এক দশকের বেশি সময় ভোগান্তি শিশুদের সামান্য বৃষ্টিতেই বিদ্যালয়ে জমে হাঁটু পানি

0

 

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ কোমলমতি শিশুরা বিদ্যালয়ে এসে খেলাধুলা, ছুটাছুটি করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু না, তারা বিদ্যালয়ে এসে অনেক কষ্টে ক্লাস রুমে ঢোকে আর ছুটির পর বের হয়। খেলার মাঠে অল্প বৃষ্টিতেই জমে হাঁটু পানি, এই পানি পাড়ি দিয়ে তাদের যেতে হয় ক্লাসে। অভিভাবক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী বিদ্যালয়টির দিকে সুনজর দিতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলা সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম আড়শিংড়িপুকুরিয়া। যে গ্রামটি সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ভারতের সীমান্ত আলোয় আলোকিত হয়ে যায়। অবহেলিত গ্রামটির শিশুদের শিক্ষাদানের লক্ষ্যে ৩৩ শতাংশ জমির ওপর ১৯৫৮ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা। যার নামকরণ করা হয় আড়শিংড়িপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার সময়ে এর পাশে তেমন কিছুই ছিল না। কিন্তু সময়ের সাথে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে, বিদ্যালয়ের পাশে হয়েছে সড়ক, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনেক কিছু। যার ফলে স্কুল মাঠ হয়ে গেছে নিচু। সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে জমছে হাঁটু পানি। নোংরা এই পানি পাড়ি দিয়ে শিশুরা যাচ্ছে ক্লাসে আর শিক্ষকরা ইট বিছিয়ে তার ওপর ডিঙি দিয়ে যান ক্লাস আর অফিস রুমে। একদিন, এক মাস বা এক বছর না, এক দশকের বেশি সময় ধরে এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু জনপ্রতিনিধি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আজও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি অভিযোগ এলাকাবাসীর।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠে থৈ থৈ করছে পানি।
স্কুলের পাশেই অবস্থান করা হাসিবুর রহমান, জয়, মেহেদী হাসানসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয়। তারা বলেন, স্কুলের মাঠে পানি জমে থাকায় আমাদের খুব কষ্ট করে ক্লাসে ঢুকতে হয়, পারি না একটু খেলাধুলা করতে। অভিভাবক জাহাঙ্গীর আলম, শাফি খাতুন বলেন, এটি একটি স্কুল বলা চলে না। এর নেই কোনো প্রাচীর, মাঠে জমে থাকা হাঁটু পানি, বাথরুমের সমস্য তো আছেই, নেই টিউবওয়েল। তারপরও বাচ্চাদের এখানে পাঠাতে হয় কারণ তেমন কোনো স্কুল নেই। সমস্যায় জর্জরিত স্কুলটির দিকে সকলের সুনজর দেওয়া জরুরি।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নজিবর রহমান বলেন, স্কুলমাঠে মাটি ফেলা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছেলে মেয়েরা খুব কষ্ট করে এখানে লেখাপড়া করছে। পরিষদে তেমন কোনো অনুদান নেই, তারপরও বিষয়টি নিয়ে আমি পরিষদে আলোচনা করবো।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, কষ্টের কথা বলে শেষ করা যাবে না। নানা সমস্যায় জর্জিত আমার বিদ্যালয়। আমি ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান এবং শিক্ষা অফিসকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি কিন্তু আজও কোনো প্রতিকার পাইনি। অল্প কিছু টাকা খরচ হলে সেটি নিজের অর্থে করা যেত কিন্তু দরকার অনেক টাকা যা ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব না।
স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মুক্তাদির রহমান সোহেল বলেন, বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সকলেই উদ্বিগ্ন। সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্কুলটির সমস্যার কথা বেশ আগেই জেনেছি। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি, অর্থ ছাড় হলেই সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।