একদিনের ব্যবধানে যশোরে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি নামল, শীতে পর্যুদস্ত জনজীবন

0

আকরামুজ্জামান ॥ এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রার পারদ ৪ ডিগ্রি নেমেছে ! ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে নেমে  বুধবার ১০ দশমিক ৮ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। এমন অবস্থা বহু দিন দেখেনি যশোরের মানুষ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তাপমাত্রা দুই থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হলেও তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া দফতর থেকে বলা হচ্ছে, এটি খুবই অস্বাভাবিক অবস্থা। তবে স্বস্তির কথা হলো, দুয়েক দিনের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে।
এ বছর জানুয়ারির শুরু থেকেই তাপমাত্রা কমতে থাকে। যা ঋতুর ধারাবাহিকতায় স্বাভাবিক বলে অনেকেই মনে করছেন। কারণ গত কয়েক মৌসুমে সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই শীত জেঁকে বসতে শুরু করে। তবে এবার অনেকটা আগেভাগেই দেশের দক্ষিণের যশোর জেলাসহ আশপাশের জেলাগুলোতে শীতের দাপট বেড়েছে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, সাধারণত শীত মৌসুমে দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি তাপমাত্রার পারদ ওঠানামা করে। কিন্তু এবার অনেকটা ভিন্ন। ১৪ জানুয়ারি রোববার জেলার সর্ব নি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর পরদিন সোমবার সেটি মাত্র ২ দশমিক কমে রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এর পরদিন ১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার সেটি অবাক করে এক লাফে বেড়ে দাড়ায় ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর একদিন পর গতকাল বুধবার আবার ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমে রেকর্ড হয় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রার পারদের অস্বাভাবিক ওঠানামা অনেকটা অস্বাভাবিক বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে।
যশোর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি নিয়ন্ত্রিত আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, তাপমাত্রা যাই হোক না কেনো শীত অনুভূত হচ্ছে অনেক বেশি। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা বলেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস অনেকটা স্বাভাবিক তাপমাত্রা। তবে দিনের পুরোটা সময় সূর্যের দেখা না পাওয়া ও উত্তরে হিমেল হাওয়ার কারণে অসহণীয় শীত অনুভূত হচ্ছে। যা গত কয়েক বছরে এমনটা হয়নি । গত কয়েক বছরে যশোরাঞ্চলে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করলেও তখনকার সময়ে এমন শীত অনুভূত হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল থেকেই আকাশে মেঘ জমতে শুরু করেছে। আকাশে পুরো মেঘ জমার পর আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত হয়ে তাপমাত্রা আরও কমে যাবে। তখন তাপমাত্রা ১০ এর নিচে নেমে আসতে পারে।
এদিকে, বেশ কয়েক বছর আগে শীত মৌসুমে বেশিরভাগ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতো হয় সিলেটের শ্রীমঙ্গল বা উত্তরবঙ্গের কোনো জেলায়। আবার গ্রীষ্ম মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতো মূলত উত্তরবঙ্গের কোনো জেলায়। কিন্তু গত কয়েকবছর ধরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। এখন শীত মৌসুমে বেশিরভাগ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে যশোর বা চুয়াডাঙ্গায়। আবহাওয়া অফিস বলছে, মাসে গড়ে ৭ দিনই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে যশোরে। গ্রীষ্মেও ঠিক একইভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশিদিন রেকর্ড হয় যশোরে। বস্তুত, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আবহাওয়া যে ক্রমশ চরমভাবাপন্ন হয়ে পড়ছে এটি তারই নজির হতে পারে। এটি আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ক্রমে মরুময় হয়ে ওঠার প্রবণতা কিনা তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সচেতন মহলে।
এ বিষয়ে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ও বর্তমান চট্টগ্রাম কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. ছোলজার রহমান বলেন, হিমালয় পর্বত থেকে যে বায়ু প্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে এটি অনেকটা বিগত কয়েক বছরের চেয়ে বেশি। যেকারণে তাপমাত্রা বেশি থাকলেও অনুভূত হচ্ছে অসহণীয়। তিনি বলেন, সাধারণত শীত মৌসুমে হিমালয় থেকে যে বায়ূপ্রবাহ প্রবাহিত হয় তা স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলে তার প্রতিফলন ঘটে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়সহ আশপাশের এলাকায়। আর বায়ুপ্রবাহ যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় তখন তা দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে এবং মুহূর্তের মধ্যে তাপমাত্রার পারদ অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করতে থাকে। যশোরে এবছর বায়ুপ্রবাহ অনেকটা বেশি হওয়ায় তাপমাত্রা যাই হোক না কেনো শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি। এ অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ে বলে তিনি জানান।
এদিকে, কনকনে শীতে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনজীবন। শীতে জবুথবু মানুষ সকাল ১০টার আগে ঘর থেকে বেরুতেই পারছে না। সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরতে হচ্ছে আশ্রয়ে। তবে শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। গরম পোশাক থাক আর না থাক, কাকডাকা ভোরেই যথারীতি কাজের সন্ধানে বেরুতে হচ্ছে তাদের।
ঠা-ার কারণে যশোরের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে অন্যান্য দিনের মতো ক্রেতাদের ভিড়ে ঠাঁসা ছিলো গতকাল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নানা বয়সী লোক দোকানগুলোতে এসে ভিড় জমান। তারা সাধ্যমত গরম কাপড় কিনে নিয়ে যান। তবে ক্রেতারা বলেন, শীতকে পুঁজি করে বিক্রেতারা প্রতিটি কাপড়ের দাম লাগামছাড়া নিচ্ছেন।
শহরের কালেক্টরেট মসজিদ মার্কেটে কথা হয় জামাল হোসেন নামে এক ক্রেতার সাথে। তিনি জেলার কেশবপুর থেকে এসেছেন বাজারটিতে শীতবস্ত্র কিনতে। তিনি বলেন, আগে যে কাপড়া ২শ থেকে ৩শ টাকা বিক্রি হয়েছে। এখন তা ৪শ থেকে ৫শ টাকা।