প্রধানমন্ত্রী ও আ.লীগের আলোচনার প্রস্তাবে রাজি নন আন্দোলনকারীরা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা।শনিবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে নাহিদ ইসলাম তার ফেইসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “খুনি সরকারের কাছে বিচার চাওয়া বা সংলাপে বসারও সুযোগ আর নেই। ক্ষমা চাওয়ার সময়ও পার হয়ে গেছে। যখন সময় ছিল তখন সরকার ব্লক রেইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করেছে, নির্যাতন করেছে। আখতার হোসেন, আরিফ সোহেলসহ রাজবন্দিদের কারাগারে রেখে আমরা কোনো ধরনের সমঝোতায় যাব না।”
এর আগে সকালে সকালে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সেখানে তিনি বলেন, “গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।”
তিনি বলেছেন, “কখনোই আমি দরজা বন্ধ করিনি। গণভবনের দরজা খোলা, যখনই আন্দোলনকারীরা বসতে চায়- আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা যদি আসতে চায়, যেকোনো সময় আসতে চায়- আমি রাজি আছি, আলোচনা করতে পারে। দরকার হলে অভিবাবকদেরও নিয়ে আসতে পারে।”
আন্দোলনের মধ্যে ঘটা সহিংসতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিচার বিভাগীয় যে তদন্ত কমিটি আমি করেছিলাম, আমি কিন্তু কারও দাবির অপেক্ষা করিনি। আমি চাই, যারাই এর সঙ্গে জড়িত- সে যেই হোক, সে পুলিশই হোক বা অন্য যে কেউই হোক, অস্ত্রধারী হোক বা যে কেউই হোক; আমি চাই সকলেরই তদন্ত হোক বিচার হোক।
“এই যে জ্বালাও-পোড়াও, শুধু ঢাকা না- যে সমস্ত জায়গায় এই ধংসাত্মক কর্মকান্ড হয়েছে- এর তদন্ত করে যথাযথ বিচার হবে। তার জন্য যে দুজন জুডিশিয়াল নিয়োগ দিয়েছিলাম, তার সাথে আরও একজন- তিনজন সদস্য করে তাদের কর্ম পরিধিটাও বাড়ালাম, সময়টাও বৃদ্ধি করে দিলাম; যাতে যথাযথভাবে এর তদন্ত হয়।”
সরকারপ্রধান বলেন, “আমি চাই, এ ধরনের অন্যায়, হত্যাকান্ড যারা ঘটায় তারা তো আমার দেশের নাগরিক; সে পুলিশ হোক- শিশু হোক, ডাকাত হোক, ছাত্র হোক- এর তদন্ত হয়ে যথাযথ বিচার হবে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের বিচার হবে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “যারা অস্ত্রধারী, যেমন রংপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে, যে পুলিশ দায়ী- সেই পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে এবং তার বিচার হবে। ইতোমধ্যে রংপুরের পুলিশকে সাসপেন্ড করে দিয়েছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “অ্যারেস্ট যাদের করা হয়েছে, তাদের মধ্যে পরীক্ষার্থী যারা ছিল- তাদের সবাইকে জামিন দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
“আমি এটাও নির্দেশ দিয়েছি- এদের মধ্যে নিরীহ ছাত্র- যারা যারা একেবারে খুনের সাথে জড়িত না, বা ধ্বংসাত্মক কাজের সাথে জড়িত না; তাদেরকে মুক্তি দেওয়া শুরু হবে, ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। যারা যারা চিহ্নিত দোষী তারা থাকবে, বাকিরা যাতে মুক্তি পায়, সে ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি।”
এর প্রতিক্রিয়ায় নাহিদ ইসলাম তার ফেইসবুক আইডিতে লেখেন, “১৯ জুলাই আমরা কারফিউ ভঙ্গ করে শাটডাউন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলাম। “আমাদের সে বক্তব্য কোনো মিডিয়ায় প্রচার করতে দেওয়া হয় নাই। সে রাতে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম অত্যাচার করা হয় এ ঘোষণার জন্য এবং আন্দোলন প্রত্যাহার ও সরকারের সাথে আলোচনায় বসার জন্য জবরদস্তি করা হয়।
“ছাত্রজনতা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিল৷ সরকার দমন-পীড়ন করে সেটিকে সংঘাত ও সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ করে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এবার এরকম পরিস্থিতি হলে কারো জন্যই পরিণতি ভালো হবে না।”
ডিবি কার্যালয় থেকে তাদের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, “আমাদের অনশন ও রাজপথে আন্দোলনের কারণে সে পরিকল্পনা সফল হয়নি।
তিনি বলেন, “আমরা এখনো শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখতে চাই। আমরা কোনো সহিংসতা, প্রতিহিংসা ও প্রাণনাশ চাই না৷ নিরাপত্তা বাহিনীকেও এরজন্য সহযোগিতা করতে হবে। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের রাজপথে দেখা গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এর দায়ভার নিতে হবে। তবে রক্ত ঝরলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। আমরা ন্যায়বিচার ও জীবনের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। কোনো ধরনের দমন-পীড়ন, প্রোপাগান্ডা ও ষড়যন্ত্র করে এ আন্দোলন থামানো যাবে না।”
আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদও ফোইসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেনন, “খুনি সরকারের সাথেই কোনো প্রকার সংলাপে বসতে আমরা রাজি নই, সেখানে রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাথে আলোচনার প্রশ্নই উঠে না।
“তাদের সাথে আলোচনার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমাদের দাবি অত্যন্ত সুস্পষ্ট, তাদের কোনো বক্তব্য থাকলে দেশবাসীর সামনেই মিডিয়া মারফত তা রাখতে পারেন। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সিদ্ধান্তই আমাদের সিদ্ধান্ত। গুলি আর সন্ত্রাসের সাথে কোনো সংলাপ হয় না।”
আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, “যখন আমরা ডিবি অফিসে বন্দি ছিলাম তখনই প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে আন্দোলন স্থগিত করতে বলা হয়। এমনকি জোর করে গণভবনে নিয়া যাওয়ার পরিকল্পনাও চলছিল। এই প্রস্তাবের প্রতিবাদে ও মুক্তির দাবিতে আমরা অনশনে বসেছিলাম।
“আপোষহীনতার মূল্য যদি মৃত্যুও হয় তাও পরিশোধ করতে প্রস্তুত আছি। ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণ আহ্বান করছি।”
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোটের নেতারা। আলোচনার জন্য আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আলোচনায় থাকতে ১৪-দলীয় নেতাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
অবশ্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘এখন আর আলোচনার সুযোগ নেই। সিদ্ধান্ত আসবে রাজপথ থেকে।’
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, দলের পক্ষ থেকে তিনজনকে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম ও মাহবুব উল আলম হানিফ।
জানতে চাইলে মাহবুব উল আলম হানিফ গণমাধ্যমে বলেন, সমন্বয়কদের সঙ্গে তাঁদের এখনো যোগাযোগ হয়নি। যোগাযোগ করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার সরকারের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন। আজ বেলা দুইটার দিকে তিনি গণমাধ্যমে বলেন, নির্মম হত্যাকা-ের বিচার, দায়ীদের পদত্যাগ ও আটক এবং গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তিসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন চলমান আছে। কারও সঙ্গে আলোচনা নয়, সিদ্ধান্ত আসবে রাজপথ থেকে।
তিনি বলেন, তারা আপসহীন থাকবেন। এ জন্য যেকোনো মূল্য পরিশোধে রাজি।
[সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও প্রথম আলো]