আওয়ামী লীগে পঞ্চপাণ্ডবের উত্থান ও অপকর্ম

0

লোকসমাজ ডেস্ক ।। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের রাজনীতিতেই এখন অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। প্রায় দেড় দশক টানা ক্ষমতায় থাকা দলটির সাংগঠনিক শক্তি যে আগে থেকেই ভেতরে-ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সেটা এখন আবার উঠে আসছে দলের ভেতর থেকেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পরে মূলত পাঁচ নেতা দল পরিচালনা করেছেন। পঞ্চপান্ডব হিসেবে পরিচিত এই নেতাদের কারণে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিনাশ ঘটেছে বলে দাবি দলের অনেক নেতাকর্মীর।এই পাঁচ নেতা হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য-গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। দলীয় সূত্রগুলোর দাবি, ক্ষমতার রাজনীতি ওবায়দুল কাদেরসহ এই পাঁচজনকে বড় নেতা ও ক্ষমতাবান করে তুলেছিল। আওয়ামী লীগের মাঠের রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদের ছাড়া অন্যদের তাদের অবদান নেই বললেই চলে। দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ছিলেন তিন মাসের জন্য। এরপর চলে যান বেলজিয়াম। সেখান থেকে ফিরে ২০০২ সালে বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। এক/এগারোর সময় দলে সংস্কারের আওয়াজ উঠলে শেখ হাসিনার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন হাছান মাহমুদ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তাকে প্রতিমন্ত্রীও করা হয়। তবে বিপ্লব বড়ুয়া, সেলিম মাহমুদ ও আবদুস সোবহান গোলাপ মিছিল-মিটিংয়ের কর্মীও ছিলেন না।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিপ্লব বড়ুয়া ও সেলিম মাহমুদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের হাত ধরে আওয়ামী লীগে জায়গা করে নেন। পরে সামরিক সচিব জয়নুল আবেদীনের সহযোগিতায় ক্ষমতাবান হন তারা। গোলাপ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হন যুক্তরাজ্যে বসবাস করার সময়ে। ২০১২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। বিপ্লব বড়ুয়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসেন ২০১৬ সালে। আর সেলিম মাহমুদ অন্তর্ভুক্ত হন সর্বশেষ ২০২২ সালের কাউন্সিলে। এর আগে তিনি উপকমিটিতে ছিলেন।দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র সেলিম মাহমুদ বিভাগের বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষক এরশাদুল বারীর তদবিরে স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে পিএইচডি করতে যান। মানারাত ইউনিভার্সিটি, সিটি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন তিনি। সেলিম তার বাবা রুস্তম আলীর নামে করা কলেজ এমপিওভুক্ত করেন বিএনপি আমলে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বদান্যতায়। জ্বালানি খাতের দায়িত্ব পালনের সময়ে দুর্নীতি, মনোনয়ন ও তদবির-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।দলীয় সূত্রগুলো বলছে, মাঠের রাজনীতির অভিজ্ঞতা না থাকায় দলের নেতাকর্মীদের কাছে হাছান মাহমুদ, গোলাপ, বিপ্লব বড়ুয়া ও সেলিম মাহমুদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। এ অবস্থায় নিজেদের দল ভারী করার জন্য অনুপ্রবেশকারীদের একটি গ্রুপকে কাছে টেনে নিয়েছেন তারা। এটা প্রথম শুরু করেছিলেন গোলাপ। এরপর হাছান, বিপ্লব ও সেলিম একই কাজ করেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি, উপকমিটিসহ বিভিন্ন স্তরের কমিটি ও সহযোগী সংগঠনে তাদের অনুসারীদের নেতা বানানো হয়। তাদের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকও ছিলেন। ওবায়দুল কাদেরের ওপরও দলের বড় একটি অংশের নেতাকর্মী-সমর্থকরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। নিজের আধিপত্য ও ক্ষমতা বাড়াতে ওই চারজনকে সঙ্গী করেন কাদের। আওয়ামী লীগে আবির্ভাব ঘটে পঞ্চপান্ডবের। ( সূত্র : দেশ রূপান্তর )