শোক ও গৌরবের ভাষার মাস

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২। ভাষা আন্দোলনকে সফল রূপ দিতে আন্দোলনকারী নেতারা বায়ান্নোর এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর রেস্তোঁরায় বসে স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা তৈরি করছিলেন। নতুন করে সভা-সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে দাবি আদায়ের পরিকল্পনা আঁটছিলেন। এমন সময় মাইকযোগে তাদের কানে আসে পূর্ববঙ্গ সরকারের তরফ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সরকারের এ ঘোষণায় সকল প্রকার জনসভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণার সাথে সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রনেতারা পৃথকভাবে সভা করে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন। সন্ধ্যার পর নবাবপুর আওয়ামী মুসলিম লীগ অফিসে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভা বসে। অলি আহাদ, গোলাম মওলা, আব্দুল মতিন, শামসুল আলম, মোহাম্মদ তোয়াহা ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে জোর বক্তব্য রাখেন। কিন্তু সংগ্রাম পরিষদের কয়েকজন নেতা ১৪৪ ধারা ভাঙার বিরোধিতা করলে ভোটাভুটি হয়। ভোট শেষে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় ১৪৪ ধারা ভাঙা হবে না। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে পুনরায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম কমিটির ছাত্রনেতারা। তারা রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ও ঢাকা হলের মাঝখানে এক পুকুরের সিঁড়িতে জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। উদ্দেশ্য, ১৪৪ ধারা ভাঙতে হবে। সভায় হাবিবুর রহমান শেলী, জিল্লুর রহমান, আব্দুল মোমিন, এস এ বারী, গাজীউল হক, এম আর আখতার মুকুলসহ ১১ জন ছাত্রনেতা অংশ নেন এবং ১৪৪ ধারা ভাঙার বিষয়ে পরিকল্পনা করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে আমতলার সভায় ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে সকলের সম্মতি আদায়ের কৌশলও ঠিক করেন এসব ছাত্রনেতারা। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা ও আটক হওয়ার ভয়ের কারণে মধ্য রাতেই কয়েকজন ছাত্রনেতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে পড়েন এবং ১৪৪ ধারা ভাঙার পরিকল্পনায় অগ্রসর হতে থাকেন।