ফলদ বনজ ঔষধি গাছের চারার বিশাল সংগ্রহশালা যশোর হর্টিকালচার সেন্টার

0

আকরামুজ্জামান ॥ যশোর হর্টিকালচার সেন্টারের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হরেক রকমের উন্নত জাতের ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ শোভা পাচ্ছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই উদ্যান থেকে যশোরসহ আশপাশের এলাকার বৃক্ষপ্রেমীরা দেশি-বিদেশি উন্নত জাতের এসব গাছের চারা কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। বৃক্ষপ্রেমীরা বলছেন, যশোরের সর্ববৃহৎ হর্টিকালচার সেন্টারটি বর্তমানে ফল, সবজি, ওষধি গাছের বিশাল সংগ্রহশালায় পরিণত হয়েছে।
যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রাচীরের গা ঘেঁষে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ হর্টিকালচার সেন্টারের অবস্থান। এখানে প্রচলিত এবং অপ্রচলিত বিভিন্ন উন্নতমানের ফলদ-বনজ ও ওষধি গাছের চারা উৎপাদন হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। এরই ধারবাহিকতায় চলতি মৌসুমে এ সেন্টারে উন্নত মানের ১২০ টি বিভিন্ন ফলদ, বনজ, ওষধি গাছের মাতৃগাছ থেকে কলম তৈরি করে তা কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। কৃষকরা বলছেন এখানকার চারার মান ভালো হওয়ায় তারা বাগান সৃজন করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুসজ্জিত উদ্যানটিতে সার্বক্ষণিক একদল প্রশিক্ষিত কৃষক রয়েছেন। তাদের মূল কাজ হচ্ছে বাগানটির পরিচর্যার পাশাপাশি উদ্যানের মাতৃগাছ থেকে আধুনিক পদ্ধতিতে কলম তৈরি করে সেগুলো পরিচর্যা করে বড় করে তোলা।
হর্টিকালচার সেন্টারে কর্মরত কৃষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মানসম্মত চারা তৈরি করা হচ্ছে তাদের মূল কাজ। তিনি বলেন, এখানে দোশ-বিদেশি বিভিন্ন ফলের গাছ রয়েছে। এসব ফলের কয়েকটি মাতৃগাছ রয়েছে। এসব মাতৃগাছের ডাল সংগ্রহ করে সেখানে বিশেষ পদ্ধতিতে কলম তৈরি করা হয়। পরে সেই কলমের চারা বড় করে কৃষক পর্যায়ে বিক্রি করা হয়।
মোখলেছুর রহমান নামে আরেক কৃষক জানান, এই বাগানে উন্নত জাতের আমের অন্তত ৩০ টি জাত রয়েছে। এসব জাত দেশি-বিদেশি। মাতৃগাছ থেকে কলমের মাধ্যমে এ জাতের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বারী আম-১, বারী আম-৩, ৮, ১১সহ আরও অনেক জাতের আমের চারা রয়েছে। এসব আমের চারার কৃষক পর্যায়ে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর বাইরেও সূর্য ডিম, বেনানা, গৌরমতি নামে আমের জাতগুলোর বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন যশোর ছাড়াও আশপাশের জেলার মানুষরা এসে তা কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
উদ্যানটিতে মাগুরার রাউতড়া থেকে গাছের চারা কিনতে আসেন নাসির হোসেন নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, ১১ বিঘা জমিতে তার ফলের বাগান রয়েছে। সিংহভাগ গাছের চারাই যশোর হর্টিকালচার সেন্টার থেকে সংগ্রহ করেছেন বলে জানান তিনি। এ বছর কিছু বারোমাসি কাঁঠালের চারা কেনার জন্যে এসেছেন বলে জানান তিনি।
একই সময়ে কথা হয়, পাশের জেলা নড়াইলের বাশগ্রাম এলাকার বাসিন্দা বদরুল আলমের সাথে। তিনি বলেন, সাধারণত বাইরের কোনো বাগান থেকে গাছের চারা কিনলে তার সঠিক জাত নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে যশোরের হর্টিকালচার সেন্টারের জাতে কোনো সমস্যা হয়না। দীর্ঘদিন যাবৎ এখান থেকে ফল-বনজ ও ওষধি গাছের চারা সংগ্রহ করলেও কোনো সমস্যা হয়নি। তারপর দাম অন্যান্য জায়গার চেয়ে অনেক কম বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে যশোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক দীপঙ্কর দাস বলেন, এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় মানুষ গাছের চারা কিনতে ভিড় জমাচ্ছে। আমরা চাহিদা অনুযায়ী গাছের সরবরাহ রেখেছি। তিনি বলেন, গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দক্ষিণের সর্ববৃহৎ এ হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ১৫ লাখ টাকার বিভিন্ন চারা বিক্রি হয়। এ বছর তা ছাপিয়ে প্রায় ১৭ লাখ টাকা রাজস্ব অর্জন হবে বলে জানান তিনি।
কৃষিবিদ দীপঙ্কর দাস বলেন, হর্টিকালচার সেন্টারটি শুধু যশোর নয়, পাশর্^বর্তী জেলার গাছের চারার চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। এখানে প্রচলিত-অপ্রচলিত দেশি-বিদেশি ফল-বনজ, ওষধি গাছের চারার পাশাপাশি নানান জাতের ফুলের চারা সরবরাহ করা হচ্ছে।