অভয়নগরের ভৈরবের ভাঙনে বদলে যাচ্ছে মানচিত্র

0

সাইফুর রহমান সাইফ ॥ যশোরের অভয়নগরের ভৈরব নদের ভাঙনে কয়েকটি গ্রামের মানচিত্র বদলে গেছে। জনপদের মাটি বক্ষে পড়ে নদ হারিয়েছে নাব্য। এ ভাঙনের জন্যে অপরিকল্পিত ড্রেজিংকে দায়ী করা হচ্ছে।
এলাকা ঘুরে মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। এর অপর পাড়ে অভয়নগরের বাঘুটিয়া ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের ভাটপাড়া বাজার সংলগ্ন পাইকপাড়া -ভূগিলহাট গ্রামের একাধিক কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, অসংখ্য ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও গ্রামীণ সড়ক ভৈরবে বিলীন হয়েছে। এখন ভূগিলহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, ঈদগাহসহ শতাধিক ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও গাছপালা রয়েছে ভাঙন ঝুঁকিতে। পাশাপাশি শুভরাড়া ইউনিয়নের একটি অংশ ভাঙনের কবলে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানান, গত ১০ বছরে নদী ভাঙনে এলাকার মানচিত্রই বদলে গেছে। তাদের দাবি, বিআইডব্লিউটিএ ভৈরবে অপরিকল্পিত ড্রেজিং করছে। আর এ কারণে ভাঙছে ভৈরব।
বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভূগিলহাট গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, তার প্রায় ১০ বিঘা সম্পত্তি ভৈরবে বিলীন হয়েছে।
ভূগিলহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ মো. নাঈম সরদার বলেন, এলাকাবাসী ও মুসল্লিরা মিলে বাঁশ দিয়ে ভাঙন রোধে চেষ্টা করছেন। কিন্তু তা তেমন কাজে আসছে না। তাই দরকার সরকারি উদ্যোগ। নতুবা ঈদগাহ ও মসজিদ নদীর ভেতর হারিয়ে যাবে।
শুভরাড়া ইউনিয়নের শুভরাড়া গ্রামের ইসহাক সরদারের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, ১৫টি বসতঘরসহ কয়েকটি আম বাগান ভাঙনের কারণে নদীতে হারিয়ে গেছে। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে না পারলে সব হারিয়ে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। প্রায় একই রকম অভিমত এলাকার রতন সরকার,হারান বিশ্বাস ও ফাতেমা বেগমের।
বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ তৈয়েবুর রহমান বলেন, বিআইডব্লিউটিএ অপরিকল্পিত নদী খনন ও বালি উত্তোলন করছে। যার কারণে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।
শুভরাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, ভাঙন ঠেকাতে সরকারিভাবে স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, দুই ইউপি চেয়ারম্যান ও এলাকাবাসীর সাথে সমন্বয় করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নওয়াপাড়া নৌবন্দরের উপপরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন,ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে থাকে। পরিকল্পিতভাবে নদী খনন করা হচ্ছে না। অভয়নগরের পাইকপাড়া- ভূগিলহাট ও শুভরাড়া গ্রামের ভাঙন কবলিত মানুষের দাবির মুখে নদের অন্য পাড়ে খনন কাজ হচ্ছে। প্রয়োজনে খননের বালি বা পলিমাটি ভাঙন রোধে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, আমাদের সাথে পরামর্শ করে পরিকল্পনা অনুযায়ী নদী খননের কাজ করলে ফলাফল ভালো হত।