ফুটপাত দখলে, ভোগান্তি পথচারীর

0

আকরামুজ্জামান ॥ প্রশাসনের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও যশোর শহরের দড়াটানা, বড়বাজারসহ অন্যান্য সড়কের ফুটপাত থেকে অবৈধ দখলদারদের হটানো যাচ্ছে না। ঈদকে সামনে রেখে দখলদাররা নানা অজুহাতে ফুটপাত দখল করতে করতে রাস্তার ওপর চলে আসছে। এইচএমএম রোডের অধিকাংশ দোকানি তার দোকানের সামনের রাস্তার অংশ ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এতে পথচারীদের চলাচলে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি যানজট সৃষ্টি হয়ে বাড়ছে জনদুর্ভোগ।

তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে রমজানে শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে ফুটপাতের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ চলমান রয়েছে। যা আরও জোরদার করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, গত কয়েক মাস ধরে যশোর শহরের তীব্র যানজটের বিষয়টি নিয়ে সব মহলের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা হয়। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় রমজান মাসে সাধারণ মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য শহরের ফুটপাতের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ মার্চ যশোর শহরের দড়াটানা মোড়, মুজিব সড়ক এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং যানজট নিরসনে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এ সময় ওই এলাকার ফুটপাতে থাকা সব দোকান তুলে দেয় পুলিশ। কিন্তু দুদিন যেতে না যেতেই সে সব স্থানে ছোট ছোট দোকান বসিয়ে আবারও দখলের চেষ্টা করছে অবৈধ দখলদাররা।

সোমবার শহরের মুজিব সড়ক এলাকার জেলা পরিষদ মিলনায়তনের গেটের সামনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ফুটপাতে তৈরি পোশাক, ছিট কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান খুলে বসে আছেন হকাররা। এসব ব্যবসায়ীদের দাবি রমজান মাসে তারা অস্থায়ীভাবে এখানে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। অথচ প্রশাসন তাদের জোর করে উচ্ছেদ করছে।

শিহাব উদ্দিন নামে একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা সারাজীবন ফুটপাতে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। রোজার মাসের জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি। তাই ব্যবসা না করলে আমরা টিকে থাকতে পারবোনা। কিন্তু এবছর প্রশাসন বাধা দিচ্ছে। এ অবস্থায় প্রশাসনকে একটু মানবিক হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
রবিউল ইসলাম নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আগে আমরা এখানে বসে ব্যবসা করতে পারিনি। আওয়ামী লীগের গুন্ডাপান্ডারা এখানে তাদের লোক বসিয়ে ব্যবসা করেছে। এখন আমরা নিজেদের জীবিকার তাগিদে এখানে বসেছি। এখান থেকে তাড়িয়ে দিলে আমাদের আর কোথাও জায়গা হবে না।

শুধু মুজিব সড়ক নয়, শহরের অধিকাংশ বাজার সংলগ্ন রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। শহরের এইচএমএম রোডস্থ বাজারের দড়াটানা মোড় হতে কাপুড়িয়া পট্টি এলাকা হয়ে চৌরাস্তা (কোতয়ালী থানা মোড়) পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বিভিন্ন দোকান খোলা হয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে মানুষের পথচলা দায় হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার প্রতিষ্ঠিত দোকানদারদের দাবি এসব অস্থায়ী দোকানের কারণে তাদের দোকানে ক্রেতা আসতে অসুবিধা হচ্ছে।

একই অবস্থা শহরের দড়াটানা ব্রিজের দক্ষিণ ও উত্তর পাশ এলাকায়। ব্রিজের দুই পাশেই বিভিন্ন ফলের দোকান বসিয়ে দখল করা হয়েছে ফুটপাত। উত্তর পাশে ভৈরব হোটেলের দখল করা এলাকা পুলিশ উচ্ছেদ করে দিলেও সেখানে ফের দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অথচ দুদিন আগে জেলা পুলিশের উদ্যোগে সেখানে অভিযান পরিচালনা হয়।

এ বিষয়ে যশোরের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, তিনি নিজে উপস্থিত থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরিচালনা করেছেন। এর পরও ব্যবসায়ীরা আবার সেখানে দখল করে ব্যবসা করছেন এটি দুঃখজনক।

তিনি বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের কিছু নিয়ম আছে। এক্ষেত্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমরা সেই সাপোর্ট পায় না। যে কারণে পুলিশ ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করা ছাড়া জোর করতে পারে না।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, আমরা যশোর শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। যার সুফলও পাচ্ছে মানুষ। রমজানে যশোর শহরের বড় বাজার এলাকায় রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন এতে তাদের ব্যবসার ক্ষতি হবে। এটি করতে পারলে শহরের চৌরাস্তা ও দড়াটানা মোড়ে যানজট কমতো বলে তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার প্রশাসক মো. রফিকুল হাসান বলেন, পৌরসভার উদ্যোগেও দীর্ঘদিন ধরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু কাজের কাজ তেমন একটা হয়না। ব্যবসায়ীরা সকালে উঠে যায় আবার বিকেলে ফের সেখানে বসে।

এজন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা যায় কীনা সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চাওয়ার চিন্তা করছি।