ভরা মৌসুমেও কেজিতে ৪শ টাকা বাড়ল ইলিশের দাম 

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ ভরা মৌসুমে দাম কমার পরিবর্তে আরও দাম বাড়ল নদীর মিষ্টি পানির ইলিশের। এ সপ্তাহে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৪শ টাকা । তবে আকারে ছোট হলেও সাগরের লবণাক্ত পানির ইলিশের সরবরাহ যথেষ্ট পরিমাণে বেড়েছে। মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন নদীতে পলি জমে গভীরতা কমে যাওয়ার কারণে কাক্সিক্ষত পরিমাণ মাছ পাচ্ছে না জেলেরা। বৃষ্টির পানি ও জোয়ারের চাপ বাড়লে নদীর ইলিশও পর্যাপ্ত ধরা পড়বে।

এদিকে বৃষ্টির অজুহাতে ডিম, মুরগি, পেঁয়াজ ও সবজির দাম বাড়ার পরে আর কমেনি। ভোক্তারা এজন্য বাজার তদারকি সংস্থার গাফিলতিকে দায়ী করছেন। রোববার যশোর শহরের বড় বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।সাগর ছাড়া নদীর সব আকারের ইলিশের কেজিতে এ সপ্তাহে ৪শ টাকা করে দাম বেড়েছে।

রোববার যশোর শহরের বড় বাজার মাছবাজারে খুচরা বিক্রেতা এরশাদ আলী জানান, এক কেজি ও তার কিছুটা বেশি ওজনের নদীর ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২৫শ/২৬শ টাকা, ৮শ/৯শ গ্রাম ওজনের কেজি ২২শ/২৩শ টাকা, ৫শ/৬শ গ্রাম ওজনের কেজি ১৬শ টাকা, ৪টায় কেজি ১১শ টাকা। আর সাগরের ইলিশ ৪টায় কেজি সাড়ে ৮শ/৯শ টাকা, ৬/৭ টায় কেজি সাড়ে ৪শ/৫শ টাকা।

বড়বাজার মাছবাজারের আড়তদার পিয়ার মুহাম্মদ জানান, বাজারে নদীর ইলিশের সরবরাহ কম, সাগরের ইলিশের সরবরাহ বেশি। এ কারণে নদীর ইলিশের দাম বেশি। বরগুনা, ভোলা ও বরিশাল জেলা থেকে সেখানকার আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা যশোরে বিক্রির জন্য ইলিশ সরবরাহ করেন। রোববার বরগুনা জেলার পাথরঘাটার পাইকারি ইলিশ ব্যবসায়ী (সরবরাহকারী) আলম সরদার জানান, তাদের পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে নদীর ইলিশের থেকে সাগরের ইলিশের আমদানি বেশি হচ্ছে। নদীতে জেলেরা তেমন ইলিশ পাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.মহসিন রোববার দৈনিক লোকসমাজকে জানান, বর্তমানে প্রচুর পরিমাণ সাগরের ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। এর আগে মাছধরা নিষেধাজ্ঞা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাগরে বিভিন্ন সিগন্যাল থাকায় জেলেরা মাছ আহরণে যেতে পারেনি। গত দু সপ্তাহ ধরে সাগরের ইলিশের আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে কাক্সিক্ষত পরিমাণ নদীর মিষ্টি পানির ইলিশ ধরা পড়ছে না জেলেদের জালে।

এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, নদীর তলদেশে পলি জমেছে, ইলিশ চলাচলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য তিনি নদী খননের কথা বলেন। অবশ্য তিনি নদী খননের জন্য বিআইডব্লিউটিএ-কে (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ) লিখিতভাবে অনুরোধ করেছেন বলে জানান। তিনি আপাতত আশার কথা জানান, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির চাপ বাড়লে নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাবে।

এদিকে সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে চাষিদের সবজি ক্ষেতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। নিচু জমির বহু গাছ পচে নষ্ট হয়েছে। অপেক্ষাকৃত উঁচু জমির সবজি ও যশোরের বাইরে অন্য জেলা থেকে আমদানি হয়ে আসায় বড় বাজারে সবজির ঘাটতি পূরণ হচ্ছে। তবে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বৃষ্টির অজুহাতে সবজির দাম বাড়িয়ে অধিক মুনাফা লাভ করছেন বলে ভোক্তাদের অভিমত। বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকার নিচে ভালোমানের সবজি মিলছে না।

খুচরা বিক্রেতা নাসির আলী জানান, রোববার বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১২০/১৪০ টাকা, টমেটো ১২০/১৪০ টাকা, গাজর ১০০/১২০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, কাকরোল ৮০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা।

তাছাড়া বাজারে মুরগির ডিমের হালিতে দাম বেড়ে সাদা ডিম ৪৪ টাকা ও লাল ডিম ৪৮ টাকা দরে বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। পেঁয়াজও ৭৫ টাকায় দাম ওঠার পর আর কমেনি। কমেনি খামারের মুরগির দামও। খুচরা বিক্রেতা আবুল হাশেম জানান, রোববার লেয়ার মুরগির কেজি ৩৩০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রোববার বড় বাজারে বাজার করতে আসা শহরের বেজপাড়া তালতলা এলাকার বাসিন্দা যশোর পৌরসভার সাবেক কমিশনার মফিজুর রহমান হিমু জানান, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি, পেঁয়াজ ও মুরগির সরবরাহ রয়েছে। এরপরও দিন দিন দাম বাড়ছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে সবজির ক্ষতির অজুহাতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আসায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ভোগান্তিতে ফেলেছে। এর প্রতিকার একমাত্র জেলা প্রশাসন করতে পারে। কিন্তু বাজার তদারকি সরকারি সংস্থাগুলো তেমন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে না।