আবু নাসের অনীক || প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বিশেষ সহকারী জনাব মাহফুজ আলমকে ২৪ গণঅভ্যুত্থানের তাত্তি¡ক হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তিনি এখন আলোচ্য ব্যক্তিত্ব। আমাদের গণমাধ্যম এক্ষেত্রে একটি বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
নব্বই দশকের শুরুতেই দেশের লুটেরা ধনীক শ্রেণি তাদের লুটপাটের কর্মকান্ডকে আড়াল করার অস্ত্র হিসাবে মিডিয়া হাউজ গড়ে তোলে। রাতারাতি পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের মালিক বনে যায়। অধিকাংশ গণমাধ্যম এই সমস্ত লুটেরা তথাকথিত কর্পোরেট হাউজের বাণিজ্যিক প্রচার মাধ্যম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণমাধ্যমের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই এরা পরিবর্তন করে ফেলেছে। গণমাধ্যম বা সংবাদমাধ্যমে বস্তু-ন্যায়নিষ্ঠ, নিরেপেক্ষভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আর বাণিজ্যিক প্রচার মাধ্যমে নিজস্ব এজেন্ডা হিসাবে নানামূখী কনটেন্ট তৈরি করে সেগুলি প্রচার করে জনমতকে প্রভাবিত করা হয়।
এই প্রচার মাধ্যমগুলিই সমাজে সামাজিক সম্মতি উৎপাদন করে। কোনটির পর কোনটি প্রচারে এনে পরিস্থিতি কোন দিকে নিতে হবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করে। রাজনীতির গতিমুখ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। লুটেরা এ সমস্ত কর্পোরেট হাউসগুলো তাদের স্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শাসকগোষ্ঠীর যে অংশ সহায়তা করতে প্রস্তুত তার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। এ কারণেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় কে আসবে সেটা নির্ধারণেও ভূমিকা রাখে। তাদের মালিকানাধীন তথাকথিত গণমাধ্যম ব্যবহার করে তার পক্ষে জন সম্মতি গড়ে তোলে। জনাব মাহফুজ আলম তাদেও কাছে এখন তেমনি একটি কন্টেন্ট।
একটি প্রথম শ্রেণির দৈনিকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর দীর্ঘ একটি সাক্ষাতকার প্রচার হয়েছে। সেখানে তিনি এমন কিছু আলাপচারিতা করেছেন তাঁর রাজনৈতিক এবং সরকারে অবস্থানের কারণে সে বিষয়ে মতামত জানানোটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। আপনি বলেছেন, ‘এই গণঅভ্যুত্থানকে আমি অনেক কিছুর মীমাংসা আকারে দেখি। সাংস্কৃতিক প্রশ্নে মীমাংসা, আদর্শিক প্রশ্নে মীমাংসা। অভ্যুত্থান নিজেই একটা বড়সড় মীমাংসা বা বন্দোবস্ত ছিল।’
আদতে কি বিষয়টি তাই?
গত ১৫ বছরে ধরে ফ্যাসিস্ট কর্তৃক নাগরিকের অধিকারহীনতা, স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার হরণ, বিরুদ্ধ মত দমনে হত্যা-গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড; ক্ষমতাতন্ত্র-লুটপাটতন্ত্র-গুন্ডাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, সকল ধরনের সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলি ধ্বংস করা হয়; নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উর্দ্ধ মূল্যে মানুষের জীবন দিশেহারা হয়ে ওঠে; শ্রমিক তার ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়।
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন-নির্যাতনে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো। এরকম একটি অবস্থা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য তারা গণঅভ্যুত্থানের সাথে নিজেদেরকে যুক্ত করে। এটি ছিলো তাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই। সাংস্কৃতিক প্রশ্নের মীমাংসা কোন প্রকার প্রভাবক হিসাবে এখানে ভূমিকা রাখেনি। তার কাছে একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকাটা নিশ্চিত করাই ছিলো প্রধান বিষয়।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে আমরা পর্যবেক্ষণ করলাম নাগরিকদেরই একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল থেকে শুরু করে ভাস্কর্য ভাঙা শুরু করলো। মাজারে মাজারে হামলা শুরু হলো; যেটাকে আপনি বলেছেন,‘গত ১৫ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন চালিয়েছে সুফিবাদের অনুসারী লোকেরা। তাদের বড় একটা অংশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছে। ফলে মাজার ভাঙার ঘটনার পেছনে একটা রাজনৈতিক আক্রোশ আছে।’
অর্থাৎ ফ্যাসিস্টের প্রতি আক্রোশ থেকে মাজার ভাঙছে। সেটাও জায়েজ করছেন; কিন্তু বিষয়টি আসলে ধর্ম কেন্দ্রীক। আওয়ামী সময়েও মাজার ভাঙার প্রচেষ্টা হয়েছে; তৎকালীন সরকার সেটা দমনের ক্ষেত্রে কঠোর ছিলো। এর সাথে রাজনৈতিক আক্রোশের প্রকৃতঅর্থে সম্পর্ক নাই। সম্পর্ক ধর্মীয় দর্শনের। বিভিন্ন জায়গাতে গানবাজনার অনুষ্ঠানকে বাধা দেয়া হচ্ছে।
জুলাই অভ্যূত্থানের এজেন্ডা কি ছিলো?
মাজার উচ্ছেদ,মন্দিরে হামলার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা?
আমাকে আপনি বলবেন কি এগুলো সাংস্কৃতিক প্রশ্নে মীমাংসা; না কি বিরোধটি আরো বেশি মাত্রায় ফোকাসড হওয়া?
তাত্বিকভাবে গণঅভ্যূত্থানকে বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, একটি গণঅভ্যুত্থানের পর সমাজে-রাষ্ট্রে নানা ধরণের মতের ভিন্নতা তৈরি হয়। কারণ অভ্যুত্থান পূর্ববর্তী সময়ে চিন্তা একটি জায়গাতে কেন্দ্রীভ‚ত থাকে; ফ্যাসিস্টকে অপসারণ করার লক্ষ্যে। সেটি সফল হওয়ার পর বিভিন্ন স্বতন্ত্র আদর্শের শক্তিগুলো তাদের মতো কওে স্বতন্ত্র অবস্থান গ্রহণ করে সমাজে-রাষ্ট্রে। এবং নিজেদের আদর্শকে সংহত করার চেষ্টা করে। এমন পরিস্থিতিতে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অপেক্ষাকৃত কাছাকাছি আদর্শের শক্তিসমূহ নিজেরা নিজেদের মধ্যে মীমাংসার উদ্যোগ নেয়।
সুতরাং ২৪ এর অভ্যূত্থান সাংস্কৃতিক বা আদর্শগত যেটাই বলেন না কেন তার কোন মীমাংসা সে নিজে করে নাই। বরং বির্তক উত্থাপন করেছে। তাকে এখন মীমাংসার দিকে নিতে হবে রাজনৈতিক ভূমিকার জায়গা থেকে। আপনি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বলতে যেয়ে বলেছেন,‘১৯৭১ হয়েছিলো বাঙালি মুসলমান স¤প্রদায়ের দুটি বোঝাপড়া থেকে। তারা বুঝতে শুরু করলো বাংলার ইসলাম পাকিস্তানের ইসলামের সঙ্গে যায় না।’ এটাকেই আপনি ৭১ এর প্রধান দ্ব›েদ্বর জায়গা হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
বাংলার ইসলাম বলেন, পাকিস্তানের বলেন আর ভারতের ইসলাম বলেন, কোনটির সাথে কোনটির প্রকৃতঅর্থে মিল পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ প্রত্যেক জায়গায় ধর্ম সেই ভূ-খন্ডের আবহমান সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের দূরত্ব ছিলো ১২০০ মাইল। যে দুটি অংশের মধ্য আবহমান সংস্কৃতির কোন মিল ছিলো না। সুতরাং দুই অংশের ইসলামের মধ্যে মিল থাকবেনা সেটাই ছিলো স্বাভাবিক। সেকারণেই পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের ইসলাম কেন্দ্রীক বিভক্ত হয়ে যাওয়ার মতো দ্ব›েদ্বর নুন্যতম কোন ছিলো সূত্র না। ’৭১ পূর্ববর্তী সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ব্যবসায়ী ও ভ‚স্বামীদের সাথে দ্ব›দ্ব ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যবসায়ী ও ভ‚স্বামীদের।
সেসময় সমগ্র পাকিস্তানের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করতো ২২ পরিবার। এর মধ্যে দুই পরিবারের অবস্থান ছিলো পূর্ব পাকিস্তানে। অর্থনৈতিক সকল কর্মকান্ড ছিলো প: পাকিস্তানে কেন্দ্রী রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণও ছিলো তাদের হাতে। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক আধিপত্য কায়েম করতে যেয়ে পূ: পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের উপর শোষণ-নির্যাতন চাপিয়ে দিয়েছিলো তারা।
যে কারণে প: পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর উপর এখানকার জনগণ ছিলো চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তারা প্রতিনিয়তো রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক অধিকার হতে বঞ্চিত হতো। পু: পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে এই নিপীড়ন থেকে মুক্তি পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা তৈরি হয়। মনে রাইখেন এর মধ্যে কিন্তু ইসলাম ধর্ম কেন্দ্রীক বঞ্চনার কোন বিষয় ছিলো না। বরং ৭১ এ জামায়াতের মতো রাজনৈতিক দলসমূহ ইসলামকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের অখন্ডতা বজায় রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক বিরোধিতা করেছে।
একই সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে সক্রিয় সামরিক সমর্থন যুগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম চেতনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আপনার রেফারেন্স দেওয়া এ বি এম হাবিবুল্লাহ বা আবদুল করিমের মতো ইতিহাসবিদদেরকে আমরা বহু বছর আগেই পাঠ করেছি। তারা যে বয়ান তৈরি করেছেন আর তাদেরকে ভিত্তি ধরে আপনি ৭১ এর যে বয়ান উপস্থাপন করলেন তার বিন্দুমাত্র তাত্বিক ভিত্তি নাই। কেন নাই সেটা আলোচনা করেছি। আরো পাঠ করুন। আপনার এখনও অনেককিছু জানার বাকি আছে।
আপনি বলেছেন,‘আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে শত্রু বানিয়ে রেখেছে। খালি চোখে আমরা হয়তো কেবল জামায়াত–শিবিরকে দেখব’। আওয়ামী লীগ জনগণের একটি বড় অংশকে অবশ্যই শত্রু বানিয়ে রেখেছিলো। সে জামায়াতকে যতোটা না শত্রু মনে করেছে তার চাইতে বেশি শত্রু ভেবেছে বিএনপিকে। জামায়াতকে সে সুযোগ দিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলো, যার মধ্যে জামায়াত ছিলো। ৮৪ সালে জামায়াত ও আওয়ামী লীগ এক সাথে নির্বাচন করেছিলো। ১৯৯১ সালে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জন্য জামায়াতের সমর্থন লাভের আশায় গোলাম আজমের সাথে সাক্ষাত করে।
সমর্থন আদায় এবং জামায়াতকে তাদের পক্ষে আনার জন্য আওয়ামী লীগ প্রচেষ্টা চালায়। ৯৫-৯৬ সালে তারা জামায়াতকে সাথে নিয়ে মুভমেন্ট করেছে। ১০ জুন ২০২৩ জামায়াতকে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার প্রকাশ্যে সভা করার অনুমতি দিয়েছিলো। সেইসময় আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদের একজন আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন,‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে’ জামায়াতে ইসলামীকে ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তারা (জামায়াত) রাজনৈতিক দল, হাই কোর্টের রায় ছিল সংবিধানের সঙ্গে তাদের গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক, গ্রহণযোগ্য না। এই প্রেক্ষিতেও তাদের তো অনেক জনগণের সমর্থন আছে। এই পরিস্থিতির আলোকে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। আপনারা একটু অপেক্ষা করেন, আরও দেখবেন কী হয়?” (১২ জুন ২০২৩- যুগান্তর)।
২০২৪ এর নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছিলেন,‘রাজনীতির মাঠে কথা আছে, আওয়ামী লীগ জামায়াতকে বিভিন্ন নামে কিছু সিট (আসন) দেবে’ (৫ জুন ২০২৩- সমকাল)। আওয়ামী লীগ জামায়তকে নিষিদ্ধ করতে আইন সংশোধনের প্রস্তাবটি ১০ বছর ধরে আইন মন্ত্রণালয়ে ফেলে রেখে ছিলো।
অপর দিকে নিবন্ধন বাতিলের আপিল শুনানিও নয় বছরে করে নাই! আর গণঅভ্যূত্থান পরবর্তী সময়ে তো জানায় গেলো শিবীর ছাত্রলীগের মধ্যে ঢুকে ছাত্রলীগ হয়ে সংগঠন করেছে। প্রশ্ন করতে পারেন, শিবির ট্যাগ দিয়ে হত্যা নির্যাতন করার বিষয়টি। এটা করতো দুটি কারণে। ভয়ের একটা সংস্কৃতি তৈরি করা এবং জামায়াতকে তার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। যাতে তাকে বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়। জামায়াত এর সাথে আপনি আওয়ামী লীগের সম্পর্কের যে বয়ান উপস্থাপন করেছেন সেটি একপেক্ষিক এবং ইতিহাসের ভুল বয়ান। একপেক্ষিক পর্যালোচনা এবং ভুল ইতিহাস দিয়ে তত্ব বির্নিমান করা যায় না।
আপনি বলেছেন,‘বুঝতে হবে যে বর্তমান যুগে রাষ্ট্র এমন একটা নিপীড়নমূলক প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে, যার সঙ্গে কোনো ধর্মই যায় না।’ এইটা তো বর্তমান যুগের বিষয় না। লেনিন রাষ্ট্র সম্পর্কে বহু বছর আগেই বলেছেন,“রাষ্ট্র শ্রেণিগত শাসনের যন্ত্র। রাষ্ট্র হচ্ছে শ্রেণি বিরোধ-সমাধানের অসম্ভবতার ফল ও অভিব্যক্তি। যখন যেখানে ও যে অনুপাতে শ্রেণি-বিরোধ বাস্তবে সমাধান করা যায় না, তখন সেই অবস্থায় ও সেই অনুপাতে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। অপর দিক হতে এটিও বলা চলে যে, রাষ্ট্রের অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে, শ্রেণি বিরোধ মীমাংসার অতীত”(রাষ্ট্র ও বিপ্লব-লেনিন)।
মার্কস রাষ্ট্র সম্পর্কে বলেছেন,‘রাষ্ট্র হচ্ছে শ্রেণিগত শাসনের যন্ত্র, এক শ্রেণি কর্তৃক অপর শ্রেণিকে পীড়ন করবার যন্ত্র; যে ‘শৃঙ্খলা’ শ্রেণি সংঘর্ষকে প্রসমিত করে এই পীড়নকে বিধিবদ্ধ করে, সেই কায়েমী ‘শৃঙ্খলা’ প্রবর্তন করা-ই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য’(পরিবার, ব্যক্তিগত সম্মত্তি ও রাষ্ট্রের উৎপত্তি-এঙ্গেস-মার্কস)। আপনার তো নতুন করে এটা তত্বায়নের কিছু নেই যে, আধুনিক যুগে রাষ্ট্র নিপীড়নমূলক প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রের উদ্ভব থেকেই রাষ্ট্র এমন। যারা মার্কস-লেনিনের ‘রাষ্ট্র’ পাঠ করে নাই তাদের কাছে এই ধারণা নতুন হতে পারে!!
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে আপনি কেমন দেখতে পাচ্ছেন এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন,‘বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যদি আত্মমর্যাদা গড়ে তোলা যায়, তাহলে কেউ আর তাকে অধীন করতে পারবেনা।’ দেখুন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আত্মমর্যাদার কোন অভাব নেই আদৌও। নেই বলেই সে ৭১ এ রক্তক্ষয়ী একটা যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। ৯০ আর এই ২৪ এসে সে আবারো গণঅভ্যূত্থান ঘটিয়েছে সেই প্রবল আত্মমর্যাদাবোধের কারণেই।
৭১ পূববর্তী ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী তার লুটেরা রাজনীতি দিয়ে মানুষের আত্মমর্যাদোবোধ কেড়ে নেওয়ার, অবদমন করার বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করেছে। কারণ অবদমন কওে রাখতে পারলে লুটপাট করাটা অনেক বেশি সহজ হয়ে যায়। সুতরাং নাগরিকের মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে তোলার প্রতি মনযোগী না হয়ে মনোযোগটা দেওয়া প্রয়োজন যারা দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতায় থাকবে তারা যেন অবদমনের রাজনীতিটা করতে না পারে। ক্ষমতা কাঠামোকে এমনভাবে বিন্যাস্ত করা যায় যাতে রাজনৈতিক শক্তি ফ্যাসিস্ট হয়ে না উঠতে পারে।
মানুষ নিশ্চয় একটা নতুন রাজনৈতিক পরিসর খুজঁতেছে। এটা আপনার একার পর্যালোচনা না। বরং আপনি বা আপনারা চিন্তা করতে শেখার অনেক আগেই আমরা গত দুই দশক পূর্ব থেকেই এটা বলে আসতেছি। মানুষের লড়াইটা সেভাবেই সার্প হচ্ছে। শেষ একটি আলোচনা দিয়ে শেষ করতে চাই। রাজনৈতিক দল গঠন এবং কিংস পার্টি সম্পর্কে আপনি বলেছেন,‘সরকারের কাছ থেকে কোন অর্থ বা সহায়তা পেলে এমন প্রশ্ন উঠতে পারে। তা তো তারা নিচ্ছেন না।’
সমন্বয়করা সরকারী প্রটোকলে সফর করেছেন প্রতিটা জেলায়। সরকার ডিসিদের লিখিত নির্দেশ দিয়ে প্রটোকল দিয়েছে। এটাতো আপনার অজানা থাকার কথা না! এটা নিয়ে অনেক সমালোচনাও হয়েছে। তাহলে, আপনার কথা অনুসারেই একটা কিংস পার্টি হওয়ার পথে। নতুন রাজনৈতিক পরিসর বির্নিমানে তরুণ হিসাবে আপনাকে স্বাগত জানায়। কিন্তু ভাসাভাসা ধারণা আর পুরাতনকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করে বিভ্রান্তকরভাবে নতুন তত্বায়ন বলে ফেরি করলে মানুস প্রথম প্রথম চমৎকৃত হলেও শেষ পর্যন্ত এই চমৎকারিত্ব ধরে রাখা যাবে না বলেই মনে করি।