চৌগাছায় ব্যাপকহারে বাড়ছে ড্রাগন চাষ জমি কমে প্রভাব পড়ছে সবজি উৎপাদনে

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে ড্রাগনের চাষ। এর ফলে সবজি চাষের জমি কমতে শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চৌগাছায় মোট ২২ হাজার ৫০০ হেক্টর হচ্ছে ফসলি জমি। যার মধ্যে ৩ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে হরেক রকমের সবজিসহ নানা ধরনের ফসলের চাষ হয়। কিন্তু গত ৩/৪ বছরের ব্যবধানে প্রায় আড়াই শ হেক্টর জমি ড্রাগন দখল করে নিয়েছে। আড়াই শ হেক্টর জমি কমে যাওয়ায় সবজি উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ।
জানা গেছে, ৫ বছর আগে বেশ কিছু ব্যক্তি শখের বশে বিদেশি ফল ড্রাগনের চাষ শুরু করেন। প্রথম দিকে বাড়ির আঙিনা কিংবা পতিত জমিতে এই ফলের চাষ শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা ফসলি জমিতে পরিকল্পিকত ভাবে চাষ শুরু করা হয়। দিন যত যায় বাড়তে থাকে ড্রাগন চাষের পরিধি। বর্তমানে উপজেলাতে ২৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে ড্রাগনের। একবার ড্রাগন রোপণ করলে তা কমপক্ষে ১০/১২ বছর ধরে ফল দিতে থাকে। এই দীর্ঘ সময়ে একটি ফসলি জমি ড্রাগন দখল করে নেওয়ায় কমতে শুরু করেছে অন্যান্য ফসল উৎপাদন। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। এখন শীত মৌসুম, এই মৌসুমে সবজি উৎপাদনের রাজধানী বলে খ্যাত চৌগাছায় যে কোনো সবজি ৫০ টাকার নিচে কেজিতে কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। যার অন্যতম কারণ হচ্ছে উৎপাদন কমে যাওয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বহু বেকার যুবক, কিংবা ব্যবসায়ী ও প্রবাসী ব্যক্তিরা বেশি করে ড্রাগন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এক একজন ব্যক্তি ২ বিঘা থেকে শুরু করে ১০/১৫ বিঘা পর্যন্ত ড্রাগনের চাষ করেছেন। যে সব জমিতে ড্রাগন চাষ করা হয়েছে তার বেশির ভাগ জমিতে বিগত বছরগুলোতে বেগুন, কাঁচা মরিচ, উচ্ছে, পটল, মুলা, শিম, টমেটোসহ হরেক রকমের সবজি চাষ হতো। কিন্তু এখন সেখানে চাষ করা হয়েছে ড্রাগন।
ড্রাগন চাষি সেলিম হোসেন, রুহুল আমিন, হোসেন আলী, রাজু আহমেদ বলেন, ড্রাগন একটি দীর্ঘ মেয়াদি ফল চাষ। এটি রোপণের সময় যে টাকা ব্যয় হয় পরে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বছর ঘুরতে না ঘুরতে রোজগার শুরু হয়, সে কারণে মানুষ ড্রাগন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তবে ড্রাগন চাষে ফসলি জমি যে কমে যাচ্ছে এবং সবজি উৎপাদন কমে গেছে এটি তারা স্বীকার করেন। ড্রাগন চাষ কমানো উচিত বলেও অনেকে মন্তব্য করেন।
চৌগাছা বাজারের সবজির আড়তদার কবির হোসেন, সামছুল আলম, আইনাল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আশঙ্কাজনকভাবে সবজি আমদানি কমে গেছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সবজি চাষ কমে গেছে, ওই সব জমিতে চাষ হচ্ছে ড্রাগনের। বাজারে সবজি কিনতে আসা মনিরুল ইসলাম, সেলিম রেজা বলেন, এখন শীত মৌসুম, এই সময়ে এক কেজি আলু কিনেছি ১০ থেকে ১৫ টাকায় অথচ এখন কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকায়, উৎপাদন কমে যাওয়া মূল কারণ বলে তারা মনে করছেন। খুচরা সবজি বিক্রেতা মো. ডাবলু, আরিফ হোসেন বলেন, বাজারে সবজির আমদানি অনেক কম, যার কারণে দাম বেশি। আমরা যে দামে ক্রয় করছি কিছু বেশি দরে বিক্রি করছি কিছুই করার নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসেন বলেন, ড্রাগন চাষ বেড়ে যাওয়া সবজির জমি কমতে শুরু করেছে ঠিকই কিন্তু বিকল্প ভাবনায় সবজি চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।