আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচিতে প্রদর্শিত অস্ত্রের কী হবে?

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রদর্শিত অস্ত্রের কোনো হদিস নেই। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অজুহাতে, মিছিলে শক্তি প্রদর্শন করতে কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি রুখতে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে প্রকাশ্যে শোভা পেত অস্ত্র। লাইসেন্সবিহীন এসব অস্ত্র আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আত্মগোপনে থাকার সাহস জোগাচ্ছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে ইসরাইলের তৈরি সামরিক গান উজিও আছে।

খাকি রঙের কোটি পরা একদল অস্ত্রধারীকে সাথে নিয়ে ঘুরতেন যশোর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মী পরিচয়ে এসব অস্ত্রধারী সমাবেশ, মিছিল কিংবা এলাকা পরিদর্শনে তার সাথেই থাকতেন।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদের সাথে থাকতো অস্ত্রধারী ব্যক্তিগত গানম্যান। শুধু জেলা নেতা না উপজেলা নেতা এমনকি ইউনিয়ন নেতারা থাকতেন অস্ত্র বেষ্টিত।

চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর সাথেও সর্বদা ৪ থেকে ৬ জন অস্ত্রধারী থাকতেন। শার্শার উলাশী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আয়নাল হকের সাথে থাকতেন একাধিক অস্ত্রধারী। এছাড়া রাজপথে কিংবা ক্যাম্পাসে বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন প্রতিহতের নামে রাস্তায় আওয়ামী লীগের ব্যানারে নামতো অস্ত্রধারীদের মিছিল।

শেখ হাসিনা পলায়নের একদিন আগে ৪ আগস্ট বিকেলে যশোর শহরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপই মিছিল বের করে। ছাত্র জনতার প্রতিরোধে মিছিলে যোগ দেওয়া প্রায় সবারই হাতে ছিল অস্ত্র। লাঠিসোঁটা থেকে শুরু করে কুড়াল, পাইপ, হকিস্টিক দেশীয় ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে তারা। মিছিলকারীরা ওই দিন জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেয়।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের পর রাতারাতি অস্ত্রধারী নেতাকর্মীরা অস্ত্রসহ উধাও হয়ে গেছে। বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগ জামানার সকল লাইসেন্স বাতিল করে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর ছিল অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়। লাইসেন্সকৃত না হওয়ায় প্রকাশ্যে প্রদর্শিত ওই সব অস্ত্রের কোনটিই জমা পড়েনি।

শুধু একটি অস্ত্র জমা দিতে না পারার ব্যাখ্যা প্রশাসনকে দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীন চাকলাদার। তিনি ব্যাখ্যায় বলেছেন, ৫ আগস্ট তার বাড়িতে আগুন লাগে। সে সময় লাইসেন্সকৃত পিস্তলটি চুরি হয়ে গেছে।

শহীন চাকলাদার একটি অস্ত্রের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে, সব সময় অস্ত্র পরিবেষ্টিত থাকা সাবেক সংসদ সদস্য নাবিল আহমেদের কোনো অস্ত্রের লাইসেন্স যশোরে নেই। কাজেই জমা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠেনি। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা বিপুল, শাহারুল, ফন্টু, জাহিদ হোসেন মিলন, হাজী সুমন, মিঠু, শিপলু, ম্যানসেল, লিটু, মনসুর, গোলাম মোস্তফা, পান্নু, রাজুসহ অনেকেই সর্বদা অস্ত্র ব্যবহার করতেন এমন তথ্য আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এদের কারো কারো বিরুদ্ধে দলীয় কর্মী খুনের মামলাও রয়েছে।

একাধিক সূত্র বলছে, লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাওয়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে কাটা রাইফেল, পিস্তল, ছক্কা পিস্তল ও ময়ূর পিস্তল, নাইন এমএম পিস্তল ও সিক্স পয়েন্ট ফাইভ এমএম পিস্তল, রিভলভার (পয়েন্ট ৩৮ ও পয়েন্ট ৩২ বোর)। এমনকি আছে ইসরাইলের অত্যাধুনিক সামরিক গান উজি(মেশিন পিস্তল হিসেবে পরিচিত)।

২০২১ সালের মাঝামাঝি প্রকাশিত এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানা যায়, মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে আমদানি করা অবৈধ ১০৯টি উজি পিস্তলের মধ্যে ৫৩জন ব্যবহারকারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তথ্য ও অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২০ সালে রাজধানী থেকে উজি পিস্তল, মাদকসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন মিনাল শরীফ নামের এক ব্যক্তি। যিনি যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সাবেক দেহরক্ষী। সে সময় চাউর হয়েছিল অবৈধ এ অস্ত্রটি দেহরক্ষীর নয় সাবেক সংসদ সদস্যের। গোয়েন্দা ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এই পিস্তল ব্যবহারকারীদের মধ্যে দেশের অন্যান্য স্থানের মত যশোরের কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে।

অবশ্য প্রশাসন বলছে অস্ত্র উদ্ধারে তারা আন্তরিক। অভিযান চলছে। কোনো অবৈধ অস্ত্রধারী পার পাবে না। যশোর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফিরোজ কবির দৈনিক লোকসমাজকে জানিয়েছেন, অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চলমান রয়েছে। অভিযানের ফল পেতে একটু সময় লাগছে।