শৈলকুপায় গড়াই নদীর ভাঙনে গৃহহারা মানুষ

0

আসিফ কাজল, শৈলকুপা (ঝিনাইদহ)॥ নদী ভাঙনে শৈলকুপা উপজেলার কয়েকটি গ্রাম বিলীন হতে চলেছে। গ্রামের পর গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে পড়ছে। কখন কার বাড়িঘর বিলীন হয়ে যায় নদীগর্ভে তা নিয়ে চিন্তিত নদী পাড়ের মানুষ। ইতোমধ্যে অনেক গ্রামের মানুষ তাদের মাঠের ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।

বড়ুরিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর মন্ডল জানান, তার ১০ বিঘা ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙন যেভাবে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে তাতে ভিটেবাড়িও ঠেকাতে পারবেন না তারা।

নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, গ্রামের প্রতিটি মানুষ আতংকে বসবাস করছেন। গত জুন মাসের শুরুর দিকে নদী ভাঙন শুরু হয়। এখন পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পাট, কলাক্ষেত ও হলুদের জমিসহ ভাঙতে শুরু করেছে ফসলী জমি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা জিও ব্যাগও স্রোতের তীব্রতায় ভেসে যাচ্ছে। অনেকে ঘরবাড়িও হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গ্রাম ছেড়েছেন। গড়াই নদীর ভাঙনে ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে গোটা গ্রামের মানচিত্র।

শৈলকুপা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, শৈলকুপায় গড়াই নদীর বহমান অংশ কুড়ি কিলোমিটার। যার মধ্যে বড়ুরিয়া গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহমান দেড় কিলোমিটার, কৃষ্ণনগরে এক কিলোমিটার, গোসাইডাঙ্গায় পাঁচশ মিটার, মাদলা এলাকায় দেড় কিলোমিটার, মাঝদিয়া গ্রামে এক কিলোমিটার ও লাঙ্গলবাঁধ এলাকায় পাঁচশ মিটার ভাঙনপ্রবন। তবে বেশি ভাঙন প্রবন এলাকা বড়ুরিয়া গ্রামের দেড় কিলোমিটার।

বড়ুয়া গ্রামের বাবুল মোল্লা জানান, ১৯৬২ সালের পর থেকে নদী ভাঙন শুরু হলেও গেল ২০ বছরে তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুণ। সিএস রেকর্ড অনুযায়ী বড়ুয়া মৌজায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পরিমাণ ১৪ শ ৫৭ বিঘা। আর খাস জমি আছে ১৪৩ বিঘা। নদী ভাঙনের ফলে এখন জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ শ ৫০ বিঘায়। গ্রামটিতে বসবাস করতেন ৭শ পরিবার। কিন্তু এখন বসবাস করেন ২শ পরিবার। বাকি পাঁচশ পরিবার অন্যত্র চলে গেছেন বলে গ্রামবাসীর দাবি।

এদিকে গড়াই নদীর ওপারে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার গনেশপুর আদর্শ গ্রাম। এপারের জমি ভেঙে ওপাশে জেগে ওঠা চরের জমিতে কুষ্টিয়ার মানুষ শৈলকুপার কোন মানুষকে যেতে দেয় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আবার চর উদ্ধারেও কেউ ব্যবস্থা নেয় না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ২০১৯ ও ২০২১ সালে ডিপিপি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করা হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। চলতি বছরে গড়াইয়ের ভাঙন রোধে অস্থায়ী ভিত্তিতে সমীক্ষা কাজের আওতায় ১৭৫ কেজি ওজনের বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পহেলা জুন থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৬ সালের জুন মাসে। ১৩ কোটি টাকার এই প্রকল্পিটি বাস্তবায়িত হবে চার ধাপে।

বড়ুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা সুন্দরী খাতুন বলেন, আমাদের প্রায় ৩০ বিঘা জমি ছিল। এখন তা ১০ বিঘায় দাঁড়িয়েছে।
একই গ্রামের বাসিন্দা মনি মোল্লা বলেন, বড়ুয়া গ্রামের প্রায় ১৪ শ বিঘা জমি চলে গেছে কুষ্টিয়ার অংশে।
তিনি আরো জানান, এপাশ থেকে ভেঙে নদীর ওপারে চর জেগে উঠেছে। সেখানে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার মানুষ জবরদখল করে খাচ্ছে। প্রশাসনের কেউ উদ্যোগ নেয়না এই জমি উদ্ধারে। ফলে ক্রমেই গ্রামের মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, বর্তমানে বর্ষার শুরুতে ভাঙন রোধে অস্থায়ী সমীক্ষা কাজ চলমান। আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত কয়েকটি ধাপে কাজটি চলবে। এরপর স্থায়ী কাজ করা হবে বরাদ্দের ভিত্তিতে। নদীর এই অংশটুকু অবতল হওয়াতে পানির চাপ বৃদ্ধিতে পলি সরে ভাঙন দেখা দেয়। তবে জমি উদ্ধারের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের কাজ বলে তিনি জানান।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল বলেন, শৈলকুপা অংশ ভেঙে নদীর ওপারে কুষ্টিয়া অংশে জেগে ওঠা চরের জমি উদ্ধার ও সেখানে যেন শৈলকুপার মানুষ চাষাবাদ করতে পাওে সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য দপ্তরের সম্মিলিত বৈঠকের পর জরিপ করে সীমানা নির্ধারনের জন্যে সরকারের জরিপ অধিদপ্তরে পত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায় সরকার দ্রুতই বিধিসম্মতভাবে নদী পাড়ের সমস্যার সমাধান করতে পারবে।