একাধিক নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়ের আভাস বোরো ধানে ভাল ফলনের আশার মাঝেও দুশ্চিন্তা

0

আকরামুজ্জামান ॥ বোরো ধান আবাদের ভালো ফলনের আশা করলেও ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কায় আছেন যশোরের চাষিরা। চলতি মাসে নিম্নচাপ ও লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে ঝড় ও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অফিস ঝড় ও বৃষ্টির পূর্বাভাস এমন সময় দিচ্ছে যখন যশোরের বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে বোরো ধানের শীষ গজাচ্ছে। এমন মুহূর্তে ঝড় ও বৃষ্টি হলে নিশ্চিত বোরো আবাদ ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ ও চাষিরা ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৬০ হাজার ৫শ হেক্টর। ইতিমধ্যে সেটি অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৮৫ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। বোরো ধান রোপন থেকে শুরু করে অদ্যাবধি আবহাওয়া অনেকটা অনুকূলে থাকায় ধানের ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে অধিকাংশ ধানের শীষ বের হতে শুরু করেছে। সামনে ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই এসব ধানের শীষ পূর্ণাঙ্গ রূপ নেবে বলে চাষিরা জানিয়েছেন।
তবে এরই মধ্যে চাষিদের মধ্যে ভর করেছে ঝড় ও বৃষ্টির শঙ্কা। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে ১টি নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে।
এছাড়া এ মাসে ১-২টি তীব্র তাপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে এ মাসে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, এ মাসে দেশে ৫-৭ দিন বিক্ষিপ্তভাবে শিলাসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হালকা অথবা মাঝারি ধরনের ঝড় হতে পারে। ১-৩ তীব্র কালবৈশাখি ঝড় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলেও পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, চলতি এপিল মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে ১টি নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণিঝড় রূপ নিতে পারে। এর ফলে বোরো আবাদ নিশ্চিত হুমকির মুখে পড়বে সেটি প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, আবহাওয়া অফিস থেকে চলতি মাসের পূর্বাভাসে যে তথ্য দেয়া তা নিয়ে আমরাও চিন্তিত। তিনি বলেন, এবছর যশোরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আবাদ হয়েছে। জেলার ৮টি উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে ফসলের যে চিত্র তাতে আমরা আশা করছি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসলে নিকট-অতীত যেকোনো সময়ের চেয়ে রেকর্ড ধানের উৎপাদন হবে যশোরে।
তিনি বলেন, আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ধানকাটা শুরু হবে। ইতিমধ্যে ধানের শীষ গজাতে শুরু করেছে। তবে আবহাওয়া অফিস যে সময়ে ঝড় ও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছে তখন বিস্তীর্ণ মাঠে ধান থাকবে। এসময় ঝড় ও শিলাবৃষ্টি না হয়ে যদি শুধুমাত্র বৃষ্টিপাত হয় তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে সেই সময়ে কী পরিস্থিতি হবে তা ভেবে উঠতে পারছিনা।
শুধু কৃষি বিভাগ নয়, ঝড় ও বৃষ্টির শঙ্কায় কৃষকদের কপালেও ভাঁজ পড়েছে। জেলার বাঘারপাড়ার রায়পুর গ্রামের কৃষক শামসুর রহমান বলেন, চড়া দামে সেচ, শ্রম খরচ ও সার কীটনাশক দিয়ে ধান চাষ করেছি। ফলনও ভালো মনে হচ্ছে। তবে সামনে ঝড়-বৃষ্টির যে খবর পাচ্ছি, তাতে খুব চিন্তায় আছি। তিনি বলেন, এবছর যদি নির্বিঘেœ ঘরে ধান তুলতে না পারি তাহলে কীভাবে সংসার চালাবো তা বুঝে উঠতে পারছিনা। একই কথা বলেন, বন্দবিলা ইউনিয়নের প্রেমচারা গ্রামের শামীম আকতার। তিনি বলেন, মাঠে ধানের ক্ষেতে গেলে কলিজা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। এই ধান যদি ঝড় বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আমাদের পথে বসতে হবে। তিনি বলেন, এমনিতে সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলে এলাকায় বিদ্যুৎ থাকে না। সেচ কাজ নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। আল্লাহ জানে সামনে আমাদের কপালে কী আছে।