ভোটার বাড়াতে যশোরে সরকার দলের কৌশল,টার্গেটে সরকারি সুবিধাভোগীরা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের ৬টি আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সাথে আওয়ামী লীগেরই নেতারা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। ৬ টি আসনে বাকি ২২ জন প্রার্থী নামসর্বস্ব কিছু দলের মনোনীত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও কেউই নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারে কাছে নেই। জনগণ তাদের যথেষ্ঠ চেনে না, প্রতীকের নামও জানে না।
দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামাতসহ মূল ধারার অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করায় নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কার্যত একদলীয় হয়ে গেছে। এর বাইরে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মাঝেও নেই কোনো আগ্রহ। এ অবস্থায় ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে নানা কূটকৌশল আটছে ক্ষমতাসীনরা। বিশেষ করে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে টার্গেট নেওয়া হয়েছে সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের। ভোটে যাওয়া নিশ্চিত করতে কোনো কোনো এলাকায় উপকারভোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ভোটকেন্দ্রে না গেলে তাদের কার্ড বাতিল করা হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করছেন ক্ষমতাসীন দলের লোকজন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারিভাবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় অনেকগুলো খাতে ভাতা ও খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বয়স্ক ভাতা, বিধবা বা স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের জন্য ভাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা, শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও সম্মানী ভাতা, ভিজিএফ, ভিজিডি, জিআর, টিআর, ওএমএস, টিসিবি ইত্যাদি। নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব খাতের উপকারভোগীদেরই ভোটকেন্দ্রে টেনে আনার বিষয়ে শেষ সময়ে কাজ চলছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের। অভিযোগ আছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও সরকার ঘনিষ্ঠ কর্মচারীরা একাজে ভূমিকা রাখছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় বিভিন্ন খাতে ভাতাভোগী রয়েছেন- মোট ২ লাখ ৪২ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে বয়স্ক ভাতার কার্ডধারী ১ লাখ ২৫ হাজার ৩১ জন, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডধারীর সংখ্যা ৫৪ হাজার ৮৭৩ জন, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতার কার্ডধারীর সংখ্যা ৫৮ হাজার ৭০০ জন, প্রতিবন্ধী শিক্ষা বৃত্তিপ্রাপ্ত কার্ডধারী পরিবারের সংখ্যা ১ হাজার ৭৯৩টি, সরকারি শিক্ষা উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার, টিসিবি পণ্য সরবরাহ কার্ডধারীর সংখ্যা ৫৬ হাজার ২২১ জন। এ ছাড়াও জেলার ৮টি উপজেলায় কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের তালিকাভুক্ত দিনমজুর নারী পুরুষের সংখ্যা আরও প্রায় ৬৫ হাজার। সব মিলিয়ে যশোর জেলায় সরকারি সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখের মতো। এসব সুবিধাভোগী এখন নির্বাচনে সরকার দলের ও তাদের বিদ্রোহী প্রার্থীরা টার্গেটে রয়েছেন। ভয়ে নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে অনেকেই বলেছেন ভোট চাওয়ার সময় তাদের বলা হচ্ছে ভোটের দিন কেন্দ্রে না গেলে কার্ড বাতিল করা হবে। এছাড়াও দেওয়া হচ্ছে প্রলোভনও।
যশোর শহরতলীর চাঁচড়া এলাকার একজন বয়স্ক ভাতাভোগী মহিলা নাম প্রকাশ না করা শর্তে রোববার জানান, শনিবার রাতে তার বাসায় একদল যুবক নৌকার ভোট চাওয়ার সময় বলে আসেন ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে না গেলে কার্ড বাতিল হয়ে যাবে। পরিবারের সবাইকে নিয়েই ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কথা বলে তারা চলে যান।
একই ধরনের কথা বলেন, শহরের কারবালা রোড এলাকার বসবাসকারী আরেক বৃদ্ধ। তিনি বলেন, বহু ধরাধরি করে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছি। এখন বাড়ি এসে বলে যাচ্ছে ৭ তারিখে পরিবারের ভোটারদের নিয়ে ভোট কেন্দ্রে না গেলে সব বাতিল করা হবে। তাই ভয়ে আছি সামনে কী হয়।
তবে এসব অভিযোগ একেবারেই সত্য নয় বলে দাবি করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। তিনি বলেন, কাউকে কেন্দ্রে আসার জন্য এমন চাপ দেওয়া হচ্ছে না। এটি অপপ্রচার। কে কেন্দ্রে আসবে, না আসবে, সে বিষয়ে আমরা কোনো পক্ষই ভোটারদের চাপ দিচ্ছি না। তিনি বলেন, সরকার অসহায় মানুষদের নানাভাবে সহযোগিতা করে। আবার সেই সহযোগিতা বন্ধ করে দেবে এ ধরনের খবর একেবারেই অপপ্রচার।
এ বিষয়ে জেলা ও ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তা মুহাম্মদ রিজিবুল ইসলাম বলেন, তাদের কাছেও মাঝে মধ্যে এ ধরনের খবর আসে তবে তদন্ত করে কোনো সত্যতা পান না। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষে যেসব সামাজিক সুরক্ষা সহায়তা বা ভাতা দেওয়া হয় তা সবই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। ফলে কেউ সুবিধা নিতে যদি কোনো কৌশল নেয় সেটি কোনো কাজে আসবে না। আর এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।