আমাদের একজন তরিকুল ইসলাম ছিলেন

0

হাবিবুর রহমান রিপন
২০০২ সালের ২৯ মার্চ যশোরে সংবর্ধিত হন তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী তরিকুল ইসলাম। ১১ মার্চ তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তির এক সপ্তাহ পর নিজ এলাকায় সংবর্ধিত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরা কলকাতার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করতো। তাই দেশ ভাগের পর থেকেই যশোর উন্নয়ন বঞ্চিত থেকে গেছে। পদ্মা ব্রিজ ছাড়া এ অঞ্চলে কোন উন্নয়ন হবে না। পদ্মা ব্রিজ করতে আমি শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়ে যাব। আমাদের মধ্যে পদ্মাব্রিজ হওয়ার কোন ইউনিটি নেই। আমাদের দেশপ্রেমের বড় অভাব। যশোর অঞ্চলের লোকের এসব নিয়ে কোন অনুভূতি নেই। বাংলাদেশে জাপানী পুঁজি বিনিয়োগ যশোরের জন্য হবে না। যশোরের যদি উন্নয়ন না হয় তাহলে যশোর হবে বাংলাদেশের পকেট। ফাঁকা পকেটের খোঁজ কেউ রাখবে না। কোন সরকারের পক্ষে এত কিছু বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নয়, তবুও সম্ভব হতো যদি যশোরের মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে দাবি করতে পারতো। যশোরের জন্য বিশ^বিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এসব দাবি করেন। চেম্বার, ইন্সটিটিউট, প্রেসক্লাব দাবি করতে পারে। সামাজিক দায় দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনে সভা সেমিনার করতে পারে। যশোরের উন্নতির চ্যলেঞ্জে যদি থেমে থাকি পদ্মা ব্রিজ যদি করতে না পারি তাহলে ২০/২৫ বছর পর যশোরে উন্নয়নের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি করতে হবে। ভালো কাজ যে করবে তাকে সহায়তা দিতে হবে। দেশ জাতি বড় কথা নয় বড় কথা হলো আমি এবং আমরা, আমার মা বাবা।’
২২ বছর আগে আমাদের যশোরের তরিকুল ইসলাম ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন পদ্মা সেতুর দাবি জানাতে। এটা কোন মন্ত্রীর বক্তব্য ছিল না, এটা ছিল খাঁটি যশোর প্রেমিক একজন মানুষের বক্তব্য। তিনি বুঝে ছিলেন যশোরের মানুষের জন্য পদ্মাসেতু লাগবেই। যশোরের মানুষ হয়তো এতবড় স্বপ্ন দেখতে ভয় পেতে পারে, তাই তিনি সবকিছু খোলসা করে বলে দিয়েছিলেন। কারা টাকা দেবে, কারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে এমনকি কর্মসূচি কেমন হবে। কিন্তু যশোরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে আন্দোলন তৈরি করতে পারেনি। জানাতে পারেনি কোন দাবি। তাই বলে তরিকুল ইসলাম বসে থাকেননি। তিনি তার কাজ করে গেছেন। তরিকুল ইসলমের সেই চাওয়া পদ্মাসেতু বাস্তবরূপ পেতে শুরু করে ২০০৪ সালে। শুরু হয় পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান বাছাই সমীক্ষা। পদ্মাসেতুর ক্ষেত্রে পাটুরিয়া সবচেয়ে সম্ভাবনাময় জায়গা হলেও যশোরকে পাশকাটিয়ে খুলনা বাগেরহাট ও গোপালগঞ্জের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার দোহাই দিয়ে মাওয়ায় পদ্মা সেতু নির্মাণের পক্ষে মত দেয় তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী নাজমুল হুদা। পাটুরিয়ায় সেতু না হলে যশোরের কোন লাভ হবে না বিবেচনায় মাওয়ায় পদ্মা সেতু নির্মাণের বিপক্ষে দাঁড়ান তরিকুল ইসলাম। যিনি প্রথম পদ্মাসেতু চেয়েছিলেন তিনি এবার আরো স্পষ্ট করে জানালেন সেতু হলে পাটুরিয়াতেই হতে হবে। নতুবা না। তরিকুল-নাজমুল টানা হেচড়ার মধ্যে সেতুর কাজ শুরু করতে পারেনি বিএনপি সরকার। তবে ২০১০ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যশোরের এক জনসভায় বলেন, তারা ক্ষমতায় গেলে পদ্মাসেতু করবেন একটি নয় দুটি। পরবর্তীতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার গোপালগঞ্জের উন্নতি মাথায় রেখে বিএনপি সরকারের ফেলে রাখা প্রকল্প পদ্মাসেতু মাওয়াতেই নির্মাণের ঘোষণা দেয়। পদ্মাসেতু নির্মাণের পর তরিকুল ইসলামের সেই বক্তব্য এখন বাস্তব। যশোর বাংলাদেশের পকেট হয়ে গেছে। প্রযোজন ছাড়া কেউ পকেটের খবর রাখে না। অথচ যশোরের মানুষ এখনো তা উপলব্ধি করতে পারেনি।
তরিকুল ইসলাম মুখে বলেছেন দাবি করতে, কেউ দাবি না করলেও তা তিনি বাস্তায়ন করেছেন। যশোরে বিশ^বিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ১৬ বছর এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে শুধু রাজনীতি করেছে।
তরিকুল ইসলামের মত যশোরকে ভালোবাসার মানুষ আর আর মিলবে কিনা সন্দেহ। তিনি যশোরের প্রশ্নে সেরা যশোর প্রেমিক। দেশের প্রশ্নেও সেরা দেশ প্রেমিক। মন্ত্রী হয়েও তিনি জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে কথা বলতেন। কখনো মিথ্যা বক্তব্য দিতেন না। তিনি যা বুঝতেন যা বিশ^াস করতেন তাই বলতেন। ২০০৩ সালে যশোরে মে দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘সারা পৃথিবীতে একটি দেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে আমেরিকা। পুঁজিবাদী দেশকে তারা হাতের মুঠোই রেখে যে পুঁজিবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছে তার মূল হলো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিকে থাকতে হবে। প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে যোগ্য সে হবে যে কাজ করবে। যার বুদ্ধিমত্তা বেশি, চিন্তা বেশি, মননশীলতা বেশি সেই টিকে থাকবে। সমাজে বৈষম্য যতদিন থাকবে ততদিন সংগ্রাম চলবে। অতীতেও ছিল ভবিষ্যতেও থাকবে। রাজনীতিবিদরা ভালো না, তার জনগণের কল্যাণের কথা বলে দুর্নীতি করে সংসার চালায়। কিছু কিছু রাজনীতিবিদের কারণে সবার প্রতি আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। আমি মন্ত্রী হওয়ার পর বিরোধীদের প্রতি কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি করিনি। আওয়ামী লীগ যেভাবে আমাকে আসামি বানিয়েছে আমি কাউকে আসামি করিনি। আমি বলি কোন প্রতিহিংসা নয়, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে কেউ যেন প্রশ্রয় না দেয়। সন্ত্রাসীদের একটি পরিচয় সে সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসী কোন দলের নয়।’
আজকের বাস্তবতায় যশোরবাসী ও দল হিসেবে বিএনপির জন্য অবশ্যই পালনীয় তরিকুল ইসলামের বক্তব্য ‘আমি বলি কোন প্রতিহিংসা নয়, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে কেউ যেন প্রশ্রয় না দেয়। সন্ত্রাসীদের একটি পরিচয় সে সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসী কোন দলের নয়।’