শহীদ আসাদ দিবসে যশোরে আলোচনা সভা

0

৫৬তম শহীদ আসাদ দিবসে জাতীয় ছাত্রদল যশোর জেলা কমিটির উদ্যোগে শনিবার (২০ জানুয়ারি) জেলা কার্যালয়ে বেলা ১১টায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আহ্বায়ক বিশ্বজিৎ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জেলা সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ বিএম শামীমুল হক, জেলা সহ-সাধারণ সম্পাদক কামরুল হক লিকু, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম তৌহিদুল রহমান বাদল, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সভাপতি ফরিদা পারভীন, জাতীয় ছাত্রদলের জেলা যুগ্ম-আহ্বায়ক নাইস হাসান কাসেম প্রমুখ।
সভায় আলোচকগণ বলেন, শহীদ আসাদের রাজনৈতিক চেতনার বাস্তবায়ন ছাড়া শ্রমিক-কৃষক-জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আজ তাই সা¤্রাজ্যবাদ ও তার দালাল বিরোধী গণতান্ত্রিক শক্তির দায়িত্ব হচ্ছে নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্তবাদী স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা। এছাড়া নেতৃবৃন্দ বলেন স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অক্ষুণœ রেখে শ্রমিক, কৃষক, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারসহ বাক, ব্যক্তি মতপ্রকাশের অধিকার সম্ভব নয়। একইসাথে নেতৃবৃন্দ সা¤্রাজ্যবাদী বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে আগ্রাসী যুদ্ধে সম্পৃক্ত করার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী গণআন্দোলনকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে গ্রাম-গঞ্জে হরতাল আহ্বান করেন। তখন ঢাকার মনোহরদী-হাতিরদিয়া-শিবপুরের হাট-বাজার হরতাল সফল করার জন্য কৃষকদের সংগঠিত করার প্রক্রিয়ায় প্রগতিশীল রাজনৈতিক মহলে ছাত্রনেতা আসাদের নাম ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এই হরতাল সফল করতে গিয়ে আসাদ ও তাঁর সহযোদ্ধা লড়াকু কৃষকদের যথেষ্ঠ মূল্য দিতে হয়েছে। ৬৮-র ডিসেম্বরে মনোহরদী-হাতিরদিয়া ও শিবপুরে হরতালকে কেন্দ্র করে আইয়ুব-মোনেমের এন.এস.এফ-এর গু-াবাহিনীর সঙ্গে আসাদের নেতৃত্বে কৃষক জনতার তীব্র সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পুলিশ মারমুখী কৃষক জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে তিনজন কৃষক ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এবং আসাদসহ অসংখ্য কৃষক গুলিবিদ্ধ হন। হরতালের পরপরই আসাদের নামে হুলিয়া জারি করা হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আসাদ ছাত্র ও কৃষকদের মধ্যে কাজ করে গেছেন।
২০ জানুয়ারি বটতলায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ ছাত্র-ছাত্রীদের জঙ্গি মিছিল রড, লাঠি ইত্যাদি দিয়ে কলাভবন থেকে রাজপথে নেমে আসে। পুলিশ মিছিলকে বাধা দিতে সাহস পায় না। ব্রিটিশ কাউন্সিল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়িয়ে মিছিলের প্রথম অংশ যে মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ তোফায়েল আহমেদ, জামাল হায়দার প্রমুখ। তাঁরা মিছিলের প্রথম ভাগকে নিয়ে নাজিমুদ্দিন রোড হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে সমবেত হন এবং ঘোষণা দেন যে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি পরে ঘোষণা দেওয়া হবে। তারা তখন জানতেন না মিছিলের মধ্য ও শেষভাগের পরিণতি কি হয়েছে। মিছিলের প্রথম অংশ দ্রুতগতিতে এগোনোর ফলে পরের অংশ একটু পিছিয়ে পড়ে। এই সুযোগে হঠাৎ করে পুলিশ মিছিলের মাঝখানে লাঠিচার্জ করে ও টিয়ার গ্যাস ছোঁড়ে। এই অতর্কিত আক্রমণে মুহূর্তেই মিছিলের ছাত্র-ছাত্রীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একাংশ ঢাকা হলের (বর্তমান শহীদুল্লাহ হল) মধ্যে, একভাগ নামিমুদ্দিন রোডের দিকে এবং অপর অংশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে বাবুপুরা পুলিশ ফাঁড়ি থেকে আসা পুলিশদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। প্রায় এক থেকে দুঘন্টা পুলিশ ও ছাত্রজনতার খ-যুদ্ধ চলার পর হঠাৎ একটি মাত্র গুলির আওয়াজ শোনা যায়। এর পরপরই পুলিশবাহিনীকে আকস্মিকভাবে পশ্চাদপসরণ করতে দেখা গেল। পুলিশ চলে গেলে তৎকালীন ঢাকা হল থেকে বেরিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে যায় সবাই। পথের মধ্যে আসাদ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। আসাদের রক্তাক্ত প্রাণহীন দেহকে ঘিরে অশ্রুসজল চোখে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর সহকর্মীরা। তাঁর মত বিপ্লব-আকাক্সক্ষী লড়াকু ছাত্রনেতার এই অমূল্য আত্মদান ঊনসত্তরের গণআন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত করে এবং আইয়ুব সরকারের পতন ঘটায়। বিজ্ঞপ্তি