ঝিনাইদহ জেলায় ভালো ফলন পেয়ে বিদেশি ফল চাষে ঝুঁকছে চাষিরা

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহ জেলায় দিন দিন কৃষকদের মাঝে বিদেশি ফল চাষের আগ্রহ বাড়ছে। জেলা সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর,মহেশপুর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার অন্তত এক হাজার হেক্টর জমিতে ড্রাগন,আঙুর,অ্যাভোকাডো ও রাম্বুটান চাষে ভালো ফলন পাচ্ছেন চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুরে ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় দুই হেক্টর জমিতে অ্যাভোকাডো চাষ হয়েছে। অন্যদিকে কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় সোয়া দুই হেক্টর জমিতে আঙুর এবং কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় রাম্বুটান চাষ হয়েছে এক হেক্টর জমিতে। এছাড়া জেলাব্যাপী এক হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁচড়া গ্রামের চাষি শাহিনুর রহমান জানান, তিনি ২০১৯ সালে থাইল্যান্ড থেকে অ্যাভোকাডো গাছের চারা এনে রোপণ করেন। আজ তার তিন বিঘা জমিতে ঝুলছে অ্যাভোকাডো ফল। তিনি বলেন, প্রথম বছর ফলন খুব কম থাকলেও এ বছর দারুণ ফলন পেয়েছি।

তিরি আরও জানান, অ্যাভোকাডো বা রাম্বুটানের মতো ফলের মানসম্মত চারা সহজলভ্য নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষকদের নিজের উদ্যোগে বিদেশি উৎস বা সংযোগ ব্যবহার করে চারা সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এতে খরচও বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে ভেজাল চারার ঝুঁকি।

মহেশপুরের চাষি আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, তিনি ১২ জাতের আঙুরের চারা বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে বড় একটি বাগান করেছেন। তার বাগানে মিষ্টি আঙুর ধরেছে।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের ড্রাগন চাষি বিপ্লব হোসেন বলেন, ড্রাগন চাষে প্রথম দুই বছর খুব ভালো লাভ হলেও এখন এই চাষ লোকসানের মুখে। জেলায় ব্যাপক হারে ড্রাগন চাষ করার ফলে দাম কমে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ধানি জমির পাশাপাশি পতিত জমিতে বিঘার পর বিঘা ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। অতিরিক্ত উৎপাদনের কারণে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি ও বাজার পরিকল্পনা ছিল না বলে চাষিরা জানান।

বিদেশি ফল চাষ করেন এমন চাষিরা জানান, অভিজ্ঞতা না থাকায় কীটনাশক ব্যবস্থাপনা ও গাছের রোগ শনাক্তকরণ দুই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এসব গাছ স্থানীয় জলবায়ুতে নতুন, ফলে প্রচলিত কৃষি জ্ঞান যথেষ্ঠ নয়। সঠিক জাত ও রোগ নির্ণয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ জরুরি।

কালিগঞ্জ উপজেলার লংগান চাষি হাফিজুর রহমান বলেন, লংগানে যদিও বেশি রাসায়নিক লাগে না, তবু মাঝে মাঝে পাতা শুকিয়ে যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ষষ্ঠী চন্দ্র রায় বলেন, এই অঞ্চলের মাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। জেলার মাটিতে ফল ও ফসল উভয় খুবই ভালো হয়। কৃষি বিভাগ চাষিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ও বিদেশি চাষ নিবীড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তবে কোনো সংকট অনুভব করলে কৃষক আমাদের কাছ থেকে সব ধরনের পরামর্শ পাবেন।

তিনি আরও বলেন, এই চাষে লাভ যেমন আছে, তেমনি দেশের জন্যও মুনাফা কারণ এতে আমদানি নির্ভরতা কমবে। কৃষি মন্ত্রণালয় আরও সহায়তা দিলে এই ক্ষেত্রটি বড় পরিসরে প্রসারিত হবে।