যাদের নেতৃত্বে হামলা খুন গুম হয়েছে তাদের প্রতি কোন অনুকম্পা নয় : অ্যাটর্নি জেনারেল

যশোরে বিচারিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কর্মশালা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেছেন, দেশের মানুষ আর কোন ফ্যাসিস্টের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা দেখতে চায় না। আজ যারাই ফ্যাসিস্টদের পক্ষ অবলম্বন করবে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে। যাদের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে, খুন হয়েছে, গুম হয়েছে তাদের প্রতি কোন অনুকম্পা দেখানো চলবে না। নতুন বাংলাদেশে কোন ফ্যাসিবাদের স্থান হবে না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে যাদের ভূমিকা ছিলো তারা সবাই ফ্যাসিস্ট। তাদেরকে বিচারের মুখামুখি করা হবেই। যারা এই জুলাই বিপ¬বকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে তারাই জাতির শত্রু।

তিনি বলেন, বিচারকরা জামিনের জন্য সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী নন। তাদেরকে মামলার নথির ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে সেই নথির কথায় শেষ নয়। এই ক্ষেত্রে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে হবে। নতুন করে জুরিস ফুটেজ তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে কোন ক্রমেই যেন জুলাই বিপ¬বের বিরোধীতাকারী কোন আসামি আইনের ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে। বার ও বেঞ্চ এক হয়ে ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মানে এক হয়ে কাজ করতে হবে। বিগত সরকার দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিলো সেই জায়গা থেকে জাতিকে বের করে আনতে হবে। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মান করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল স্পিরিটকে ধারন করতে হবে। বাংলার মাটিতে যেন ভবিষ্যতে আর কোন ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে প্রত্যেককে তার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

শনিবার সকালে যশোর পিটিআই অডিটোরিয়ামে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার ও পরিবেশের ওপর গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ বিষয়ক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গণি। বিশেষ অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের চিফ প্রসিকিউটর (অ্যাটর্নি জেনারেল, আইসিটি) তাজুল ইসলাম ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) সাংবাদিক মনির হায়দার। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব, অতিরিক্ত আইজিপি(সিআইডি)সহ খুলান ও বরিশার রেঞ্জ ডিআইজি, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনারবৃন্দ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৬ জেলার পুলিশ সুপারবৃন্দ, জেলা প্রশাসকবৃন্দ, জেলা ও দায়রা জজবৃন্দ, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটবৃন্দ, সকল জেলার পাবলিক প্রসিকিউটরবৃন্দসহ প্রশাসন ও বিচার বিভাগের উর্ধ্বতন ৩ শতাধিক কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।

প্রধান অতিথি তার বক্তৃতায় বলেন, গত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার দেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। এই দেশের বিচার ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল। বিচারের নামে প্রহসন সৃষ্টি করা হয়েছিল। দেশে আয়না ঘর তৈরি করে চরমভাবে মানবাধিকার লংঘন করা হয়েছিল। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অন্য একটি দেশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। দেশের প্রশাসন যন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছিল। পুলিশকে দলীয় লাঠিয়াল বাহিনীর মতো ব্যবহার করা হয়েছিল। বাংলাদেশের নিরাপত্তার মধ্যে অন্য একটি রাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ঢুকে পড়েছিলো। কিভাবে তারা এই দেশকে শাসন আর শোষণ করেছে তা গোটা জাতি দেখেছে। জাতি এই অবস্থা আর দেখতে চাই না।

বিচারকদের উদ্দেশ্য করে প্রধান অতিথি বলেন, মাননীয় বিচারকগণ, আপনাদের প্রো অ্যাকটিভ হয়ে বিচারকার্য চালাতে হবে। নতুন করে জুরিস ফুটেজ তৈরি করে বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে বিচার কাজ চালাতে হবে।

মনে রাখতে হবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে যে নতুন দেশ আমরা পেয়েছি সে অর্জন যেন কোন ভাবেই বৃথা না যায়।