মোল্লাপাড়ার নান্নুকে গুলি : সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের বারান্দি মোল্লাপাড়ার আলোচিত মাসুদুর রহমান নান্নুর পায়ে গুলি করে অঙ্গহানির অভিযোগে সাবেক পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী মাসুদুর রহমান নান্নু নিজে এ মামলাটি করেন। তিনি বারান্দি মোল্লাপাড়ার লুৎফর রহমানের ছেলে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম কিবরিয়া অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসিকে আদেশ দিয়েছেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন, সাবেক সহকারী পুলিশ সুপার ক-সার্কেল মিলু বিশ্বাস, কোতয়ালি থানার সাবেক এসআই শোয়েব উদ্দিন আহমেদ, এসআই আজগর আলী, চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এসআই জামাল হোসেন, কোতয়ালি থানার সাবেক এএসআই ইস্রাফিল হোসেন, কনস্টেবল রোকনুজ্জামান, পুলিশ লাইন্সের সাবেক কনস্টেবল সালাউদ্দিন, আজম, সবুজ, আব্দুল্লাহ আল কাফি, মোস্তাফিজুর ও গোবিন্দ এবং সদর উপজেলার রামনগর পুকুরকুল মাঠপাড়ার সোহরাব ডাক্তারের মেয়ে নিলুফা ইয়াসমিন ও আজিমুল হোসেন।
মামলায় মাসুদুর রহমান নান্নু উল্লেখ করেছেন, ২০১৪ সালের ৩১ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টার দিকে শহরের মণিহার সিনেমা হলের সামনে থেকে পুলিশ (আসামিরা) অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তারা তাকে চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে একটি কক্ষে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। এ সময় তার কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তিনি মুক্তিপণের টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে আরও মারধর করে পুলিশ।
আসামি সহকারী পুলিশ সুপার মিলু বিশ্বাস তাকে ক্রসফায়ারে হত্যার ভয় দেখান এবং আসামি এসআই শোয়েব উদ্দিন আহমেদ তার মাথায় পিস্তল ঠেকান। তখন মাসুদুর রহমান নান্নু প্রাণভয়ে আসামিদেরকে ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। এ সময় সহকারী পুলিশ সুপার মিলু বিশ্বাস তাকে বলেন যে, আসামি (পুলিশের কথিত সোর্স) নিলুফা ইয়াসমিন ও আজিমুল হোসেন সিটি কলেজ গেটে যাচ্ছেন। মাসুদুর রহমান নান্নুর লোকজনকে টাকা নিয়ে সেখানে যেনো তাদের সাথে দেখা করেন। এরপর মাসুদুর রহমান নান্নু তার ভাই মাহামুদুর রহমান বাবুকে মোবাইল ফোন করে ১০ লাখ টাকা নিয়ে সিটি কলেজ গেটে যেতে বলেন। পরে মাহামুদুর রহমান বাবু ১০ লাখ টাকা নিয়ে সিটি কলেজ গেটে গিয়ে নিলুফা ইয়াসমিন এবং আজিমুল হোসেনের সাথে দেখা করেন এবং তাদের হাতে ১০ লাখ টাকা তুলে দেন। এক পর্যায়ে মাহামুদুর রহমান বাবু তাদের সাথে চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়িতে যেতে চাইলে তারা তাকে নিয়ে যেতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এরই মধ্যে মাহামুদুর রহমান বাবু চিৎকার করে উঠলে সেখানে মাইক্রোবাসে থাকা এসআই শোয়েব উদ্দিন আহমেদ, এসআই আজগর আলী ও এসআই জামাল হোসেন গাড়ি থেকে নেমে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তারা হুমকি দিয়ে বলেন, কোনো কথা বললে তোর ভাইকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হবে। এরপর তারা সেখান থেকে মাইক্রোবাসে করে চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়িতে চলে যান। তারা টাকা নিয়ে চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে পৌঁছানোর পর সহকারী পুলিশ সুপার মিলু বিশ্বাস পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানকে মোবাইল ফোন করেন। এ সময় পুলিশ সুপার তাকে মাসুদুর রহমান নান্নুকে নির্জন স্থানে নিয়ে ক্রসফয়ারে হত্যা করতে বলেন। তখন সহকারী পুলিশ সুপার মিলু বিশ্বাস ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন বলে জানালে পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান হত্যার পরিবর্তে পায়ে গুলি করে পঙ্গু বানানোর কথা বলেন। এরপর অন্য আসামিরা মাসুদুর রহমান নান্নুর চোখ বেঁধে এবং হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ভাতুড়িয়া গ্রামে নিয়ে বাম পায়ে গুলি করেন। এ কারণে পরবর্তীতে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে। পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়। পরবর্তীতে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসলে তার এই অবস্থা দেখে পিতা লুৎফর রহমান গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর মারা যান। পরবর্তীতে তার মাও শোকে মারা যান। কিন্তু আসামিদের ভয়ে ওই সময় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেনি মাসুদুর রহমান নান্নু। বর্তমানে পরিস্থিতি অনুকূলে হওয়ায় তিনি আদালতে এই মামলা করেছেন।