ঝিনাইদহে প্রাথমিকে অনলাইনে বদলি জালিয়াতির আভিযোগ

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইনে বদলি নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বদলিচ্ছু শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে। পেশায় জুনিয়র এক শিক্ষা কর্মকর্তার স্ত্রীকে বদলির সুযোগ করে দিতে অন্য শিক্ষকদের আইডি থেকে গুরুত্বপূর্ণতথ্য মুছে দিয়ে ভুল তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ফলে জেলার অন্তত ১৩জন জেষ্ঠ্য শিক্ষকের বদলি আবেদন বাতিল হয়ে গেছে। এদিকে অনলাইনে আবেদন বাতিল হওয়া বদলিচ্ছু শিক্ষকরা এ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষকদের বদলির সার্ভার খুলে দেওয়ার পর জেলার ৬৮৮টি শূন্য পদের বিপরীতে ৩৭৮ জন শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করেন। এরমধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সুরাট ও মাওলানাবাদ ক্লাস্টারে জালিয়াতির তথ্য ফাঁস হয়ে পড়ে। মাওলানাবাদ ক্লাস্টারে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি করেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এটিইও শাহজাহান রিজুর স্ত্রী সুরাইয়া পারভিন। তাকে ঝিনাইদহ শহরে বদলি করে আনার জন্য একাধিক সিনিয়র শিক্ষকদের অনলাইনে বদলির আবেদন ঢালাওভাবে বাতিল করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, অনলাইনে বদলির সরকারি সার্ভার উন্মুক্ত হওয়ার ১৫ দিন আগে এটিইও রিজুর স্ত্রী সুরাইয়া পরভিনের আসল তথ্য তার আইডি থেকে ডিলিট করে মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়, যাতে তার স্কোর বৃদ্ধি পায়। অভিযোগ আছে এই কাজটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার খালেকুজ্জামানের পরামর্শে করেন পূর্ব তেঁতুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান। তিনি নিজেও সুরাট ক্লাস্টার থেকে অনলাইন জালিয়াতির মাধ্যমে বদলি হয়ে ঝিনাইদহ শহরে এসেছেন।
একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, শিক্ষক তৌহিদুজ্জামানের কাছেই মূলত সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের আইডি থাকে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে তৌহিদুজ্জামান উপজেলা শিক্ষা অফিসেই পড়ে থাকেন। শিক্ষা অফিসারদের দাপ্তরিক কাজ তিনিই করে থাকেন। এক্ষেত্রে তাকে স্কুলে যেতে হয় না বলেও অভিযোগ। এই তৌহিদুজ্জামান বিভিন্ন প্রধান শিক্ষকের আইডিতে প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ডিলিট করে দিয়ে টাকা দাবি করে থাকেন বলে কথিত আছে।
অভিযোগ আছে শিক্ষা কর্মকর্তার স্ত্রী সুরাইয়ার আইডিতে স্কুলের দূরত্ব ছিল ১৩ কিলোমিটার। কিন্তু অনলাইনে বদলির আবেদনের সময় সেখানে দেখানো হয় ২৭ কিলোমিটার। সেশন স্কোর বাড়ানোর জন্য প্রকৃত তথ্য গোপন করা হয়। সুরাইয়া পারভিনের আইডিতে পূর্ববর্তী কর্মস্থল ছিল বাকড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু স্কোর বৃদ্ধির জন্য আগের কর্মস্থলের তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়। এতে তিনি ২৫ এর মধ্যে ২৫ পেয়ে নজির সৃষ্টি করেন।
সুরাট ক্লাস্টারের একাধিক প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, তাদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। পূর্ব তেঁতুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান এসব কাজ করে থাকেন বলে অভিযোগ। তার কাছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার খালেকুজ্জামানের আইডি ও পাসওয়ার্ড থাকার কারণে শিক্ষকদের হয়রানি করেন হরহামেশা।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের টিইও শাহাজান রিজু বলেন, তার স্ত্রীকে যথাযথ আইন মান্য করেই বদলির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। অনলাইন জালিয়াতির যে তথ্য অন্যান্য শিক্ষকরা করছেন তা সত্য নয় বলে তিনি জানান। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা, জানান এ বিষয়ে তিনজন শিক্ষকের আবেদন পেয়েছি। আমি যাচাই বাছাইয়ের জন্য উপজেলায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে মতামত আসার পরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক মসলেম উদ্দীন বলেন, ভুয়া ও জালিয়াতি তথ্য দিয়ে স্কোর বাড়ানোর কথা আমি শুনেছি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার অনুমোদন গ্রহণের আগেই অনেক শিক্ষক বদলির মেসেজ পেয়ে যান কি ভাবে তাই আমি বুঝতে পারি না। তিনি বলেন ঝিনাইদহের বদলি নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ আমি পেয়েছি। বিষয়গুলো সুক্ষভাবে দেখা হচ্ছে। কেউ যদি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তার বদলির আদেশ বাতিল করা হবে বলেও তিনি জানান।