শৈলকুপায় এক মূর্তিমান আতংকের নাম মফিজ চেয়ারম্যান

0

স্টাফ রিপোর্ট, ঝিনাইদহ॥ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নজুড়ে দখলবাজি কায়েম করে এক আতংকের জনপদ সৃষ্টি করেন ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছর ওই ইউনিয়নে মফিজ ২৭টি গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তার অত্যাচার আর নির্যাতনের ক্ষতচিহ্ন ইউনিয়নের মানুষ এখনো বয়ে বেড়াচ্ছেন। মফিজ মানেই যেন এক মূর্তিমান আতংক। হাসিনা সরকারের পতন হলেও মফিজ চেয়ারম্যানের নাম মুখে নিতে এখনো সবাই ভয় পান। তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্য ভাতিজা আসলাম, আলামিন, মিল্টন, শুকুর আলী, নাসিম, আলম ও মেহেদী এখনো গ্রামে গ্রামে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এলাকার অনেক মানুষ মফিজের অত্যাচার -নির্যাতনে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সরেজমিনে ইউনিয়ন ঘুরে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাসের চাঁদাবাজি ও দখলদারির ভয়াবহ চিত্র চোখে পড়ে।
ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মসলেম উদ্দীন জানান, তিনি ১৬ বছর বাড়ি যেতে পারেননি। তিনি ঝিনাইদহ শহরে বসবাস করেন। গ্রামে বসবাসরত তার স্বজনরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাদের জমি দখল করেছেন চেয়ারম্যান মফিজ। রঘুনন্দনপুর গ্রামের খায়রুল হোসেন মোল্লার ৩৫ বিঘা জমির ইটভাটা দখল করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস। এরআগে তাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। এখনও তিনি কারাগারে বন্দি। শুধু ইটভাটা দখল করেই ক্ষ্যান্ত হননি তিনি। গ্রামের মানুষের চাষের ২২ বিঘা জমি দখল করে বালি উত্তোলন করে রীতিমত নদী বানিয়ে ফেলেছেন। ১৬ বছর ধরে ওই জমির মালিকরা চাষতো দূরের কথা, জমির ধারে কাছেও যেতে পারেননি।
রঘুনন্দনপুর গ্রামের নগেন চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে শৈলেন কুমার অভিযোগ করেন, তার ১০ কাঠা জমি ছিল। সেটি জোর করে দখল করে বালি উত্তোলন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস। সেই ১০ কাঠা জমি এখন ৬০ ফুট গর্ত। একই গ্রামের লুৎফর বিশ্বাসের ছেলে নাজমুলের চার বিঘা, মসিউর রহমানের ছেলে মনোয়ারের ১৫ কাঠা, বিশারত আলীর ছেলে গোলাম সরোয়ারের ২২ শতক, ইদ্রিস আলীর ছেলে মিলনের ১৫ শতক, ইরাদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলীর ১২ শতকসহ প্রায় ২৮ জন কৃষকের ২২ বিঘা জমি দখল করে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, শৈলকুপা থানা পুলিশের সহায়তায় ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস এই দখলবাজি করে গেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি। রঘুনন্দনপুর গ্রামের আবুল কাসেম অভিযোগ করেন, ২০২১ সালে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাসের ভাতিজা আসলাম তার ৭০ মণ শুকনো হলুদ জোর করে নিয়ে যান। ওই হলুদের দাম ৭ লাখ টাকা।
গ্রামের মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি হতদরিদ্র মানুষ। অথচ ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস তার লোকজন দিয়ে ৮টি ছাগল ও একটি গরু নিয়ে ভুরিভোজ করেন। নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের ২৭টি গ্রাম জুড়ে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। বিচার-শালিস ও তালাক বিয়ের নামেও তিনি উভয়পক্ষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ।
রঘুনন্দনপুর গ্রামের মিরা বেগম ও মজনু মিয়ার তালাক ও বিয়ের বিচার করার নামে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস। মফিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আব্দুল হাইয়ের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাসের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সরকার পতনের পর তিনি পালিয়ে আছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়।
শৈলকুপা থানার ওসি সফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তার বিরুদ্ধে থানায় কোন অভিযোগ নেই। তবে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।