যশোর পৌর হেরিটেজ মার্কেট বরাদ্দে অনিয়ম তদন্তের দাবি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর পৌরসভার হেরিটেজ মার্কেটের দোকান বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্তের দাবি তুলছেন নাগরিকরা। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সদ্য অপসারিত পৌর মেয়র হায়দার গনি খান পলাশের বিরুদ্ধে দোকান ঘর বরাদ্দ নিয়ে বড় ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার আসার পর পৌরসভায় নতুন প্রশাসক নিয়োগ হওয়ায় এ বিষয়ে নাগরিকদের দাবি জোরালো হচ্ছে। তবে পৌর প্রশাসক বলছেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২০১৮ সালে এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে পৌরসভার হেরিটেজ মার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় হয় ২০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। মার্কেটটিতে ১০০ বর্গফুট থেকে ১৪০ বর্গফুট আয়তনের ৭৩টি দোকান রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে ৭৩ টি দোকানের মধ্যে পর্যায়ে ৬০ টি দোকান টেন্ডারের মাধ্যমে বরাদ্দের কথা বলা হলেও সে সময়ে মেয়র ও তার কাউন্সিলররা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে দোকান ঘর বরাদ্দ দেন।
একই অবস্থাও ছিলো দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্ষেত্রে। ১৩ টি দোকান পৌর মেয়রসহ ১২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারার কাজ সম্পন্ন করা হয়। অভিযোগ ওঠে এই অবৈধ ভাগবাটোয়ারাকে বৈধতা দিতে সে সময়ে কথিত লটারির আয়োজন করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, দোকান ঘর বরাদ্দে প্রথম পর্যায়ে মার্কেটের ৬০ টি দোকান বরাদ্দের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। সিডিউলের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার টাকা। টেন্ডারের ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত দিনে টেন্ডার বক্স ওপেন করে তা প্রকাশ্যে লটারির মাধ্যমে আবেদনকারীদের মধ্যে বণ্টন করার নিয়ম থাকলেও পৌরমেয়র তা তার ইচ্ছামাফিক লটারির দিন ধার্য করে দোকান ঘর বণ্টনের কাজ শেষ করেন।
অভিযোগে আরও জানা যায়, পৌরমেয়র হায়দার গনি খান পলাশ প্রথম পর্বের টেন্ডারের ঘর বরাদ্দ শেষ না করতেই গোপনে দ্বিতীয় পর্বের ১৩টি দোকানের টেন্ডার ও সিডিউল বিক্রি শুরু করেন। এমনকি দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৩ টি দোকান বরাদ্দের কতগুলো সিডিউল বিক্রি হয়েছে বা হয়নি তাও গোপন রাখা হয়। যা নিয়ে সে সময়ে প্রশ্ন উঠলেও ভয়ে কেউ এ বিষয়ে টু-শব্দটিও পর্যন্ত করেনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই সময়ে যশোরের দুটি অখ্যাত পত্রিকায় দ্বিতীয় পর্বের ১৩ টি দোকানের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও ওই দিনের পত্রিকা বাজারে আসতে না দিয়ে তা গোপন রাখা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার একজন কর্মকর্তা বলেন ওই টেন্ডার কমিটির সভাপতি ছিলেন পৌর মেয়র হায়দার গনি খান পলাশ। এছাড়া সদস্য সচিব ছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পৌরসভার প্রধাননির্বাহি কর্মকর্তা নাবিদ হোসেন ও সদস্য ছিলেন জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর কবির সুমন ও পৌরসভার নির্বাহি প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান। এই ৫ সদস্যের মধ্যে অধিকাংশ সদস্যই জানতেন না ১৩ টি দোকান বরাদ্দের বিজ্ঞপ্তি কোন দিন প্রকাশ করা হয়েছে।
এমন জালিয়াতির মাধ্যমে পরবর্তীতে মেয়র ও তার কয়েকজন কাউন্সিলর মিলে ওই ১৩ টি দোকান ইচ্ছামতো বণ্টন করে নেন। এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে কাউন্সিলরদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখেন ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর হোসেন সুমন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোকসিমুল বারী অপুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৌর হেরিটেজ মার্কেটের দোকান ঘর বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে বলে আমার জানা নেই। শিডিউল অনুযায়ী প্রকাশ্যে লটারি করে এসব দোকান ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। তখন কেউ এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়নি।
এ বিষয়ে যশোর পৌর নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব জিল্লুর ভিটু বলেন, হেরিটেজ মার্কেট বরাদ্দে কী পরিমান অনিয়ম হয়েছে সেটি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো না। তবে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে জানি। তিনি বলেন, পৌরসভার খাতে অনিয়ম হয়েছে। শুধু হেরিটেজ মার্কেট নয়, প্রতিটি খাতের দুর্নীতির তদন্ত চাই। এসব অনিয়ম দুর্নীতির তদন্তের দাবিতে তারা সোচ্চার আছেন বলে জানান।
বিষয়টি নিয়ে পৌর প্রশাসক মো. রফিকুল হাসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমার কাছে এ ধরনের কোনো খবর নেই। তবে কেউ যদি এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেয় তাহলে সেটি তদন্ত করে সত্য প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে সাবেক মেয়র হায়দার গনি খান পলাশের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।