ঝিকরগাছায় দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ

0

তরিকুল ইসলাম, ঝিকরগাছা (যশোর)॥ সারা দেশের মত ঝিকরগাছায়ও গত কয়েকদিনের তীব্র শীত ও ঘনকুয়াশার মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে শুরু হয়েছে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। দিনভর এই বৃষ্টিতে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষেরা। এদিন বৃষ্টি উপেক্ষা করে কুলিমুজুর, ভ্যানচালক, ইজিবাইক, সিএনজি চালক ও নিজেদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে কৃষকসহ নিম্নআয়ের মানুষদের বাজারে আসতে দেখা গেছে। বিকেলে বৃষ্টির তীব্রতা বেড়ে গেলে অধিকাংশ ভ্যান-রিকশা চালক বাড়ি চলে যায়।
সরেজমিনে ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ড, উপজেলামোড়, থানামোড়, রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় ঘুরে অধিকাংশ স্থানে মানুষের উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া ভ্যান-রিকশা, ইজিবাইক, সিএনজির সংখ্যাও কম ছিল। এদিন তরকারি, মাছ, মাংস, ওষুধ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান অন্যদিনের চেয়ে কম খোলা ছিল। এদিন নিজেদের উৎপাদিত সবজি বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা কৃষকদের বেশি বিপাকে পড়তে দেখা গেছে। ভ্রাম্যমাণ এই কৃষকেরা প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার নিজেদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে এসে খোলা জায়গায় বসে বিক্রি করেন। বৃহস্পতিবার দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ও তীব্র শীতে তারা খুব কষ্টে দিন পার করেছে। জানতে চাইলে ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের মোহিনীকাঠি গ্রামের কৃষক ইসমাইল সরদার (৭৫) ও পার্শ্ববর্তী মনিরামপুর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের কৃষক আরশাদ আলী সরদার (৭০) বলেন, তারা নিজেদের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি ও তরকারি প্রতি রোববার ও বৃহস্পতিবার হাটবারে ঝিকরগাছা বাজারের কাউন্সিল রোর্ডে খোলাস্থানে বিক্রি করে সংসার চালান। এদিন বৃষ্টির মধ্যে কেন এসেছেন এমন পশ্নের জবাবে তারা বলেন, এমনিতেই সংসার চলে না। তারপর যদি বাজারে না আসি তাহলে খাবো কী। তারা পেটের দায়ে বৃষ্টিতে ভিজে তরকারি বিক্রি করছেন বলেও জানান। সবজি বিক্রেতা কৃষক শুকুর আলী (৬০) বলেন, তার ৫টি মেয়ে। কোন ছেলে সন্তান নেই। বাজারে না আসলে তার ৬জনের সংসারটি অচল হয়ে যাবে।
এদিন ঝিকরগাছা বাজারে পাইকারি ডিম বিক্রেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন, তিনি প্রতিদিন দুপুরের মধ্যে ঝিকরগাছা বাজারে ১২০ খাঁচি করে ডিম বিক্রি করলেও এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে বেশ কয়েক খাঁচি ডিম ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন বলেও জানান তিনি। কাউন্সিল রোডের রাস্তার পাশের খোলা যায়গার চা দোকানি এখলাস হোসেন বলেন, তার ৩জনের সংসারটি চায়ের দোকানে কোনরকমে চলে। শীত ও বৃষ্টিতে দোকানটি বন্ধ রাখলে সংসার কীভাবে চলবে। ভ্যানচালক নজরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তিনি বাজারে ছিলেন। কিন্তু দিনভর বৃষ্টি ও তীব্র শীতে বাজারে ভাড়া না হওয়ায় দুপুরে বাড়ি ফিরে গেছেন। জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত উপজেলার গদখালী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আইয়ুব হোসেন বলেন, চলমান কুয়াশা, তীব্র শীত ও অতিবৃষ্টিতে ধানের বীজতলার কিছুটা ক্ষতি হবে। এছাড়া সকল প্রকার সবজি ও ফুলের রোগবালাই বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের খরচও বাড়বে।