এলো মধু মাস জ্যৈষ্ঠ. তবে আকাশ ছোঁয়া লিচুর দাম

0

 

আকরামুজ্জামান॥ মধুমাস শুরুর আগেই যশোরের বাজারগুলোতে রসালো ফল লিচুর সরবরাহ বেড়েছে। এ বছর প্রচন্ড দাবদাহ ও টানা খরার কারণে লিচুর আকার যেমন ছোট হয়েছে ঠিক তেমন ফলন কম হয়েছে। তবে বাজারে এর চাহিদা বেশি থাকায় তুলনামূলকভাবে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতা ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
যশোর শহরের পুরাতন বাস টার্মিনাল সংলগ্ন মনিহার মোড়ের ফলপট্টিতে দেশের দক্ষিণের সর্ববৃহৎ লিচুর মোকাম। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের পরপরই এই মোকামে লিচুসহ বিভিন্ন দেশীয় ফলের বেচাকেনা বেড়ে যায়। তবে এ বছর মধুমাস আসার আগেই লিচু বেচাকেনায় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে সরগরম হয়ে ওঠে মোকামটি। প্রতিদিন এই মোকাম থেকে পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ীদের হাত ধরে কোটি কোটি টাকার লিচু রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যাচ্ছে। তবে বাজারে আসা খুচরো ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অন্যান্য বছরে লিচুর আকৃতি বড় হলেও এ বছর তা অপেক্ষাকৃত সাইজে ছোট। পাশাপাশি দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের।
বুধবার সকালে মনিহার এলাকার ফলপট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, মোকামটিতে লিচু বেচাকেনায় ধুম পড়েছে। পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ীদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে সেখানে। গত বছর যে লিচু দেড় থেকে দুই হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে সেই লিচু এবার ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। তারপর আকৃতিতেও ছোট।
বাজারে কথা শাহিন রেজা ও রিপন হোসেন নামে দুই খুচরো ব্যবসায়ীর সাথে। তারা জানান, এ বছর পাইকারি বাজারে লিচুর যে দাম তাতে আমরা ব্যবসা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। পাইকারি বাজার থেকে চড়া দামে লিচু কিনে দোকানে বিক্রি করতে গিয়ে খরিদ্দারের সাথে ভুল বোঝাবুঝি চলছে। তারপর অধিকাংশ লিচুতে পোকা থাকার কারণেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
বনি আমিন নামে আরেক খুচরো ব্যবসায়ী বলেন, পাইকারি পর্যায়ে প্রতি হাজার ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ৫শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মোজাফফার জাতের লিচু প্রতি হাজার ৪ হাজার থেকে শুরু কওে ৫ হাজার ৫শ টাকা, দেশি জাতের লিচু ১৫শ থেকে শুরু করে ২৫শ টাকায় হাজার বিক্রি হচ্ছে। বোম্বাই জাতের লিচু সামান্য আসলেও তাও ১৫শ থেকে শুরু করে ৪ হাজার টাকা প্রতি হাজারে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, বৈরী আবহাওয়াকে পুঁজি করে পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে লিচুর বাজার অস্থির করে তুলছে। অথচ এসব লিচু গত বছরে ১ হাজার থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকার মধ্যে প্রতি হাজার বিক্রি হয়।
তবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি চলতি মৌসুমে তীব্র দাবদাহ ও টানা খরতাপের কারণে লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। এসব কারণে চাষি পর্যায় থেকে বেশি দামে লিচু কিনে আনায় পাইকারি বাজারেও দামও বেশি হচ্ছে। সামনে বোম্বাই জাতের লিচু সরবরাহ বাড়লে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে জানান পাইকাররা।
কথা হয় আবু বকর নামে এক পাইকারি ব্যবসায়ীর সাথে। তিনি বলেন, এপ্রিল মাসজুড়ে দেশের ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। তার জন্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৌসুমী ফলের । যশোরের বাজারে এই মুহূর্তে অন্যান্য বছরে লিচুর সরবরাহ কয়েকগুণ থাকলেও এবার তার অর্ধেকও নেই। অধিকাংশ লিচু খরায় পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে। তবে বাজারে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বেশি হচ্ছে। তিনি বলেন, সামনে বোম্বাই জাতের লিচুর সরবরাহ বেড়ে গেলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, চলতি মৌসুমে যশোরে ৬৫৬ হেক্টর লিচুর আবাদ হয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনে কিছুটা সমস্যা হয়। যারা লিচু বাগানে নিবিড় পরিচর্যা ও সেচের ব্যবস্থা করেছিলেন তাদের গাছে লিচু রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। তবে বাজারে লিচুর দাম বেশি হওয়ায় কৃষক পর্যায়ে বেশ লাভবান হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।