ভোগান্তির মুখে যশোরের অনেক গ্রাহক অ্যানালগ বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ফিরতে চান

0

আকরামুজ্জামান ॥ নানা ভোগান্তিতে এখন অনেক গ্রাহকই প্রিপেইড থেকে অ্যানালগ বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চান। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নের নামে পতিত আওয়ামী সরকারের আমলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংযোগ দেওয়া হয়েছে প্রিপেইড মিটার। তবে নতুন এই সংযোজন যশোরের গ্রাহকদের সুবিধার চেয়ে বাড়িয়েছে ভোগান্তি। গ্রাহকদের অভিযোগ, ভুতুড়ে বিল, অনুমোদনহীনভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে চার্জ, রিচার্জ করলেও দেখা যাচ্ছে না ব্যালেন্স। এতসব কাণ্ডে তারা অস্থির হয়ে পড়েছেন। এসব কারণে অধিকাংশ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার থেকে ফের অ্যানালগ মিটারে ফিরতে চাচ্ছেন।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) যশোর-১ এর আওতায় ২৩ হাজার ও যশোর-২ এর আওতায় ২৪ হাজার স্মার্ট প্রিপেইড বৈদ্যুতিক মিটার ব্যবহারকারী রয়েছেন। এসব মিটার গ্রাহকের প্রায় সকলেরই অভিযোগ আগের অ্যানালগ মিটারের তুলনায় প্রিপেইড পদ্ধতি মোটেও গ্রাহক বান্ধব নয়। রিচার্জের নামে অতিরিক্ত মিটার চার্জ, ডিমান্ড চার্জ, ভ্যাটসহ আনুষঙ্গিক টাকা কর্তনের ঘটনায় রীতিমত তারা বিরক্ত হচ্ছেন। সাথে বর্তমান ও পূর্বের ব্যালেন্সের সাথে বর্তমান ব্যালেন্স যোগ না হওয়ার বিড়ম্বনাও গ্রাহকদের অতিষ্ঠ করে তুলছে। এর বাইরেও অনেক সময় ভুতুড়ে বিল নিয়ে অনেক গ্রাহককে নাস্তানাবুদ হতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

যশোর শহরের খালধার রোডের পন্ডিত পুকুর এলাকার বাসিন্দা শামীম আকতার বলেন, ডিজিটাল প্রিপেইড মিটার তাদের এখন গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ২০২০ সালে যশোর শহরে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করা হয়। প্রথম দিকে আমরা মনে করেছিলাম এটি খুবই গ্রাহকবান্ধব ব্যবস্থা। কিন্তু এখন দেখছি এটি একেবারেই গ্রাহকের সর্বনাশ করার যন্ত্র।

তিনি বলেন, প্রথমদিকে নতুন মিটার সংযোগ নেওয়ার সময় গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রিপেইড মিটার বাবদ কোন টাকা নেওয়া হয়নি। তবে সে সময়ে এ স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের দাম ধরা হয় ৫ হাজার ৬০০ টাকা, যা প্রতি মাসে গ্রাহকের রিচার্জ করা টাকা থেকে ৪০ টাকা করে কেটে নেওয়া হচ্ছে। তবে দীর্ঘ চার বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও বিদুৎ বিভগের কাছে এ প্রিপেইড মিটারের মূল্য পরিশোধ হয়নি। এখনও প্রতি মাসে মিটার ভাড়া তো দিতেই হচ্ছে, একইসাথে নানান চার্জ দেখিয়ে প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করা ব্যালেন্স অ্যামাউন্ট থেকে কয়েক শ টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। যা রীতিমত দিনে দুপুরে ডাকাতির সামিল বলে তিনি জানান।

শহরের ওয়াপদা এলাকার বাসিন্দা মশিউর রহমান বলেন, আগে অ্যানালগ মিটারে বিল আসলে সেটি মোবাইল ব্যাংকিং বা সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে কত সহজভাবে দিতাম। সেময় মাসে যে বিল আসতো এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ খরচ হচ্ছে। এখন মিটারে মাসে এক হাজার টাকা রিচার্জ করলে টোটাল চার্জ কর্তন করা হয় ১৬৬ দশমিক ৪৫ টাকা, মাসিক মিটার ভাড়া বাবদ কর্তন করা হয় ৪০ টাকা, ডিমান্ড চার্জ বাবদ কর্তন করা হয় ৮৪ টাকা, ভ্যাট কর্তন করা হয়। সব চার্জ কেটে গ্রাহকের প্রিপেইড মিটারে ব্যালেন্স এসে দাঁড়ায় ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি এক হাজার টাকা রিচার্জে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়। এর পরও কেনো জানি টাকা রিচার্জ করার পর হু হু করে রিচার্জ শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

একই এলাকার মুদি ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি ঝামেলামুক্ত থাকতে অ্যানালগ পদ্ধতিতে ফিরে যেতে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলেও কোনো সমাধান হচ্ছে না। এ বিষয়ে দুই মাস আগে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হচ্ছে এখন আর আগের পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।

তবে গ্রাহকদের এসব অভিযোগের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন ওজোপাডিকো যশোর-১ এর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, আগের নিয়মের ক্ষেত্রে এখন শুধুমাত্র আমরা মিটার চার্জ ৪০ টাকা করে নিচ্ছি। বাদ বাকি ভ্যাট ও ডিমান্ড চার্জ আগের অ্যানালগ পদ্ধতিতে ছিলো সেটি এখানেও প্রযোজ্য হচ্ছে। অথচ গ্রাহকরা এসব নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করে আসছেন।

তিনি বলেন, গ্রাহকরা ইচ্ছা করলে এখন আর প্রিপেইড থেকে অ্যানালগ মিটারে ফিরতে পারবে না। এটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। তবে উচ্চ আদালতে গ্রাহকদের এ সংক্রান্ত একটি রিটের প্রেক্ষিতে সরকার পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা চলছে বলে তিনি জানান।