যশোরে এক বছরে শীতের পোশাকের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ কলেজশিক্ষার্থী রেহেনা আক্তার রোববার যশোর শহরের জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে এসেছিলেন ছোট ভাইয়ের জন্যে জ্যাকেট কিনতে। পুরাতন একটি জ্যাকেটের মূল্য ১২শ টাকা শুনে তিনি চমকে ওঠেন। কেবল জ্যাকেট নয়, প্রতিটি শীতবস্ত্র গত বারের তুলনায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে যশোর শহরের বিভিন্ন মার্কেটে। ব্যবসায়ীরাও দাম বৃদ্ধির কথা স্বীকার করছেন। এজন্যে তারা ডলারের মূল্য বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন।
পৌষের শেষে হঠাৎ শীত জেঁকে বসায়, গরম কাপড়ের বেচাকেনা বেড়েছে। কনকনে ঠাণ্ডা থেকে একটু উষ্ণতা পেতে উচ্চবিত্তরা ছুটছেন অভিজাত মার্কেটে। মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের ভরসা জেলা পরিষদের সুপার মার্কেট কিংবা অন্য কোনো পুরাতন কাপড়ের শীতবস্ত্রের দোকানে। কেবল যশোর শহর নয় জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি বছরের মতো এবারও এখানে গরম কাপড় কিনতে আসছেন মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন বিত্তরা ।
গত রোববার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়,মানভেদে একটি জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৮শ থেকে ১২শ টাকায়। একটি হুডি বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ১ হাজার টাকায়। একটি সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে ১ হাজার টাকার ওপরে। গেঞ্জি বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে ৮শ টাকায়। মানভেদে শিশুদের শীতের পোশাক বিক্রি হচ্ছে ৪শ থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। এমনিভাবে প্রতিটি গরম কাপড় বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে।
ব্যবসায়ী শেখ স্বপন জানান, শীত মৌসুমের শুরুতে কোরিয়া ,জাপান ও তাইওয়ান থেকে পুরাতন কাপড় আমদানি করেন ।  চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে সড়ক পথে পণ্য চলে তার আসে দোকানে। গত বছরের ১৭ হাজার টাকার এক বেল কোরিয়ান জ্যাকেট কিনতে হয়েছে ২২ থেকে ২৭ হাজার টাকায়। আট হাজার টাকার এক বেল তাইওয়ানের জ্যাকেট কিনতে হয়েছে ১৪ হাজার টাকায়। সাত হাজার টাকার তাইওয়ানের এক বেল সোয়েটার কিনতে হয়েছে ১১ হাজার টাকায়। কোরিয়ান ও জাপানের ৬ হাজার টাকার এক বেল সোয়েটার কিনতে হয়েছে ১১ হাজার টাকায়। তিনি বলেন, ডলারের দাম বাড়ার কারণে প্রতিটি বেলের দাম বেড়েছে। সেই সাথে গতবাবের তুলনায় এবার পণ্য পরিবহন ভাড়াও অনেক বেড়েছে। বেলপ্রতি পরিবহন খরচ বেড়েছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা।
শেখ স্বপন বেশি দামে পণ্য বিক্রি করার কথা স্বীকার করে বলেন, এক সময় নতুন কাপড়ের দোকানে শীতবস্ত্রের দাম বেশি ছিল, আর এখন পুরতান দোকানে দাম বেশি।
তবে ক্রেতারা বলছেন, ভিন্ন কথা । তাদের মতে, ডলারের দাম বাড়াকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি দামে বিক্রি করছেন। রেহেনা আক্তার নামের ওই ক্রেতা বলেন, এখানকার ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের চাহিদা বুঝেই দাম হাঁকাচ্ছেন। তাছাড়া এই মুহূর্তে শীত জেঁকে বসায় তারা দামটা বেশি হাকাচ্ছেন। ডলারের দাম বেড়েছে একথা সত্য। এটিকে পুঁজি করে তারা ফায়দা লুটছেন।
স্বামী মেহেদী হাসানের সাথে পোশাক কিনতে আসা রোজিনা আক্তার বলেন, বাচ্চাদের পোশাক কিনতে এসেছি। আমার ৬ বছরের বাচ্চার একটি জ্যাকেটের দাম চাইছে ৮শ টাকা। এই দাম শুনে কেনার কথা ভুলে যাচ্ছি। তিনি বলেন, এখানে ব্যবসায়ীরা মানভেদে পণ্যের যে দাম হাঁকাচ্ছেন, তাতে মনে হয় নতুন কিংবা পুরতান পণ্য দামের খুব বেশি পার্থক্য নেই। ব্যবসায়ীরা আমাদের মত সাধারণ ক্রেতাদের জিম্মি করছেন। যে কারণে বাধ্য হয়ে আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
অপর ব্যবসায়ী চাঁন মিয়াও দাম বাড়ার কথা অকপটে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে শীতের প্রকোপ না থাকায় বেচাকেনা সেভাবে জমেনি। তবে হঠাৎ ঠশীত বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি বেড়েছে। দাম বেশি হওয়ার কারণে ক্রেতাদের সাথে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে।