যশোরে ফেসবুকে চলছে আওয়ামী প্রচারণা

নিষিদ্ধ হলেও থেমে নেই তৎপরতা

0

তহীদ মনি॥ বাংলাদেশ সরকার আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু যশোরের চিত্র ভিন্ন: দলটির ফেসবুক কার্যক্রম এখনো পুরোদমে চলছে, ছড়ানো হচ্ছে গুজব ও উস্কানিমূলক পোস্ট। এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে হত্যাসহ বহু মামলার আসামি বিতর্কিত আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বিপুল ও বহিস্কৃত ইউপি চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম। তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন অনুব্রত সাহা মিথুন, লুৎফুল কবীর বিজু, জুয়েল আহমেদ ঝিনুক, রওশন ইকবাল শাহীসহ আরো অনেকে। এসব উষ্কানিদাতাদের বেশিরভাগ যশোরের বাইরে অবস্থান করে অনলাইন প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ যশোরেই অবস্থান করছেন বলেও বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন প্রয়োগ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। গত ৯ মে এই ঘোষণা দেওয়া হয় এবং ১২মে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এই আইনের ফলে আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম, প্রচার ও প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সরকারি এই নিষেধাজ্ঞা যশোরে পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এখনো অনেকে আওয়ামী লীগের পক্ষে পোস্ট দিচ্ছেন।

এইসব পোস্টে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হচ্ছে এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচার চালানো হচ্ছে। এসব পোস্টের কমেন্ট বক্সে তাদের সমর্থকরা সরকারবিরোধী নানা মন্তব্য করছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচারে ব্যস্ত থাকছেন।

নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুলের অ্যাকাউন্টে গতকাল মঙ্গলবার ৪টি পোস্ট ছিল। সেখানে সেনাবাহিনী নিয়েও বিভ্রান্তিকর ভাষা ছিল। তাছাড়্া রোববারে তার দুটি পোস্টর একটিতে ছিল‘ হঠাও ইউনূস বাঁচাও দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ জাতীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য। আরেক নেতা রওশন ইকবাল শাহী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনসহ দলের বিভিন্নজনের গুণগান প্রচার করছেন।

অনুব্রত সাহা মিথুন নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় প্রতি ঘণ্টায় আওয়ামী লীগের পক্ষে ও সহিংসতা ছড়ানোর উস্কানিমূলক পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। একই ধরনের পোস্ট দেখা যাচ্ছে খুরশিদ এ বাবলু, প্রদীপ কুমার নাথ বাবলু, প্রীতম দেবনাথ ডাবলু, রাজিব আহমেদ, রুহি সাহাদের পোস্টে। নিষিদ্ধ দলটির জেলা উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক লুৎফুল কবীর বিজুও দিনে ২-৩টি পোস্ট দিয়ে সরকারের সমালোচনা করছেন, গুজব ছড়াচ্ছেন এবং নিষিদ্ধ দলের পক্ষে সাফাই গাইছেন।

গত সোমবার তারিকুল ইসলাম নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ‘দাবায়া রাখতে পারবা না’ লিখলে তার পোস্টে ২২ জন কমেন্ট করেন এবং ২৩৪টি লাইক পড়ে। বেশিরভাগ কমেন্টেই দলীয় ¯ে¬াগান দেখা যায়। জুয়েল আহমেদ ঝিনুক, ডা. নবনীতা রায়, ইমন দত্ত, শান্তা রাউত, আলী হোসেন, মাযহারুল ইসলাম, কাজল হাসান, মুহম্মদ মিরাজ হুসাইন, শুভাশীষ চক্রবর্তী, অমিত বিশ্বাস, প্রণব বোস এবং মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ অসংখ্য ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রতিনিয়ত গুজব ও অপপ্রচার চলছে।

গত ১২ মে প্রকাশিত সরকারি প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গণহত্যায় অভিযুক্ত দলটির নেতাকর্মীদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেকোনো ধরনের “প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো”।

আইনজীবীদের মতে, সংবাদ বা মতামত প্রকাশে কোনো বাধা না থাকলেও নিষিদ্ধ সত্তা অর্থাৎ আওয়ামী লীগের পক্ষে বা সমর্থনে কিছু প্রকাশ করা যাবে না। সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা-১৮(১) অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

২০০৯ সালে করা সন্ত্রাস বিরোধী আইনে বর্তমানে ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ব্যক্তি বা সত্তার যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার’ বিধান যুক্ত করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়েছে। এই অধ্যাদেশের ‘ঙ’ উপধারায় বলা হয়েছে, “নিষিদ্ধ সত্তা কর্তৃক বা উহার পক্ষে বা সমর্থনে যেকোনো প্রেস বিবৃতির প্রকাশনা, মুদ্রণ বা প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলন বা জনসম্মুখে বক্তৃতা প্রদান নিষিদ্ধ করিবে।”

সাধারণ মানুষ মনে করছেন, আইন ভঙ্গ করা অপরাধের শাস্তি হওয়া উচিত। অথচ যশোরের শত শত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচার চালানো হচ্ছে। এসব অ্যাকাউন্টের মালিকদের অনেকেই সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের উস্কানিমূলক পোস্ট দেখে অনেকে বিরক্ত। ব্যবহারকারীরাও বিব্রত বোধ করছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাধারণ মানুষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর আস্থা হারাচ্ছে।

এ বিষয়ে যশোর ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়া জানিয়েছেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও সাইবার ক্রাইম টিম ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। বেশ কয়েকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করা হয়েছে এবং আরও তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে সেগুলো বন্ধ করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে তিনি এখনো পর্যন্ত কতগুলো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে বা কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি।