যশোর শহরে যেখানে মন চায়, সেখানেই পার্কিং

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোর শহরের প্রবশেদ্বার চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড়ে সড়কের উপর দুটি লাইনে সারিবদ্ধ ইজিবাইক। দেখে সহজে মনে হয় এটি ইজিবাইক থামার জায়গা। বাস্তবে দাঁড়িয়ে থাকা এ ইজিবাইকগুলো সড়ক দখল করে যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু চাঁচড়া নয় শহরের সবকটি প্রবেশমুখে এ অবস্থা বিরাজ করছে। একই অবস্থা সবচেয়ে ব্যস্ততম দড়াটনায়। অপরিকল্পিত ও যথেচ্ছা সড়ক ব্যবহারে যশোর যানজটের শহরে রূপনিয়েছে। যানজট এখন নিত্যদিনের এক অসহনীয় বাস্তবতা।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি অত্যন্ত ব্যস্ততম জেলা হলো যশোর। জেলা শহরের চারপাশ দিয়ে চারটি মহাসড়ক বয়ে গেছে। পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের তথ্য মতে, প্রতিদিন ১৮টি রুটের কয়েক হাজার যাত্রীবাহী বাস জেলার সড়ক-মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে। সেই সাথে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর, খুলনা শিল্পাঞ্চল, নওয়াপাড়া নদী বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পণ্যবাহী যানবাহনও এই সড়ক-মহাসড়কগুলো ব্যবহার করে। এছাড়াও ভারতগামী যাত্রীবাহী বাসও চলাচল করে। যে কারণে জেলা সদরের বাইরের মহাসড়কগুলোতে দিনের শুরু থেকে রাত পর্যন্ত যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহনের ব্যাপক চাপ থাকে।এর উপর ছোট ও মাঝারি যানবাহনের অপরিকল্পিত চলাচল ও পার্কিং যানজটকে একটি চরম আকার দিচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর শহরের অন্যতম প্রবেশদ্বার চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড়ে ব্যস্ত মহাসড়কের উপরেই পাকিং করে আছে ইজিবাইক, রিকসা, ভ্যান। এই অঘোষিত স্ট্যান্ডের পাশেই যশোর-সাতক্ষীরা-বেনাপোল-রাজগঞ্জ রুটের যাত্রীবাহী বাসগুলো যাত্রী নামানোর জন্য থামছে। বাস থামার সাথে সাথেই ইজিবাইক চালকরা যাত্রী তোলার জন্য রীতিমতো পাল্লা দিতে শুরু করে, যার ফলে সড়কের অনেকটা অংশ মুহূর্তেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সড়কের অপর প্রান্তেও যশোর-সাতক্ষীরা-বেনাপোল এবং সামান্য দূরে রাজগঞ্জগামী যাত্রীবাহী বাসগুলো এসে দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রী ওঠানামা করছে। ফলস্বরূপ, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথটি দিনের শুরু থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস এবং ইজিবাইকের দখলে থাকে, যা কেবল সড়কের শৃঙ্খলা নষ্ট করছে না, তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী যানজটও তৈরি করছে।

চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড়ের মতো একই যানজটের চিত্র দেখা যায় যশোর শহরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ পথ ও মোড়গুলোতেও। চাঁচড়া বাজার মোড়, পালবাড়ি মোড়, খাজুরা বাসস্ট্যান্ড, মনিহার মোড় এবং মুড়লী মোড়ে ইজিবাইক, যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরণের মাঝারি যানবাহন নির্বিঘ্নে সড়ক দখল করে রাখে।

এই স্থানগুলো থেকেই মূলত শহরের অভ্যন্তরে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। পালবাড়ী মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, শহরের তিনটি প্রবেশ পথেই সড়কের দুই ধারে ইজিবাইক ও মাহিন্দ্রা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সড়কের একপাশে দূর পাল্লার বিভিন্ন রুটের কয়েকটি বাসও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে, যা সড়কের একটি দীর্ঘ অংশ জুড়ে জটলা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ইকরামুল কবির ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সড়কের ওপর পার্কিং করে যানবাহন রাখার এই চিত্র নতুন কিছু নয়। মাঝে মধ্যে এই স্থানের কারণে গোটা এলাকা জুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়, যা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।’

উপশহর খাজুরা বাস স্ট্যান্ড এলাকায় গিয়েও একই দৃশ্য চোখে পড়ে। যশোর-মাগুরা মহাসড়কের শুরুর এই স্থানটি একদিকে ইজিবাইক এবং অন্যদিকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস দ্বারা প্রায়শই অবরুদ্ধ থাকে। এছাড়াও কিছু পণ্যবাহী ট্রাক সড়কের একটি বড় অংশ দখল করে রাখতে দেখা যায়। শিক্ষাবোর্ড অফিসের সামনেও সারিবদ্ধভাবে যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, যা যানজটকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা মনিহারের চিত্র আরও ভয়াবহ। মনিহার সিনেমা হলের সামনে সড়কের একটি বড় অংশ সারাক্ষণ ইজিবাইকের দখলে থাকে। এর পেছনে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহনের বাসগুলোও দাঁড়িয়ে থাকে। সামনে সিটি কলেজ গেট এলাকায়ও ঢাকাগামী পরিবহনের পাশাপাশি বাঘারপাড়া ও নড়াইল রুটের বাসগুলো সড়কের জায়গা দখল করে আছে। মনিহার সিনেমা হল থেকে সিটি কলেজ গেট পর্যন্ত সড়কের দুই ধারের ইজিবাইক ও মাহিন্দ্রা নামের যানবাহনও সড়কের একটি বড় অংশ দখল করে রাখে। স্থানীয় ব্যবসায়ী বশির উদ্দিন হতাশ কণ্ঠে বলেন, ‘এখানে দিনের শুরু থেকে রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। মাঝে মাঝে সড়কে তিল ধারণের ঠাঁই পর্যন্ত থাকে না, যা ব্যবসা-বাণিজ্যেও প্রভাব ফেলে।’

মনিহার থেকে মুড়লী অভিমুখে যাওয়ার পথে বিজয় স্মৃতিস্তম্ভের পেছনে যশোর-নড়াইল রুটের যাত্রীবাহী বাসগুলো সড়ক দখল করে আছে। সেই সাথে মনিরামপুরগামী যাত্রীবাহী মাহিন্দ্রা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে। তার সামনে ঈগল নামের একটি পরিবহন কোম্পানির বাস এবং এম.কে কার্গো সার্ভিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাভার্ড ভ্যানও সড়কের বড় একটি অংশ দখল করে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, রীতিমতো সড়কের বড় একটি অংশ দখল করে এই দুটি প্রতিষ্ঠানের যানবাহন মেরামতও করা হয়, যা যানজটের অন্যতম কারণ।

শহরের অভ্যন্তরে সিভিল কোর্ট মোড়ে দিনের শুরু থেকে রাত পর্যন্ত ইজিবাইকের দখলে থাকে। যে কারণে সার্কিট হাউজের সামনে থেকে শুরু করে সিভিল কোর্ট মোড়ের বাম পাশে জর্জ কোর্ট মসজিদ গেট এবং সিভিল কোর্ট মোড়ের ডান পাশ থেকে শুরু হয়ে মাইকপট্টি পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। দড়াটানা মোড়, চিত্রা মোড় এবং কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের সড়কেও ইজিবাইকসহ অন্যান্য ছোট যানগুলো সড়কের বড় একটি অংশ দখল করে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করছে।

এই ভয়াবহ যানজটের চিত্র দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকলেও কার্যত যশোর ট্রাফিক পুলিশকে এক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব স্থানে ট্রাফিক পুলিশকে দীর্ঘ যানজট দেখেও সেটি নিরসনে উদ্যোগী না হয়ে বরং মোটরসাইকেলের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের নামে মামলা দিয়ে অর্থ আদায় করতে দেখা যায়। তাদের এই নিষ্ক্রিয়তা যানজট সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এ বিষয়ে যশোর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ সব সময় যানজট নিরসনে কাজ করছে। তারপরও শহরের প্রবেশদ্বার এবং শহরের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে যানবাহন রেখে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।’