বেলজিয়ামে রফতানির জন্যে বাগেরহাটে তৈরি হচ্ছে ১২০টি দৃৃষ্টিনন্দন কাঠের ঘর

0

আলী আকবর টুটুল, বাগেরহাট ॥ বেলজিয়ামে রফতানির জন্যে বাগেরহাটে তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন কাঠের বসতঘর। ক্রেতার ডিজাইন অনুযায়ী একটি পূর্ণাঙ্গ কাঠের তৈরি ঘর দেখে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাঠের বাড়ির প্রথম চালান বেলজিয়ামে পাঠানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক।
বৃহস্পতিবার ন্যাচারাল ফাইবার কোম্পানির কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঘরের মূল কাঠামোসহ দরজা, জানালা ও আসবাবপত্র। শ্রমিকদের মধ্যে কেউ মেশিনে কাঠ কাটছেন, কেউ ফিটিং করছেন আবার কেউ কাঠের ওপর ডিজাইন করছেন। সবশেষে শ্রমিকদের নিপুন হাতের ছোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব কাঠের ঘরের বিভিন্ন অংশ। এই অংশগুলোকেই জোড়া লাগিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আস্ত কাঠের ঘর। প্রতিটি ঘর ১১ মিটার লম্বা এবং চাওড়া সোয়া ৪ মিটার। দুটি বেডরুমে মোট পাঁচজন থাকার উপযোগী এ ঘর সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ঘরের একপাশে একটি বারান্দা, বেডরুমের সাথে বাথরুম ও বসার ঘর রয়েছে। বসার ঘরে টেলিভিশন দেখার ব্যবস্থা, রয়েছে ঘরে এসি, এবং ঘরের ভেতরেই রান্না করারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ঘরের প্রতিটা অংশ খুলে প্যাকিং করে পাঠানো হবে বেলজিয়ামে। এরপর বিভিন্ন অংশকে ছোট আকারে খ- করা হয়। এর ফলে পুরো বাড়িটিকে স্বল্প স্থানে পরিবহন করা সহজ হয়ে যায়। পরে এ খ-াংশগুলো জুড়ে দিলে সহজেই যেকোনো জায়গায় স্থাপন করা যায় এগুলো।
কারখানার প্রোডাকশন ম্যানেজার শংকর বিশ্বাস বলেন,চলতি বছরের শুরুর দিকে গ্রিসের কোকোম্যাট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেলজিয়াম থেকে কাঠের বাড়ি তৈরির অর্ডার পায় বাগেরহাটের ন্যাচারাল ফাইবার নামক প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে কাঠের ঘরের স্যাম্পল তৈরি শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। কাঠের তৈরি স্যাম্পল ঘরটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পছন্দ হওয়ায় চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের মধ্যে ১২০টি ঘর তৈরি করে রফতানির জন্য কাজ শুরু করেছে ন্যাচারাল ফাইবার নামের এই প্রতিষ্ঠানটি। আমরা এখানে যে ঘর তৈরি করছি তা বিশ্বমানের পরিবেশবান্ধব ঘর। ক্রেতাদের ডিরেকশন অনুযায়ী আমরা প্রথমে যে ঘরটি কমপ্লিট করেছি সেটি ক্রেতারা পছন্দ করেছেন। এর মাধ্যমে কাঠের তৈরি ঘর রফতানিতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে গেছে। আমাদের কাছ থেকে তারা মোট ১২০টি ঘর ক্রয় করবেন। আমরা অত্যন্ত যতœ সহকারে কাজ করছি যাতে ইউরোপের বাজারে আমাদের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পায়।
কাঠমিস্ত্রি শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা ডিজাইন দেখে সম্পূর্ণ একটি বসতঘর তৈরি করেছি। এরপর কোম্পানি ও বিদেশি লোকজন দেখে পছন্দ করেছে। এখন আমরা ঘরটি সম্পূর্ণ করেছি। এছাড়া কাঠের সাইকেল, সানবেড, হোটেল বেড, কুকুর ও বিড়ালের বিভিন্ন খেলনাসহ পরিবেশবান্ধব নানা পণ্য। তবে বর্তমানে শুধু কাঠের বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।
বাগেরহাট ন্যাচারাল ফাইবারের কনসালটেন্ট মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা শাহিন বলেন, এই ঘরটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যেখানে ৫ জন সদস্য থাকতে পারবে। ওদের দেশের স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে একটি ফ্যামিলি যাতে সুন্দরভাবে থাকতে পারে তার সব ব্যবস্থা আমরা এই ঘরে রেখেছি। ওরা যেভাবে ডিজাইন ও ডিরেকশন দিয়েছে সেভাবেই ঘরটি তৈরি করেছি। ঘরের ভেতর দুটি বেডরুম ও একটি বসার রুম রয়েছে। ঘরটি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এই ঘরের ভেতর একটি বারান্দা, বাথরুম, রান্না করার স্থান রয়েছে। এছাড়া ফ্রিজসহ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র ঘরটির ভিতরে থাকবে।
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাচারাল ফাইবারের উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন, কাঠের বসতঘরটি বেলজিয়ামের পাইরি ডাইজা ইকো পার্কের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। কোকোম্যাট নামে গ্রিসের একটি প্রতিষ্ঠান পাইরি ডাইজার কাছ থেকে কাজটি আমাদের এনে দিয়েছে। আমরা ক্রেতাদের ডিরেকশন ও ডিজাইন অনুযায়ী একটি আস্ত ঘর তৈরি করে দেখিয়েছি। ক্রেতারা আমাদের যে ডিজাইন ও ডিরেকশন দিয়েছে সে অনুযায়ী কাজ হয়েছে কিনা সেটি তারা যাচাই করে দেখেছে। ক্রেতারা এই ঘরে রাত্রিযাপন করেও সন্তুষ্ট হয়েছেন। ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে মোট ১২০ টি ঘর তৈরি করে তাদেরকে দিতে হবে।