনেক কঠিন।

ইউএসজিএস বলছে, এ ভূমিকম্পে শত শত মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মডেল অনুযায়ী, গুরুতর হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে এবং এ দুর্যোগের ব্যাপকতা অনেক বেশি হতে পারে।

বিবিসি লিখেছে, নানগারহার প্রদেশ ভয়াবহ বন্যার ধকল সামলে ওঠার আগেই এ ভূমিকম্পের কবলে পড়ল। গত শুক্র ও শনিবারের ওই বন্যায় বহু সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে অন্তত পাঁচজনের।

আফগানিস্তানের অবস্থান ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে। ভূগাঠনিক চ্যুতির কারণে সেখানে প্রায়ই ভূমিকম্প হয়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ হেরাতে ভূমিকম্পে অন্তত ২ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছিলেন।