ভোটার অনুপস্থিতি, কেন্দ্র দখল, বর্জন ও সহিংসতার মধ্যে যশোরে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভোটারের নজিরবিহীন অনুপস্থিতি, কেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে নৌকার পক্ষে ভোট নেওয়া, নৌকা প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলের অভিযোগে দুই প্রার্থীর ভোট বর্জনসহ ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে যশোরের ৬টি আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
ভোট শুরুর আগে বোমা হামলায় একজন আনসার সদস্যসহ নৌকার সমর্থকদের হাতে একই দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বহু কর্মী সমর্থক আহত হয়েছেন। বেলা ২ টা পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরে অধিকাংশ ফাঁকা দেখা গেছে। ১০ থেকে ১৫ শতাংশের বেশি ভোট কাস্টিংয়ের কথা কোনো প্রিজাইডিং অফিসারও জানাতে পারেননি। যারা নির্বাচনী সহিংসতায় আহত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থক। ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণকালে কোনো কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর বাইরে অন্য দলের কোনো প্রার্থীর এজেন্টকে পাওয়া যায়নি। অনেক কেন্দ্র থেকেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়। যশোর শহরের শতদল কেন্দ্রের এজেন্ট জাকির হোসেন ও মিনাকে বের করে দেওয়া হয়। মিনা তার পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ করে বলেন, নৌকার পক্ষে ভোট নিয়ে টাকা দেওয়া হচ্ছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যশোর শহরের লোন অফিস পাড়ায় সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন ও বারান্দীপাড়ায় আমিনিয়া আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটার শূন্য। অবশ্য এসব কেন্দ্রের বাইরে বেশ জটলা দেখা যায় উৎসুক জনতার। এই তিন কেন্দ্রে নৌকা মার্কার নির্বাচনী অফিস ছাড়া আর অন্য কোনো প্রার্থীর অফিস দেখা যায়নি। কোনো কোনো ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচনের প্রচার মাইকে ঈগল মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বানে কান ঝালাপালা হলেও নির্বাচনের মাঠে তাদের কোনো অফিস বা সমর্থককে দেখা যায়নি।
যশোর-৫ মনিরামপুর আসনে সকাল ৮টায় ভোট শুরুর পরপরই খেদাপাড়া ইউনিয়নের হেলাঞ্চী কৃষ্ণবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে দুজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে মনিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আহত দুজনই স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম ইয়াকুব আলীর ঈগল প্রতীকের কর্মী।
গুরুতর আহত সাধন কুমার বিশ্বাস বলেন, তিনি খেদাপাড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার এবং ঈগল প্রতীকের ইউনিয়ন সমন্বয়কারী। অপর আহত মশিয়ার রহমানও ঈগলের কর্মী। নৌকার কর্মীরা চায়নিজ কুড়াল দিয়ে তাদের কুপিয়েছে।
মনিরাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার অনুপ কুমার রায় জানান, দুজনের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের ডান কাঁধ বরাবর কোপ মারা হয়েছে। ক্ষতটি বেশ গভীর। প্রাথমিক চিকিৎসার পর দুজনকেই যশোরে স্থানান্তর করা হয়েছে।
স্বতন্ত্রপ্রার্থী এস এম ইয়াকুব আলী কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সাক্ষাৎ করে কেন্দ্রটিতে নির্বাচন স্থগিত করার দাবি জানান। তিনি অভিযোগ করেন, হেলাঞ্চী কৃষ্ণবাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রতিপক্ষের নৌকার ক্যাডাররা তার ভোটারদের বাড়ি থেকে বের হতে দেননি। যারা বের হন তাদের রাস্তায় আটকে দেয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন অভিযোগ শুনে বলেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুপুরে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার, অনিয়ম ও ৫৫টি কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁডানোর ঘোষণা দেন যশোর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলম লিটন।
অনুরূপভাবে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহুরুল হক জহির। তিনি তার ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দিয়ে এ ঘোষণা দেন।
এছাড়া ঝিকরগাছা, চৌগাছা আসনের বিভিন্ন স্থানে স্বতন্ত্রপ্রার্থীদের সমর্থকদের সাথে নৌকার সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়।
এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবরাউল হাছান মজুমদার জানান, যশোরের ৬ টি আসনে দু একটি ছোট ঘটনা ছাড়া সর্বাত্মক শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোটাররা বিনা বাধায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পেরেছেন।