শীত মৌসুমে সাগরে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পেয়ে হতাশ জেলেরা

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট) ॥ শীত মৌসুমে সুন্দরবন উপকূলে কাক্সিক্ষত মাছ না পেয়ে হতাশ হয়েছেন জেলেরা। এ অবস্থায় জেলে, মৎস্যজীবী ও মহাজনরা পুঁজি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে।
সুন্দরবনের দুবলার চরের বিভিন্ন জেলে, মৎস্যজীবী ও বন বিভাগ সূত্র জানায়, প্রতি বছরের মত এবারও বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলের দুবলার চর এলাকায় নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে ৫ মাসব্যাপী সাগরে শীতকালীন মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ মৌসুম। এ সময় জেলে ও মৎস্যজীবীরা নৌকা ও ট্রলারে করে সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ ও পরে তা সুন্দরবনের চরে শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ করে থাকেন। এ সময় সাগর থেকে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি তৈরিকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের পুরো এলাকায় জেলে ও মৎস্যজীবীরা বিভিন্ন কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত থাকেন।
সুন্দরবন উপকূলের হাজারো জেলে ও মৎস্যজীবীরা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে এখানে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরিতে জড়ো হন। কিন্তু এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। জেলে ও মৎস্যজীবীদের মনে শান্তি নেই। বিরাজ করছে দারুণ হতাশা আর উৎকন্ঠা। সাগরে মাছ সংকটে বিপাকে পড়েছেন জেলেরা। গত তিন ‘গোণ’ (অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময়কাল) ধরে সাগরে জাল ফেলে তেমন কোনো মাছ পাচ্ছেন না তারা। মাছ না পেয়ে জেলে মহাজনরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
দুবলার চরের আলোরকোলের রামপাল জেলে সমিতির সভাপতি মোতাসিম ফরাজী বলেন, গত দেড় মাসে ৩ গোণ যাবৎ সাগরে জাল ফেলে কোনো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। ২/৩ ঘন্টা ট্রলার চালিয়ে সাগরের গভীরে গিয়েও জাল ফেলে মাছ পাওয়া যায় না । ট্রলারের তেল খরচের টাকাও উঠছে না। গত ২৫/৩০ বছরের মধ্যে দুবলার শুঁটকি জেলেরা এমন মাছ সংকটে পড়েনি বলে তিনি জানান।
আলোর কোলের মৎস্য ব্যবসায়ী শুধাংশু বিশ্বাস ও শেলার চরের মৎস্য ব্যবসায়ী সেকেন্দার আলী বলেন, দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছর ধরে সাগরের এ মাছের ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন তারা, কিন্তু এ বছরের মতো এতো মাছ সংকট আর কখনও তিনি দেখেননি। তারা আরও জানান, ‘এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের পুঁজি ঊঠবে না।’ অনেকেই ধার দেনা করে মাছ আহরণে এসেছেন। এবার সাগরে পর্যাপ্ত মাছ না পেলে তারা সেই ধার দেনা কিভাবে শোধ করবেন তা নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত তিন গোণে দুবলার শুঁটকি জেলেরা সাগরে তেমন পর্যাপ্ত মাছ পায়নি। ফলে জেলে ও মহাজনরা বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বর্তমানে মাছ না থাকায় চরে মাছ শুঁকানোর খোলা ও মাঁচা মাছের অভাবে খাঁ খাঁ করছে।
পূর্ব সুন্দরবনের ডিএফও (বিভাগীয় কর্মকর্তা) কাজী নূরুল করিম জানান, সাগরে জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বিষয়। এখানে বন বিভাগের কিছুই করার নেই। তবে এ মৌসুমে জেলেরা পর্যাপ্ত মাছ পাচ্ছেন না এমন খবর তিনিও জেনেছেন বলে জানান।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল জানান, সাম্প্রতিককালে সাগরে আবহাওয়ার যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়তে পারে। তবে আগামীতে এ সংকট কেটে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যেতে পারে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া এ বিষয়ে সরেজমিনে খোঁজ খবর নিতে তারা শিগগির সমুদ্র এলাকা পরিদর্শন করবেন।