শ্যামনগরে কাঁকড়ার খোলসে তৈরি ম্যাজিকম্পোস্টের চাহিদা বাড়ছে

0

শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা।। কাঁকড়ার খোলস দিয়ে ম্যাজিকম্পোস্ট নামে পটাসিয়ামসমৃদ্ধ জৈব সার তৈরি করছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের নওয়াবেঁকী এলাকার বাসিন্দা মো. আসলাম হোসেন। মাঠে ফসল উৎপাদন, ছাদবাগান ও চিংড়ির খামারে ব্যবহৃত হয় এ সার। ম্যাজিকম্পোস্ট বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করেন আসলাম হোসেন।

লবণাক্ততাপ্রবণ উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় গত কয়েক বছরে কাঁকড়া চাষ বেড়েছে। অনেকে চিংড়ি চাষ ছেড়ে কাঁকড়া চাষে ঝুঁকেছেন। জলবায়ু সহনশীলতা, রোগের প্রতি কম সংবেদনশীলতা, সহজ চাষ পদ্ধতি ও ভালো বাণিজ্যিক মূল্যের কারণে সাতক্ষীরায় কাঁকড়া চাষ ক্রমেই বাড়ছে। দেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩০০ খামারে এ ধরনের কাঁকড়া উৎপাদন হচ্ছে। এসব খামারেই মূলত কাঁকড়ার শক্ত খোলস পাওয়া যায়।

দেশের অভ্যন্তরে কাঁকড়ার খোলসের বাণিজ্যিক ব্যবহার কম। কিছু পরিমাণ খোলস গুঁড়া করে চীনে রপ্তানি হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে অধিকাংশ খোলসই বর্জ্য আকারে ভাগাড় বা নদীসহ আশপাশে ফেলা দেওয়া হতো, যা দুর্গন্ধ ও দূষণ ছড়িয়ে পরিবেশের ক্ষতি করে। কিন্তু কাঁকড়ার খোলসের টেকসই ব্যবসায়িক সমাধানের মাধ্যমে পরিবেশগত এ চ্যালেঞ্জকে সুযোগে পরিণত করেছেন আসলাম।

আসলাম হোসেন জানান, কাঁকড়ার খোলসের গুঁড়ার সঙ্গে নির্দিষ্ট অনুপাতে পচানো সবজি মিশিয়ে এ সার তৈরি করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে এর সঙ্গে গোবর, কেঁচো সার, ছাই, নিমপাতা প্রভৃতি যোগ করা হয়। এ সার তৈরির জন্য স্থানীয় বিভিন্ন খামার থেকে কাঁকড়ার শুকনা খোলস সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর এসব খোলস যন্ত্রের সাহায্যে গুঁড়া করা হয়। সাধারণত ২৫০ কেজি খোলস থেকে ২০০ কেজি গুঁড়া পাওয়া যায়।
আসলাম হোসেন আরো জানান, তিনি নিজস্ব ব্র্যান্ড নামে বাণিজ্যিকভাবে সারা দেশে এ সার বিক্রি করতে চান। এ জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ম্যাজিকম্পোস্ট ব্যবহারের চাহিদা বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে চিংড়ির ঘেড়ে ব্যবহারের জন্য স্থানীয় ৩০টি খামারের মালিকের কাছে এ সার বিক্রি করা হচ্ছে। আবার বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সবজি চাষ করছেন, এমন ২০ জন চাষিও এ সার ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া বাসাবাড়ির ছাদবাগানের জন্যও অনেকে ম্যাজিকম্পোস্ট সার কিনছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও দূর থেকে অনেকে ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন।

আসলাম হোসেনের পারিবারিক ব্যবসা চিংড়ি চাষ। বর্তমানে ৭ একর জায়গায় তিনি চিংড়ি চাষ করছেন। তবে ম্যাজিকম্পোস্ট সার তৈরির সফলতা তাঁকে এ খাতে বেশি আগ্রহী করে তুলেছে। আসলাম হোসেন বলেন, ‘আমি বড় পরিসরে কাঁকড়ার খোলসের সার উৎপাদন করতে চাই। এ জন্য আরও অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি কেনা প্রয়োজন। ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন কিংবা বিনিয়োগ পেলে এই উদ্যোগ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’