বাগেরহাট ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসকের ৫৬টি পদের মধ্যে ৩০টি শূন্য

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা ॥ অর্ধেকেরও কম চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে চলছে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল। সার্জারি, চক্ষু ও অ্যানেসথেশিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি পদের ৮টি চিকিৎসকের পদই শূন্য। ফলে রোগীদের যেতে হয় খুলনা ও রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার চিকিৎসা কেন্দ্রে। চিকিৎসক সংকটের কারণে কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হয় না বলে স্বীকার করলেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক।
১৯৭০ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় হাসপাতালটির। ১৯৯৭ সালে ১০০ শয্যায় এবং ২০২২ সালের মে মাসে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল বাড়েনি। সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার, চিকিৎসকের কক্ষ, ওষুধ সরবরাহ কেন্দ্রের সবখানেই রোগীর উপচেপড়া ভিড়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। ভর্তি রোগীদের অভিযোগ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াও ওষুধপত্র বাইরে থেকে কিনতে হয়। চিকিৎসক না থাকায় প্রতিদিনিই দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের ফিরে যেতে হয়। দেখা যায়, কনসালটেন্ট চক্ষু, অ্যানেসথেশিয়া, সার্জারি, কার্ডিওলজির মতো গুরত্বপূর্ণ পদে কেউ নেই। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে অর্ধেকের কম চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে চলছে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালটি। অথচ জেলার প্রধান এ হাসপাতালে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৯০০ থেকে ১ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। ২৫০ শয্যার বিপরীতে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন পর্যন্ত ভর্তি থাকে নিয়মিত। বিপুল সংখ্যক রোগীর জন্যে ৫৬টি চিকিৎসকের পদ বরাদ্দ থাকলেও ৩০টি রয়েছে শূন্য। এছাড়া নার্সের ৯৮টি পদের মধ্যে ২৮টি পদ শূন্য এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭টি পদের মধ্যে ৪৪টি পদ শূন্য। শুধু জনবল সংকট নয়, প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকটও রয়েছে এই হাসপাতালে। প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে রোগীরা যাচ্ছেন খুলনা-ঢাকার বিভিন্ন বড় হাসপাতালে। হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসাধীন রোগীর বোন ফাতেমা বলেন, ওষুধ তো দূরে থাক, একটা ক্যানোলা পর্যন্ত কিনতে হয়। গরিব মানুষ কোথায় যাব বুঝতে পারছি না। মানসম্মত পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো বালাই নেই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন সাজ্জাদ হোসেন বলেন, হাসপাতালের টয়লেটগুলোও এত
নোংরা যে ব্যবহার করা খুবই কষ্টকর। টয়লেট ব্যবহারে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যায়। বাদোখালী গ্রাম থেকে আসা নান্নু বলেন, ৫দিন আগে আব্বাকে এখানে ভর্তি করেছিলাম। এখনও সুস্থ হননি। চিকিৎসক বলছেন সব পরীক্ষা নেই। খুলনায় নিয়ে যান। তাই বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। টাকার ব্যবস্থা করতে পারলে খুলনায় নিয়ে যাব। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সামান্য জটিলতায় রোগীদের স্থানান্তর করা হয় খুলনা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে। এছাড়া এমআরআই, সিটিস্ক্যান, ইকো, সিরাম ইলেক্ট্রোলাইটসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে
বেসরকারি ডায়গনস্টিক সেন্টারে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হয় তাদের। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স ফারজানা খাতুন বলেন, চিকিৎসক ও সেবিকা সংকটে আমরা রোগীদের ভালো সেবা দিতে পারি না। এসব সংকটের মধ্যে রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সাদিয়া তাসনিম মুনমুন বলেন, সামান্য জনবল নিয়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগীর স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।প্রতিদিন ২৫০ শয্যার পরিবর্তে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন রোগী ভর্তি থাকে। আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসক সংকটের কারণে আশানুরূপ সেবা দিতে পারি না। তবে ওষুধ শেষ হয়ে গেলে পরবর্তীতে আসতে একটু সময় লাগে। এ কারণে ওই সময় কিছু ওষুধের সংকট থাকে। সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানান হাসপাতালের এই আবাসিক মেডিকেল অফিসার। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, হাসপাতালের ৫৮টি প্রথম শ্রেণির পদের মধ্যে ৩৩টি পদই শূন্য রয়েছে। এছাড়া অন্য পদেও চরম জনবল সংকট রয়েছে। প্যাথলজিক্যাল অনেক যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে। রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপরও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। চিকিৎসক সংকট ও জনবলের বিষয়টি বারবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। জনবল নিয়োগ হলে আশা করি খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।