চৌগাছায় বন্ধের পথে ৯৫ শতাংশ তাঁত

0

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)॥কাঁচামালের মূল্য চড়া তাই লোকসানে তাঁতীরা। ফলে যশোরের চৌগাছায় বন্ধের পথে ৯৯ শতাংশ তাঁত। দেশের তাঁত শিল্পের বড় একটি অংশ চৌগাছা উপজেলায় রং, সুতো, কেমিক্যালসহ তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের কাঁচামাল ও উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁতশিল্পে ব্যাপক ধস নেমেছে। কমে গেছে এ অঞ্চলের কাপড়ের হাটের পাইকারি বাজারে তাঁতবস্ত্রের বেচাকেনা। ফলে তাঁতীরা পুঁজি সংকটে পড়ায় উপজেলায় শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ তাঁত বন্ধের পথে। এতে বিপাকে পড়েছেন তাঁত শ্রমিকরা।

স্থানীয় তাঁত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বাজারের মন্দা রোধ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও তাঁত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার সরকারি ব্যবস্থা না থাকায় তাঁত শ্রমিকেরা চরমভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ফলে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প বিলুপ্তির পথে।
তাঁতীরা জানান, উপজেলার হাজরাখানা, টেঙ্গুরপুর,দেবালয়, চাঁদপাড়া, গুয়াতলী, পুড়াহুদা, ধুলিয়ানি, শাহাজাদপুরসহ পৌর শহরের পূর্ব কারিগরপাড়া ও পশ্চিম কারিগরপাড়া উপজেলার অর্থনৈতিক অবস্থা তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাঁতবস্ত্রের বাজার পড়ে যাওয়ায় চরম অর্থনৈতিক মন্দাভাব চলছে এসব এলাকায়।

অন্যদিকে উপজেলার চৌগাছা ও পুড়াপাড়া, পাশাপোল, ধুলীয়ানী ও সলুয়া কাপড়ের হাট থেকেই শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের বেশকিছু এলাকায় তাঁতের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা ও থ্রি-পিস রফতানি হয়ে থাকে। সে রফতানিও বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে তাঁত ব্যবসায় চরম ধস নেমে এসেছে। এতে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র তাঁত মালিকরা তাঁত ব্যবসায় চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন। ফলে একদিকে বন্ধ হচ্ছে তাঁত। অন্যদিকে তাঁত শ্রমিকেরা ন্যায্য মজুরি না পেয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন।

শুক্রবার সরেজমিনে উপজেলার টেঙ্গুরপুর গ্রামে গেলে চোখে পড়ে সবাই তাঁত বন্ধ করে দিয়েছেন। জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় চলে গেছেন বেশির ভাগ মানুষ। এ সময় টেঙাগুরপুর গ্রামের প্রবীণ তাঁতী আজিজুর রহমান বিশে বলেন, রং, সুতো, কেমিক্যালের মূল্য বৃদ্ধি এবং বৃষ্টিসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে শ্রমিকদের জীবনযাত্রার সার্বিক ব্যয় বৃদ্ধি, ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত, ঋণের কিস্তির ঘানি টানাসহ বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত এ উপজেলার তাঁত শ্রমিকেরা। থ্রি-পিসের বহুল ব্যবহারের কারণে তাঁতের শাড়ির ব্যবহার বহুলাংশে কমে গেছে। ইতোমধ্যেই পুঁজি সংকটে এ এলাকার প্রায় ৯৫ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়া হাজার-হাজার শ্রমিক বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থার মধ্যে দিয়েও কিছু সংখ্যক শ্রমিক যারা তাঁতের কাজ করেছেন তাদের গড় আয় ৩০০/৪০০ টাকা হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে, না খেয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন। এমন পরিস্থিতি নিরসনে তারা দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

চৌগাছা বাজারের কাপুড়িয়াপট্টির কাপড় ব্যাবসায়ী তাঁতী আমিরুল ইসলাম বলেন, রং, সুতো কেমিক্যালের মূল্য বৃদ্ধিতে ও পুঁজি সংকটে পড়ে এ এলাকার বহু তাঁতের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে গেছে। চলতি দুর্গাপূজা উপলক্ষে বর্তমানে কিছু তাঁতবস্ত্র বিক্রি হলেও তা পরিমাণে কম হওয়ায় তাঁতীরা মহাবিপাকে পড়েছেন। যারা ব্যাংকসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়েছেন তারা সেই ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে এ উপজেলার তাঁতশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।