অবরোধে গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে মুনাফা লুটছে সবজির ব্যাপারীরা

0

 

শিকদার খালিদ ।। সড়ক অবরোধকে ইস্যু করে গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে সবজির দাম কমিয়ে দিয়েছেন ব্যাপারীরা। এতে ক্ষতি হচ্ছে কৃষকের। উৎপাদন খরচ উঠছে না বলে অভিযোগ তাদের। অপরদিকে মুনাফা বেড়েছে পাইকারি ব্যাপারীদের। এ চিত্র দেশে সবজির অন্যতম পাইকার বাজার যশোর সদরের সাতমাইলের। এ বাজার থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সবজি পাঠান ব্যবসায়ীরা।
সবজির রাজধানী খ্যাত যশোরের সাতমাইল বাজারে এখন সবজির সমারোহ। প্রতিদিন বাজারে উঠছে শীতকালীন সবজিসহ অন্যান্য তরকারি। দেশে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের লাগাতার সড়ক অবরোধ চলছে। অবরোধে গাড়ি চলাচল কম তাই ট্রাক ভাড়াও বেশি এই অজুহাত দেখিয়ে কম দামে সবজি কেনেন ব্যাপারীরা। ব্যাপারীদের দাবি তাদের দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে সবজি বহন করতে হচ্ছে।
গতকাল বুধবার সাতমাইল বাজারে পাইকারি প্রতি কেজি মুলো বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে ১৫ টাকা , শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি, পটল ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি, বেগুন ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি। অথচ গত রোববার হাটের দিন সবজি উল্লিখিত দামের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হয়েছে।
বাজারে মুলো ও শিম বিক্রি করতে আসা কৃষক শামসুর রহমান বলেন, বাজারে এখন সবজির আমদানি প্রচুর। তাতে একটু দাম কমে আসে। কিন্তু অবরোধের কারণে গাড়ি ভাড়া দ্বিগুণ দেখিয়ে সবজির দাম আরও কমিয়ে দিয়েছে ব্যাপারীদের সিন্ডিকেট।
কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, আামদের সার-কীটনাশকের দাম কখনও কমে না। কিন্তু নানা অজুহাতে তরকারির দাম কমায় ব্যাপারীরা। এতে আমাদের চাষের খরচ ওঠে না। সবজি পচনশীল তাই আমাদের বিক্রি না করেও উপায় নেই।
কৃষক ওবায়দুল ইসলাম বাবু বলেন, গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে ব্যাপারীরা কৃষকের কাছ থেকে বাজারের স্বাভাবিক দরের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে সবজি কিনছে। তারা এখান থেকে সবজি নিয়ে যে বাজারে বিক্রি করছে সেখানে আবার একই অজুহাতে বেশি দামে বিক্রি করছে। ফলে অবরোধকে ইস্যু করে এই পাইকারী ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি লাভ করছে।
এদিকে অবরোধের কারণে গাড়ির সংখ্যা কম থাকলেও ভাড়া দ্বিগুণ নয় তিন থেকে চার হাজার টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন বাজারে থাকা ট্রাকচালক খায়রুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ সময়ে আমাদের ঝুঁকি নিয়ে যেতে হয় এবং সবজি বাইরের জেলার বাজারে পৌঁছে দিয়ে প্রায় খালি ট্রাক নিয়ে ফিরতে হয়। একারণে ভাড়া কিছুটা বেশি নিই।
অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের কথা অস্বীকার করেন সাতমাইল বাজারের অন্যতম পাইকারী ব্যবসায়ী হানিফ ব্যাপারী। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে আমরা অন্যান্য খরচের সাথে গাড়ি ভাড়ার খরচ ধরি প্রতিকেজিতে তিন টাকা। এখন অবরোধের সময় ধরছি তিন টাকা পঞ্চাশ পয়সা। তিনি বলেন, অবরোধ-হরতাল এলে গাড়ি ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে যায়। ঢাকায় তরকারি পাঠাতে স্বাভাবিক সময়ে ট্রাক ভাড়া লাগে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা, এখন লাগছে ৩০ হাজার টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তরকারি পাঠাতে লাগতো ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, এখন লাগছে ৪০ হাজার টাকা।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের ভাড়া দ্বিগুণ বৃদ্ধির দাবি সঠিক নয় বলে জানান জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল হোসেন।
তিনি বলেন, অবরোধকে ইস্যু হিসেবে নিয়েছেন ব্যাপারীরা। গাড়ি ভাড়া বেশির কথা বলে তারা সবজির দাম কমিয়ে সুযোগ নিচ্ছেন। গাড়ি ভাড়া কিছুটা বেড়েছে। তবে তারা যা বলছে তা নয়।