চৌগাছায় কপোতাক্ষ পাড়ের অবৈধ স্থাপনা রেখেই চলছে

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদ খনন এখন দৃশ্যমান হয়েছে। তবে এখনও কপোতাক্ষের জমি দখলে রেখে তৈরি করা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়ায় চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। সূত্র জানায়, উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুর ব্রিজসংলগ্ন হতে যশোরের মনিরামপুর উপজেলা পর্যন্ত প্রায় ৭৯ কিলোমিটার নদ খনন হচ্ছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা। নির্ধারিত পরিমাপে নদকে গভীর করার পাশাপাশি খননকৃত নদের আড় হবে ৩০ থেকে ৩৫ মিটার। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের শেষ সময়ে এসে অর্থাৎ জুন মাসে পৌর এলাকার হুদাপাড়া মহল্লার নিচ হতে নদ খনন কাজ শুরু হয়। এরপর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় খনন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। একাধিক প্রজেক্টের মাধ্যমে দুই বছরের মধ্যে খননকার্য শেষ করার কথা থাকলেও প্রায় সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি কাজ। তবে চলতি মৌসুমে দ্রুতগতিতে চলছে নদ খননের কাজ, অনেক স্থানই বর্তমানে দৃশ্যমান। নদ খনন দৃশ্যমান হওয়ায় কপোতাক্ষ পাড়ের জেলেরা উচ্ছ্বসিত, তারা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। আবারও ডিঙি নৌকা নিয়ে নামবে কপোতাক্ষে, শিকার করবে মাছ। চৌগাছা পৌর এলাকার পাঁচনামনা গ্রামের অনিল হালদারের ছেলে বিমল হালদার (৪৫) বলেন, জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই কপোতাক্ষে মাছ শিকার করি। গত কয়েক বছর নদে পানি থাকে না, বেশ কষ্টে ছিলাম। এবার নদ খনন হচ্ছে, থাকবে পানি, মাছও পাওয়া যাবে তাই বেজায় খুশি লাগছে। হালদারপাড়ার জেলে পল্লীর বাসিন্দা মৃত্যুন হালদার, নিমাই হালদার, রবি হালদারসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, কপোতাক্ষ খননে আনন্দিত কেননা নদে পানি থাকবে, বৃদ্ধি পাবে দেশি প্রজাতির মাছ। সেই মাছ ধরে আবারও আগের মত দিন পার করতে পারবো। মাছ ধরা পেশা প্রায় ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হওয়া নদ পাড়ের গ্রাম হাজরাখানার শ্যাম বাবু, আনন্দ কুমার, হারান হালদার জানান, এক সময় কপোতাক্ষ আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল। কিন্তু বছরের পর বছর নদে পানি না থাকায় অনেকে পেশা ছেড়ে হয়েছে কৃষক বা দিনমজুর। তবে এখন নদ খনন দেখে আবারও হারানো দিন ফিরে পাওয়ার স্বপ্নে সকলেই বিভোর। নদ পাড়ের আরেক গ্রাম মাশিলা, এই গ্রামের তিতু হালদার, কানাই হালদার, সূর্য হালদার ও দিঘলসিংহ গ্রামের অর্জুন হালদার বলেন, বাবা দাদাদের রেখে যাওয়া পেশাকে আগলে রেখেছিলাম। তবে নদে পানি না থাকায় এখন কেউ চালায় ভ্যান, কেউবা হয়েছে ব্যবসায়ী। নদ খনন দেখে খুবই ভাল লাগছে, খনন শেষ হলে নদে পানি থাকবে ওই পানিতে অকেজো হয়ে পড়া জালদড়া নিয়ে আবারও নেমে পড়বো, অনেক ভালো লাগার একটি বিষয়। জেলে পল্লীর গৃহবধূরাও কপোতাক্ষ খনন দৃশ্যমান হওয়ায় তারাও হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এক সময়ে কচ্ছপ গতিতে চলা খনন এখন চলছে দ্রুতগতিতে। আজও বহু স্থানে নদের জমিতে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদে কর্তৃপক্ষ কোনই উদ্যোগ নেইনি অভিযোগ স্থানীয়দের। এর ফলে সাধারণ মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে চরম ক্ষোভ। চৌগাছা বাজারসংলগ্ন ব্রিজের পাশে বর্তমানে চলছে খনন কাজ। ব্রিজের ওপর উৎসুক জনতা খনন কাজ দেখতে ভিড় করছেন প্রতি দিনই। উৎসুক মানুষেরা বলেন, দখল হয়ে যাওয়া নদের জমি দ্রুত উদ্ধার করে পরিপূর্ণভাবে খনন কাজ সমাপ্ত করলে কিছুটা হলেও কপোতাক্ষ তার হারানো যৌবন আবার ফিরে পাবে